জোবাইদার ১৭ বছরের নির্বাসনের অবসান

খালেদা জিয়াকে বহনকারী গাড়ির পেছনে হাসিমুখে বসে আছেন পুত্রবধূ ডা. জোবাইদা রহমান।

বড় ছেলে তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমান ও প্রয়াত ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী সৈয়দা শর্মিলা রহমান সিঁথিকে নিয়ে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গুলশানের বাসার উদ্দেশে রওনা হয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

মঙ্গলবার (৬ মে) বেলা সোয়া ১১টার দিকে একটি গাড়িতে করে রওনা হন খালেদা জিয়া। এ সময় তাকে গাড়িটির সামনের সিটে বসে থাকতে দেখা যায়। পেছনের সিটে হাসিমুখে বসা ছিলেন তার দুই পুত্রবধূ।

বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান জানান, আজ (মঙ্গলবার) সকাল ১০টা ৪২ মিনিটে খালেদা জিয়া ও তার সফরসঙ্গীদের বহনকারী কাতারের রাজপরিবারের বিশেষ বিমান (এয়ার অ্যাম্বুলেন্স) রাজধানীর হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।

এর মাধ্যমে লন্ডনে ১৭ বছর নির্বাসনের জীবন শেষে দেশে ফেরার সুযোগ হয়েছে জোবাইদা রহমানেরও।

এদিন বিমানবন্দরে খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি আশাপ্রকাশ করেন, খালেদা জিয়ার প্রত্যাবর্তন দেশের গণতন্ত্র উত্তরণের পথ সহজ করবে।

তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া দীর্ঘকাল ফ্যাসিবাদের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ফ্যাসিবাদ বিদায় নেওয়ার পর কারাবন্দিত্ব মুক্ত হয়ে চিকিৎসার জন্য বিদেশে গিয়েছিলেন। সেখানে প্রায় ৪ মাস চিকিৎসা শেষে আজকে দেশে ফিরে আসছেন। এটা আমাদের জন্য, জাতির জন্য একটা আনন্দের দিন।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘গণতন্ত্র উত্তরণের এই সময়ে খালেদা জিয়ার উপস্থিতি একটি উল্লেখযোগ্য দিক। তার ফিরে আসা আমাদের গণতন্ত্র উত্তরণের পথ সহজ করবে। দেশকে সঠিক ও বৈষম্যহীন পথে নিয়ে যেতে সহায়তা করবে।’

সোমবার (৭ মে) স্থানীয় সময় ২টা ১০ মিনিটে লন্ডনে তারেক রহমানের বাসা থেকে বিমানবন্দরের উদ্দেশে রওনা হন খালেদা জিয়া। এরপর বাংলাদেশ সময় রাত ৯টা ৩৫ মিনিটে খালেদা জিয়াকে বহনকারী বিমানটি হিথ্রো বিমানবন্দর ত্যাগ করে।

আজ (মঙ্গলবার) সকাল থেকে প্রিয় নেত্রীকে অর্ভ্যথনা জানাতে অবস্থান নিতে শুরু করেন বিএনপি ও দলটির অঙ্গসংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা।

খালেদা জিয়ার প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে দলীয় ও জাতীয় পতাকা নিয়ে এদিন ভোর থেকেই প্রায় ১০ কিলোমিটার পথের উভয় পাশে জড়ো হতে থাকেন বিএনপি নেতাকর্মীরা।

গত ৮ জানুয়ারি কাতারের আমিরের পাঠানো বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে লন্ডন যান খালেদা জিয়া। সেখানে লন্ডন ক্লিনিক নামে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। লন্ডন ক্লিনিকে ১৭ দিন প্রখ্যাত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক প্যাট্রিক কেনেডি এবং অধ্যাপক জেনিফার ক্রসের তত্ত্বাবধায়নে ছিলেন তিনি।

তারপর তাকে তার ছেলে তারেক রহমানের বাসায় নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসা থেকে এতদিন চিকিৎসা নেওয়ার পর আজ দেশে ফিরলেন।

এদিকে খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানাতে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের বাসভবন ‘ফিরোজা’কে পুরোপুরি প্রস্তুত করা হয়েছে বলে বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

খালেদা জিয়ার দেশে প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে তার বাসভবন ঘিরে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা নিশ্চিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদেরও মোতায়েন করা হয়েছে।

আজ (মঙ্গলবার) সকালে ফিরোজার সামনের সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ দেখা যায়। সেখানে শুধু পথচারীদের মধ্যে প্রবেশ সীমিত রাখা হয়েছে। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে কঠোর নিরাপত্তা-বেষ্টনীও তৈরি করা হয়েছে।

শায়রুল কবির খান জানান, পুরো চত্বর ভালোভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করাসহ ফুলের টব দিয়ে সজ্জিত করা হয়েছে। ফিরোজার বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানি সরবরাহের মতো অত্যাবশ্যক পরিষেবাও পরীক্ষা করা হয়েছে।

জোবাইদার ১৭ বছরের নির্বাসনের অবসান

২০০৮ সাল থেকে লন্ডনে বসবাস করে আসছেন তারেক রহমানের স্ত্রী জোবাইদা রহমান ও মেয়ে জাইমা রহমান।

খালেদা জিয়ার সঙ্গে তিনিও আজ দেশে ফিরেছেন। এর ফলে জোবাইদার ১৭ বছরের নির্বাসিত জীবনের অবসান হয়েছে। দেশে ফিরে বাবার ধানমণ্ডির বাসায় থাকার ইচ্ছা পোষণ করেছেন তিনি।

জোবাইদাকে বরণ করে নিতে ধানমণ্ডির ৫ নম্বর রোডে অবস্থিত তার বাবার বাড়ি মাহবুব ভবনও প্রস্তুত করা হয়েছে। বাড়িটি সুসজ্জিত করার পাশাপাশি তার স্বাচ্ছন্দ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে বাড়তি ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

জোবাইদার সম্ভাব্য নিরাপত্তা হুমকির কথা উল্লেখ করে সশস্ত্র সুরক্ষা, তার বাসভবনে পুলিশ মোতায়েন এবং একটি আর্চওয়ে স্ক্যানার স্থাপনের অনুরোধ জানিয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে পুলিশ মহাপরিদর্শককে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা ইতোমধ্যে জায়গাটি পরিদর্শন করেছেন এবং প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা কথা জানিয়েছেন।