নারী-শিশু নির্যাতনে আইনি ও স্বাস্থ্য সহায়তায় বিএনপির ৮৪ সেল গঠন
নারী-শিশু নির্যাতন, ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনার তথ্য সংগ্রহ এবং ভুক্তভোগীদের জন্য আইনি ও স্বাস্থ্য সহায়তা দিতে সারা দেশে সেল গঠন করেছে বিএনপি। দলটির ৮৪টি সাংগঠনিক জেলায় ‘নিপীড়িত নারী ও শিশুদের আইনি এবং স্বাস্থ্য সহায়তা সেল’ নামের এই সেলগুলো কাজ করবে।
শুক্রবার (১৪ মার্চ) রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
মাগুরায় ধর্ষণের শিকার আট বছরের শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যুতে চরম ক্ষোভ জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে রিজভী বলেন, ‘বর্তমান সময়ে শিশুটির মৃত্যুর বিষয়টি কোনোমতেই দেশবাসী মেনে নিতে পারছে না। বর্তমান শাসনকালে মানুষের প্রত্যাশা ছিল তৃণমূলে অতি দ্রুত আইনের শাসন বলবৎ হবে। কিন্তু প্রশাসনের শ্লথ ও ঢিলেঢালা আচরণের কারণে সমাজে দুষ্কৃতকারীরা নানাভাবেই আশকারা পাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘বিগত ১৬ বছর দুঃশাসনে আমাদের অতি পরিচিত শান্তি ও সুস্থময় পরিপার্শ্বকে বিকৃত করা হয়েছে। দীর্ঘদিনের বাংলাদেশের সামাজিক সংহতিকে বিনষ্ট করা হয়েছে। দুর্বৃত্তায়নের ব্যাপক প্রসার ঘটিয়ে সমাজকে পচা গলিত দুর্গন্ধময় করার চেষ্টা করা হয়েছে।’
‘অন্যের জমি দখল, লুট, টাকা পাচারের মহোৎসবের মধ্য দিয়ে নিজের সিংহাসন অটল রাখতে সব ধরনের নোংরামিকে প্রশ্রয় দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। তার শাসনের সমসময়ে হত্যা, গুম, খুন, ধর্ষণ, নারী, শিশু নির্যাতন, বিরোধী দলের রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের ওপর নির্যাতন, রাষ্ট্র ও সমাজের এমনই বিস্তার ঘটানো হয়েছিল যাতে সভ্য, শিষ্ট, সজ্জন মানুষের বসবাস করা বিপজ্জনক হয়ে পড়েছিল। সাধারণ মানুষকে লাঞ্ছিত করতে, দুর্দশায় ফেলতে তারা কোনো দ্বিধা করত না। বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীকে অবমাননা, অতিকথন ও অপপ্রচারের মাধ্যমে বিরতিহীনভাবে কালিমা লিপ্ত করার চেষ্টা করেছিল।’
বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, ‘বিগত সরকারের শাসনামলে যাবতীয় ভয়, হুমকি ও দুর্বিপাকের মধ্যেও দেশের নাগরিকবৃন্দকে জীবন-যাপন করতে হয়েছে। সেই রেশ ধরেই এখনো নারী-শিশু নির্যাতনকারীরা যেন সুযোগের অপেক্ষায় ওত পেতে বসে আছে। মাগুরায় বোনের শ্বশুরবাড়িতে ৮ বছরের শিশু ধর্ষণ, ধর্ষণ করার পর কয়েক দিন চিকিৎসারত থেকে তার মৃত্যুবরণ সারা জাতিকে বিমূঢ় বেদনায় বেদনার্ত করেছে। এই মর্মান্তিক ঘটনায় সারা জাতির চোখ অশ্রুসজল। দীর্ঘ আওয়ামী দুঃশাসনে মানবিকতা, নৈতিকতা, ন্যায্যতা, ন্যায় বিচার অদৃশ্য করা হয়েছে। অপকর্মকারীরা অধিকাংশই ছিল শেখ হাসিনার দলের লোক। কারণ এরা জনসেবার চেয়ে আত্মসেবাকেই বড় করে দেখেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘মানুষের সমবেত ধ্বনি ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা। কিন্তু সেটি যদি অনুপস্থিত থাকে, তাহলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের গ্রহণযোগ্যতা হ্রাস পেতে থাকবে। আইনের শাসনের শক্ত কাঠামো তৈরি করা হলেই ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে।’
‘প্রশাসন যোগ্য, দক্ষ, ন্যায়পরায়ণ, সৎ ও মানবিক না হলে সমাজে অন্যায়-অবিচার এবং খুন, জখম, নারী ও শিশু নির্যাতনের প্রকোপ জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধি পাবে।’
তাই অবিলম্বে সত্যিকার অর্থে আইনের শাসন বলবৎ করে সমাজে প্রকৃত দুষ্কৃতকারীদের শাস্তি নিশ্চিত করা হোক দাবি করে রিজভী বলেন, ‘ধর্ষণে নির্যাতিত শিশুর মৃত্যুতে হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি অতি দ্রুত নিশ্চিত করা হোক। আমি শিশুটির বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি ও তার পরিবারের প্রতি জানাই গভীর সমবেদনা।’
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল, স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।