একটি রাজনৈতিক দল নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক করছে : রিজভী

সংগৃহীত ছবি

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, সকল ক্ষমতার উৎস হচ্ছে জনগণ। তাই, জনগণের সেই ক্ষমতা তাদের কাছে ফিরিয়ে দিলে রাজনৈতিক শক্তিই বিকশিত হবে।

তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ‘স্থানীয় নির্বাচন, নাকি সংসদ নির্বাচন কোনটা আগে হবে, এটা যারাই বলছে বা যাদেরকে দিয়ে বলাচ্ছে, তাতে ‘সেন্টারিস্ট’ রাজনীতি (মধ্যপন্থা রাজনীতি) সামনে বিপদে পড়তে যাচ্ছে কিনা, সে ব্যাপারে অশঙ্কা তৈরি হচ্ছে, আমরা তা টের পাচ্ছি।’

রুহুল কবির রিজভী পবিত্র শবে বরাত উপলক্ষে আজ শুক্রবার বাদ আসর রাজধানীর নয়াপল্টনস্থ বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত দোয়া-মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন।

‘ড. ইউনূস আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন একজন ব্যক্তি’-এ কথা উল্লেখ করে বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার আমলে তিনি (ড. ইউনূস) নিজেই নির্যাতিত। তাই, ন্যায় সঙ্গত কাজে তাঁর নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে এবং গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক শক্তি বিকাশিত হবে।’

তিনি উল্লেখ করেন, ‘দেশে বহু রাজনৈতিক দল এবং অনেক রাজনীতিবিদ আছে। গণতান্ত্রিক পন্থায় তারা ক্ষমতায় আসবে এই ব্যবস্থাটাই আগে করতে হবে। যারাই ক্ষমতায় আসুক তাদের মাধ্যমেই দেশ চলবে। স্থানীয় নির্বাচন এবং অন্যান্য আরো সংস্কার হবে।’

রিজভী বলেন, ‘অনেক রক্তের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। ক্ষুদ্র স্বার্থের কারণে, সেই স্বাধীনতা যেন ক্ষুন্ন না হয়-সেই দিকটা আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। যা দেশের জনগণের জন্য কল্যাণকর আমাদেরকে সেটাই করতে হবে। যে লক্ষ্য নিয়ে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল মানুষ কিন্তু তা পায়নি। বারবার দেশের জনগণ অধিকার হারা হয়েছে। দেশ কে চালাবে, কোন রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় আসবে, সেটা তো নির্ধারণ করবে দেশের জনগণ। সেই জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার জন্যই তো এত লড়াই।’

বিএনপির মুখপাত্র বলেন, ‘আমাদের এই অর্জনের মধ্য দিয়ে সত্যিকার অর্থে যে গণতন্ত্র, সেই গণতন্ত্রের জন্য কাজ করতে হবে। একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন হতে হবে, যে নির্বাচনে সবাই অংশ গ্রহণ করবে। আর ভোটাররা নির্ভয়ে ভোট কেন্দ্রে যাবে তাদের পছন্দমত প্রার্থীকে ভোট দিবে। এটা নিশ্চিত করা অন্তর্বর্তী সরকারের একটা বড় কাজ। এই কাজটা তো তাদের দেখাতে হবে।’

একটি রাজনৈতিক দল নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক করছে - এ অভিযোগ উত্থাপন করে বিএনপি নেতা বলেন, ‘স্থানীয় নির্বাচন আগে হতে হবে, তারপরে সংসদ নির্বাচন- কেন? রাজনীতি কে করবে? কে ক্ষমতায় আসবে এটা নির্ধারণ করবে জনগণ। জনগণের সেই ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্যই তো গত ১৭ বছর আন্দোলন সংগ্রাম হয়েছে। জনগণের যে ক্ষমতা শেখ হাসিনা এবং র‌্যাবসহ বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ধ্বংস করেছিল তা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্যই তো এত রক্ত ঝরেছে। জনগণের কাছে সেই ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়ার দায়িত্বই তো অন্তর্বর্তী সরকারের। তাই, স্থানীয় নির্বাচন আগে নাকি সংসদ নির্বাচন আগে এই কথাগুলো আসছে কেন? বিএনপি বলেছে যে, সংসদ নির্বাচন একটি জাতীয় নির্বাচন। এ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে রাজনীতিবিদদের কাছে ক্ষমতা ফিরে আসবে এবং তারাই দেশ পরিচালনা করবে।’

রিজভী বলেন, সকল ক্ষমতার উৎস হচ্ছে জনগণ। জনগণের কাছে সেই ক্ষমতা ফিরিয়ে দিলে রাজনৈতিক শক্তি বিকশিত হবে। সেই রাজনৈতিক শক্তির বিকাশের মধ্য দিয়ে যত নির্বাচন আছে সেগুলো হবে। কিন্তু বিতর্ক নিয়ে এসেছে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে নাকি জাতীয় সংসদ নির্বাচন আগে। মাথা আগে নাকি লেজ আগে, সেটা নির্ধারণ করতে হবে। নির্ধারণ করতে হবে কোনটা চালিকাশক্তি। মাথা ঠিক থাকলে সবকিছু ঠিক থাকে।

ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি বলেন, ‘রাজনীতিবিদদের বিশ্বাস না করা অর্থাৎ বিরাজনীতিকরণ। এই বিরাজনীতিকরণ করতে করতে গণতন্ত্রের আজ ভঙ্গুর অবস্থা। এটার মধ্য দিয়েই ফ্যাসিবাদের উত্থান হয়েছে। রাজনৈতিক শক্তিকে যদি খাটো করেন তাহলে চরমপন্থার উত্থান হতে পারে। চরমপন্থা শুধু বাম দিক দিয়ে আসে না, ডান দিক দিয়েও আসে। এটা মাথায় রাখতে হবে।’

বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জামাল, রংপুর বিভাগের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম, সহ-প্রচার সম্পাদক আসাদুল করিম শাহীন প্রমুখ দোয়া মাহফিলে অংশ গ্রহণ করেন। বিএনপি’র জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য (দপ্তরে সংযুক্ত) মো. আবদুস সাত্তার পাটোয়ারী এ অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।