সংস্কার সংস্কার করা ষড়যন্ত্র কিনা, প্রশ্ন তারেকের

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, আমরা খেয়াল করছি কিছু কিছু মানুষ সংস্কার সংস্কারের কথা বলে সব রকমের প্রক্রিয়াকে দীর্ঘায়িত করছে।

তিনি বলেন, ‘আমাদেরকে দেখতে হবে- সংস্কার সংস্কার করা কোনো ষড়যন্ত্র কিনা। যদি সংস্কার সংস্কার করে এ বিষয়টিকে দীর্ঘায়িত করা হয়, তাহলে দেশের সমস্যা বাড়বে।’

বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার সাবের পাইলট স্কুল মাঠে এক অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন।

সোনাগাজীর যুবদল নেতা মোহাম্মদ মাসুদের পরিবারকে তারেক রহমানের পক্ষ থেকে উপহার হিসেবে একটি নতুন বাড়ি প্রদান উপলক্ষে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

তারেক বলেন, ‘যে হারে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, বেকার সমস্যা, শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ছে, আইন-শৃঙ্খলা ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ছে, যদি এসব কিছুকে আবার জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী গড়ে তুলতে হয়— তাহলে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির লাগাম টেনে ধরতে হবে। সেক্ষেত্রে অবশ্য জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘যত দ্রুত আমরা জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে পারব, তত দ্রুত বাংলাদেশকে আমরা সমৃদ্ধির পথে নিয়ে যেতে সক্ষম হব। 

আসুন আমরা প্রতিজ্ঞা করি -- যতক্ষণ পর্যন্ত মাসুদের আত্মার সে মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত করতে না পারব, ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের সংগ্রাম বন্ধ হবে না। আমাদের আন্দোলন চলমান থাকবে যতক্ষণ পর্যন্ত জনগণের শাসন প্রতিষ্ঠিত না হয়।’

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, স্বৈরাচারমুক্ত আন্দোনের শহীদদের আত্মার যদি যথাযোগ্য মর্যাদা দিতে হয়ে, তাহলে আমাদেরকে বাংলাদেশের মানুষের গণতন্ত্রের শাসনকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। যতদিন পর্যন্ত সেই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত না হবে, ততদিন পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।

তারেক সতর্ক করে বলেন, আমাদেরকে খেয়াল রাখতে হবে— আমাদের ভিতরে কিছু কিছু মানুষ এবং নতুন করে কিছু কিছু মানুষ আমাদের ভিতরে ঢুকে বিভ্রান্তি তৈরি করছে।  তারা সমাজে এমন কিছু কাজ করার চেষ্টা করছে, যেখান থেকে সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হতে পারে।  আপনাদের সকলকে এই সকল অনুচরদের বিরুদ্ধে স্বজাগ, সতর্ক থাকতে হবে—- যাতে তারা আমাদের এই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে কোনোভাবে ব্যাঘাত ঘটাতে না পারে।

তিনি বলেন, স্বৈরাচার বাংলাদেশের মাটি থেকে পালিয়ে গিয়েছে। কিন্তু পালিয়ে যাওয়ার আগে সে হত্যাগুলো সংঘটিত হয়েছে। হাজারো মানুষকে হত্যা করেছে, লাখো মানুষকে আহত করেছে, হাজারো মানুষ পঙ্গুত্ব বরণ করেছে।   

তারেক বলেন, এই হত্যাকাণ্ডের, আহত করার জন্য যারা দায়ী— সেই মানুষগুলোর অবশ্যই দেশের আইনে বিচার করতে হবে। এই হত্যার জন্য যারা দায়ী তাদেরকে বিচারের আওতায় আনতে হবে।

তিনি বলেন, এই খুন,গুম, আহতের জন্য দায়ী, তাদের নেত্রী(শেখ হাসিনা) যে ৫ আগস্ট পালিয়ে গেছে, যদি তার বিচার না হয়— তাহলে যারা এই মানুষগুলোকে গুম ও খুন, লাখো মানুষকে পঙ্গু করেছে, তারা ভবিষ্যতে আবারও এসব করতে উৎসাহী হবে। 

তারেক রহমান বলেন, ‘আমাদের দল মত নির্বিশেষে প্রতিটি গণতন্ত্রকামী রাজনৈতিক কর্মীকে, গণতন্ত্রকামী প্রতিটি রাজনৈতিক দলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আজকে আমাদেরকে একটি জায়গায় ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।

তিনি বলেন, ভারতে পালিয়ে যাওয়া স্বৈরাচারকে বিচারের আওতায় আনতে হবে। এই খুন গুম এবং লক্ষ লক্ষ মানুষকে আহত করার জন্য তার বিচার করতে হবে।  তাকে কোনোভাবে ছেড়ে দেওয়া যাবে না। এই হত্যার দায় তার। এই পালিয়ে যাওয়া স্বৈরাচারের বিচার করতে হবে।

অনুষ্ঠানে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি এবং বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য জয়নুল আবেদীন ফারুক প্রমুখ বক্তব্য দেন।

অনুষ্ঠানে নবনির্মিত বাড়ির চাবি মাসুদের স্ত্রীর হাতে হস্তান্তর করা হয়।

২০১৬ সালের ২৫ জুন মাসুদ বিচারবহির্ভুত হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। মাসুদের মৃত্যুর পর থেকে কষ্টে থাকা তার স্ত্রী ও দশম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত মেয়ের সহযোগিতায় এগিয়ে আসেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।