দেশে দ্রুত স্থিতিশীল রাজনৈতিক কাঠামো জরুরি : তারেক রহমান

ফাইল ছবি

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, দেশে দ্রুত স্থিতিশীল একটি রাজনৈতিক কাঠামো জরুরি।

তিনি বলেন,‘আমি বিশ্বাস করি একটি স্থিতিশীল রাজনৈতিক কাঠামোর মাধ্যমে আমরা জনগণের অধিকার যত দ্রুত জনগণের কাছে ফিরিয়ে দিতে পারব, তত দ্রুত দেশকে ধবংসের দ্বারপ্রান্ত থেকে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হবো।’

তারেক রহমান আজ রোববার বিএনপি’র কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণ বিষয়ক কমিটির সহযোগিতায় ঢাকা বারের জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম আয়োজিত ‘রাষ্ট্র মেরামতের ৩১ দফা ও জনসম্পৃক্ততা’ শীর্ষক প্রশিক্ষণ কর্মশালায় লন্ডন থেকে ভার্চুয়াল প্লাটফর্মে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন।

চারিদিকে এক ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই মুহুর্তে সমাজে বিরাজমান অস্থিরতার মূল কারণ হলো- সরকারের কিছু মানুষের কথাবার্তা। তাদের কথাবার্তায় এক ধরনের ‘কনফিউশন’ তৈরি হচ্ছে। আর রাজনীতিতে ‘কনফিউশন’ তৈরি হলে অস্থিরতা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। এতে করে, দেশের প্রতিটি মানুষ সমস্যার সম্মুখীন হবে। কারণ, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে না পারলে, যে বা যারাই সংস্কারের কথা বলি না কোনো, কোনোটাই বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না।

তারেক রহমান বলেন,‘রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়লে এর প্রভাব পড়বে অর্থনীতিতে, আর অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হলে তার প্রভাব পড়বে সমাজের প্রতিটি সেক্টরে। এতে মানুষের জীবন প্রবাহ দূর্বিসহ হয়ে উঠবে। ফলে অন্তর্বর্তী সরকারসহ আমাদের সবার মূল লক্ষ্য হওয়া উচিৎ নির্বাচনের মাধ্যমে দেশকে দ্রুত একটি স্থিতিশীল অবস্থার কাছাকাছি নিয়ে আসা। দেশের মানুষ যে সিদ্ধান্ত নিতে চায় তার সঙ্গে একমত পোষণ করা এবং রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে তাদেরকে সহযোগিতা করা।’

৩১ দফা প্রসঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, আজ আমরা ৩১ দফার যে আলোচনা এখানে করেছি, তা নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করবে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নকে এবং আকাঙ্ক্ষার আলো দেখাবে পরিবর্তনকামী গণমানুষকে। রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের এই রূপরেখা তৈরি হয়েছে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ১৯ দফা, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ভিশন-২০৩০ এবং  বিএনপি’র জনসম্পৃক্ততা ও রাজনৈতিক অভিজ্ঞতার আলোকে প্রথমে প্রদত্ত ২৭ দফার ওপর ভিত্তি করে, যা পরবর্তীতে যুগপৎ গণতান্ত্রিক আন্দোলনে শরিক সকল রাজনৈতিক দলের ঐকমত্যে ৩১ দফায় পরিণত হয়।

যখন কেউ সাহস করেনি, তখন বিএনপি ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছিল উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন,‘এখন আমরা সংস্কার প্রস্তাবের নামে বিভিন্ন ব্যক্তিকে বিভিন্ন কথা বলতে শুনছি।

ক্ষমতার ভারসাম্যের কথা শুনছি, অনেকে রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তনের কথা বলছেন। অবশ্যই যে যার মত প্রকাশ করতেই পারেন। কিন্তু যখন স্বৈরাচারী শাসক দীর্ঘসময় ধরে রাষ্ট্রক্ষমতা জোর করে দখল করে ছিল তখন রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল প্রতিবাদ প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। রাষ্ট্রের সংস্কারের ৩১ দফা প্রস্তাব উপস্থাপন করেছে। আর আজ যারা সংস্কার প্রস্তাবনা দিয়েছে, তাদের অনেকেই তখন সংস্কারের ধাওে কাছেও ছিলেন না।’

সংস্কারের প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন করতে হলে সবার আগে নির্বাচন প্রয়োজন এ কথা উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, ‘নির্বাচনের মাধ্যমে যাদের জনগণ দায়িত্ব দেবে, সংস্কারের কাজ তারাই শুরু করতে পারবে। তাদের শুরু করতেই হবে। কারণ, যারা নির্বাচিত হয়ে আসবে, তারা জনগণের কাছে ওয়াদা করবে যে তারা সুযোগ পেলে বাস্তবায়ন করবে এই সংস্কার।’

তিনি বলেন, দেশের মানুষ বিএনপি’কে রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ দিলে প্রত্যেকে যে যার অবস্থান থেকে যেই সংস্কারের ওয়াদা জনগণের সামনে দিয়েছেন, প্রত্যেকের অবস্থান থেকে সেই ওয়াদা পূরণের সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন।

‘নির্বাচন হলেই কি সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে এ প্রশ্ন কেউ কেউ তুলছেন’ - এ কথা উল্লেখ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘সাথে সাথে সব সমস্যার সমাধান হবে না, কিন্তু নির্বাচন হলে নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ভোটের মাধ্যমে জনগণের রায়ের মাধ্যমে যে দল বা যে ব্যক্তি বা যারা দেশ পরিচালনার সুযোগ পাবে, তখন সমস্যার যে জট, সমস্যার যে গিট্টু, সেগুলো আস্তে আস্তে খোলা শুরু করবে।’

জনগণের ভোটের মাধ্যমে সরকার গঠন করতে পারলে সেই সরকার জবাবদিহি করতে বাধ্য থাকবে বলে মন্তব্য করেন তারেক রহমান। তিনি বলেন, কারণ, পাঁচ বছর পর আবার জনগণের কাছে যেতে হবে। কাজেই যে প্রতিজ্ঞা জনগণের সামনে করে ক্ষমতায় আসবে, তাদের সেই কাজগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে।

দু’বারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হওয়া যাবে না বিএনপি এমন প্রস্তাব দুই আড়াই বছর আগেই দিয়েছে উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত কমিশনও একই কথা বলছে। তিনি বলেন, বিএনপি উচ্চকক্ষের কথা বলেছে দুই-আড়াই বছর আগে। সংস্কার কমিশন একই কথা বলেছে। অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার প্রস্তাব এবং বিএনপির ৩১ দফার বিষয়ে তিনি বলেন, হতে পারে ১০০ ভাগ মিল নেই, ৮০ ভাগ মিল-তো আছে। মূল যে বিষয়, সেগুলো কিন্তু বিএনপি অনেক আগেই বলেছে।

তিনি বলেন, ‘জনগণের সমর্থন নিয়ে দেশ পরিচালনার সুযোগ পেলে তখনই আমরা প্রতিটি গণতন্ত্রকামী রাজনৈতিক দল ও জনগণের সমষ্টিগত প্রচেষ্ঠায় ৩১ দফা বাস্তবায় করবো।’
 
জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের ঢাকা বার ইউনিটের সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. খোরশেদ আলমের সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক ড. বোরহান উদ্দিন খান ও  বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।

জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের ঢাকা বার ইউনিটের সদস্য সচিব মো. নিহার হোসেন ফারুক এ অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।