দেশকে আর ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেবেন না: মির্জা ফখরুল
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আমাদের অনেক প্রত্যাশা ছিল, যেসব জায়গায় সংস্কার প্রয়োজন, সেগুলো শেষ করে বর্তমান সরকার দ্রুত সবার ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেবে। কিন্তু এখন নতুন খেলা শুরু হয়েছে।'
তিনি বলেন, ‘কিছু কিছু দল বলছে, জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন করতে হবে। তাদের অনুরোধ করে বলতে চাই, দেশকে আর ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেবেন না, নৈরাজ্যের দিকে ঠেলে দেবেন না।’
সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) ঢাকার ধামরাই পৌরসভার যাত্রাবাড়ী মাঠে বিএনপির এক সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। এতে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু আশফাক। সঞ্চালনায় ছিলেন অ্যাডভোকেট নিপুণ রায়।
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি সহনীয় পর্যায়ে রাখা, অবনতিশীল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি, দ্রুত গণতান্ত্রিক যাত্রাপথে উত্তরণের জন্য নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা, রাষ্ট্রের পতিত ফ্যাসিবাদের নানা চক্রান্তের মোকাবিলাসহ নানা দাবিতে এই সমাবেশ আয়োজিত হয়।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি সহনীয় পর্যায়ে রাখার দাবি, অবনতিশীল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতির দাবি, দ্রুত গণতান্ত্রিক যাত্রাপথে উত্তরণের জন্য নির্বাচনি রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি এবং পতিত ফ্যাসিবাদের নানা চক্রান্তের মোকাবিলাসহ বিভিন্ন জনদাবি পূরণ করতে হবে। জনগণকে ভয় দেখিয়ে নয়, তাদের কাছে গিয়ে ভালোবাসা দিয়ে নিজেদের কাছে আনতে হবে। তারেক জিয়ার ৩১ দফা পাড়া মহল্লায় জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছাতে হবে।’
ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘হাসিনা সরকার তারেক জিয়ার নামে ৮৬টি মামলা দিয়েছিল। আমাদের এখনো আদালতে হাজিরা দিতে হয়। আমরা কী ত্যাগ স্বীকার করেছি তা বুঝতে হবে। বার বার বিএনপিকে ভেঙে ফেলার চেষ্টা করেছে, কিন্তু পারেনি। এমনকি আলেম উলামাদেরকেও নির্যাতন করতে কুণ্ঠিত হয়নি। শাপলা চত্বরের কথা ভুলে যায়নি মানুষ। একটি মাত্র দল আওয়ামী লীগকে টিকিয়ে রাখার জন্য কাজ করা হয়েছে। ভোটের অধিকার ছিল না। ভোট কেন্দ্রে কুত্তা থাকত, কোনো মানুষ কেন্দ্রে ভোট দিতে যায়নি। নির্বাচনের নামে করেছে প্রহসন। তামাশা দেখিয়েছে ফ্যাসিস্ট হাসিনা।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এক দিন ফেসবুকে দেখেছি, তিনি ( হাসিনা) বলছেন, ৩২ নম্বরের বাড়িটি কেন ভাঙা হলো? আমার কি অপরাধ? তিনি এখনো জানেন না তার কি অপরাধ। দেশটাকে বিক্রি করে দিয়েছেন। সেদিন সেনাবাহিনী একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। দেশের নেতা-কর্মীদের রেখে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। আমাদের নেত্রী তো দেশ থেকে পালাননি। আজ দেশে আওয়ামী লীগের লোকজন কোথায়। আজ ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হাসিনা সরকারের পতন হয়েছে। তারা দেশে লুটপাট চালিয়েছে। জনগণ তার উপযুক্ত জবাব দিয়েছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘হাসিনা সরকার ২০১৪ ও ২০১৮ সালে জনগণের সঙ্গে প্রহসনের নির্বাচন করেছে। নির্বাচনের আগেই তারা নিজেদের মধ্যে আসন ভাগাভাগি করে নিয়েছে। একটি ভোট কেন্দ্রেও জনগণ ভোট দিতে পারেনি। রাতেই সব শেষ। দেশের উন্নয়ন, জনগণের উন্নয়নে নয়, নিজেদের জন্য কাজ করেছে তারা। লুটপাট করেছে। আবার ভারত বসে উসকানিমূলক কথা বলেন। বর্তমানে দেশের মানুষ সচেতন। তারা আর কোনো ছাড় দেবে না।’
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. ইউনূস সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমরা একজন যোগ্য ব্যক্তিকে দেশের ক্ষমতায় বসিয়েছি। তিনি একজন নোবেল জয়ী। যে ছাত্ররা আন্দোলন করে সরকারের পতন ঘটিয়েছে তারা হাসিনার আমলে ভোট দিতে পারেনি।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘বলা হয় আমরা নাকি সংস্কার চাই না। সংস্কার তো আমরাই দেখিয়েছি। জিয়াউর রহমান দেশে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা দিয়েছিলেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান বিএনপি দিয়েছিল। ২০৩০ সালে বিএনপি কি করবে তারও দিকনির্দেশনা দিয়েছিল। তারেক জিয়ার ৩১ দফার মধ্যে সব সংস্কার রয়েছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘হাসিনা সরকার পালিয়ে গেছে বলেই মনে করবেন না ফ্যাসিস্ট শেষ। যেদিন ভোট দিতে পারবেন সেদিন মনে করতে হবে আমরা ফ্যাসিস্টমুক্ত।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘দলকে ক্ষমতায় আনতে হলে সুশৃঙ্খল থাকতে হবে। মানুষকে ভয় দেখিয়ে নয়, ভালোবাসা দিয়ে কাছে আনতে হবে। অনেকেই বলেন বিএনপি চাঁদাবাজি করছে। মিথ্যে কথা। আওয়ামী লীগ এই মিথ্যা অভিযোগ দিচ্ছে। বিএনপির মধ্যে কোনো চাঁদাবাজি নেই। বিএনপিকে কোণঠাসা করার জন্য ফ্যাসিবাদীরা এখনো চেষ্টা করে যাচ্ছে। কিন্তু পারবে না। ১৬ বছরেও তারা পারেনি। এ দেশের ছাত্র জনতা হাসিনা সরকারকে তার উপযুক্ত জবাব দিয়ে দিয়েছে।’
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আরও বলেন, ‘সংস্কারের নামে নির্বাচন দেরি করা যাবে না। আমরা সব সময় সরকারকে সহযোগিতা করে যাচ্ছি, যাব। কিন্তু জনগণের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিতেই হবে। আমরা জনগণের কাছে ওয়াদাবদ্ধ। জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে ফিরিয়ে দিতে চাই।’