সাম্য হত্যায় ‘রাজনৈতিক কারণ’ আছে, ধারণা রিজভীর
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে ‘রাজনৈতিক কারণ’ আছে বলে মনে করেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেছেন, “সাম্য ছাত্রদলের এফ রহমান হলের একটি সম্পাদকীয় পদে রয়েছে। কী কারণ ছিল? কী অন্যায় করেছিল সাম্য? পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে তিনজন ভবঘুরেকে।
“আমরা তো মনে হয় এর পেছনে রাজনৈতিক কারণ আছে। রাজনৈতিক কারণ না থাকলে- যার চেহারা সুদর্শন, নাম তার সাম্য- তাকে হত্যা করবে কে? ভবঘুরেরা কেন হত্যা করবে?”
সাম্য হত্যার বিচারের দাবিতে বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আয়োজিত মানবন্ধনে বক্তব্য দিচ্ছিলেন রিজভী। সিরাজগঞ্জের ছেলে সাম্যর জন্য এ প্রতিবাদ কর্মসূচি আয়োজন করে উত্তরাঞ্চল ছাত্র ফোরাম।
উত্তরের জেলা কুড়িগ্রামের সন্তান রিজভী বলেন, “কয়েকদিন আগে সে (সাম্য) ফেইসবুকে একটা পোস্ট দিয়েছে। কারণ শাহবাগে জাতীয় সংগীত বন্ধের জন্য একটা আন্দোলন চলছিল; তার বিরুদ্ধে সে একটা পোস্ট দিয়েছে জাতীয় সংগীতের পক্ষে।
“যারা জাতীয় সংগীতের বিরুদ্ধে আন্দোলনে ছিল, তাদের বিরুদ্ধে তার একটা বার্তা ছিল; এটাই কি কারণ?”
বুয়েট ছাত্র আবরারের মতো প্রতিবাদী হওয়ার কারণেই সাম্য হত্যার শিকার হয়েছে কি না, সেই প্রশ্নও তোলেন রাকসুর সাবেক ভিপি রিজভী।
তিনি বলেন, “আমরা দেখেছি, ফ্যাসিবাদীর আমলে পার্শ্ববর্তী দেশের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে, পানি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কথা বলার কারণে আবারারকে হত্যা করা হয়। আজকে জাতীয় সংগীত, জাতীয় পতাকা, একাত্তরে আমাদের স্বাধীনতার পক্ষে কথা বললে পরে তার জীবন চলে যায়।
“অর্থাৎ যারা দেশের পক্ষে, যারা আগ্রাসনের বিরুদ্ধে, যারা এই দেশের স্বাধীনতার পক্ষে, যারা জাতীয় সংগীতের পক্ষে, যারা জাতীয় পতাকার পক্ষে- তাদের জীবন চলে যায়। আমি এজন্য বলেছি, নিশ্চয়ই এর পেছনে কোনো রাজনৈতিক কারণ আছে।”
আবরার ফেইসবুকে তার শেষ পোস্টে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের করা কয়েকটি চুক্তির সমালোচনা করেছিলেন। ওই ফেইসবুক পোস্টের সূত্র ধরে বুয়েট ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ‘শিবির সন্দেহে’ আবরারকে ডেকে নিয়ে যে পিটিয়ে হত্যা করে তা সংগঠনটির তদন্তে তখন উঠে এসেছিল।
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রিজভী বলেন, “এখনো কেন ক্যাম্পাসে লাশ পড়ছে, এখনো কেন ক্যাম্পাসে রক্ত ঝরছে, এখনো কেন রক্তের আলপনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের ভেতরে? এখন তো আওয়ামী দোসররা নেই।
“এখন যারা ক্ষমতায় আছেন, তাদেরকে যারা গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছেন- তারা সমর্থন করেছে। এখন কেন লাশ পড়বে?”
মঙ্গলবার রাতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে খুন হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এ এফ রহমান হল শাখা ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক সাম্য। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র ছিলেন।
‘হত্যাকারীদের শাস্তি না হলে পরিণতি ভয়াবহ’
রিজভী বলেন, “সাম্যকে যেভাবে হত্যা করা হয়েছে, তার রাজনৈতিক শত্রু কারা- আমরা একটু আভাস পাচ্ছি। এই রাজনৈতিক শত্রুদের চিহ্নিত করে অবিলম্বে তাদের শাস্তির আওতায় নিয়ে আসুন। তা না হলে এর পরিণতি ভয়াবহ হবে।”
তিনি বলেন, “আমি পুলিশ বিভাগকে বলব, ভালো করে খতিয়ে দেখুন। ভবঘুরে গ্রেপ্তার করেছেন, মানুষ কিন্তু সব বিষয় সহজভাবে নেয় না। সহজভাবে নিতো যদি- এই পুলিশ বিভাগটি সবসময় আপনার সত্য এবং ন্যায় অনুসন্ধান করে যথাযথ ব্যবস্থা নিতো; কিন্তু সেটা তারা নেননি।
“যেমন আবরার হত্যাকাণ্ডে নেননি, এমেই আরও অনেক ঘটনায় নেননি। আজকে পরবর্তিত পরিস্থিতি ফ্যাসিস্ট হাসিনা নেই- রক্তপাত হওয়ার কথা নয়। এই জানুয়ারি মাসেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তোফাজ্জল নাম এক যুবককে হত্যা করা হয়েছিল। কেনে ক্যাস্পাস হবে রক্তপাতের একটি জায়গা?”
‘ভিসি ছাত্র নেতাদের তুই-তোকারি করেছে’
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক থেকে কেন্দ্রের একসময়ের সভাপতি দায়িত্ব পালনকারী রিজভী বলেন, “ভাইস চ্যান্সেলর সাহেব, আপনার কাছে বিচার চাইতে গিয়েছিল ছাত্রদল নেতারা। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সাম্য মারা গেছে। আপনি বিরক্ত হয়েছেন, আপনি ক্ষুব্ধ হয়েছেন, আপনি তুই-তোকারি করেছেন ছাত্র নেতাদেরকে। কেন? আপনি শুনতে চান না।
“কারণ সাম্য ছাত্রদল করে। আপনার (ভিসি) রাজনৈতিক চিন্তা-দর্শন কী, আমরা জানি। আপনি পছন্দ করেন না- যারা জাতীয়তাবাদীর পক্ষের ওখানে রাজনৈতিক দর্শন নিয়ে ছাত্র সংগঠন করে। আপনি ও আপনার প্রক্টর দুইজনই একটি আদর্শে বিশ্বাস করেন।”
তিনি বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ যদি নদীর বালুচর দখল নেয়, সেই চর দখলের মতো যদি আপনারা কোনো গ্যাংয়ের প্রধান হন- তাহলে ওটাকে তো বিশ্ববিদ্যালয় বলা যাবে না। আপনাদের মাথায় যে দর্শন, সেটা বাস্তবায়ন করার জন্য কাজ করছেন।
“বাংলাদেশে বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিয়োগ দিয়েছে- যারা এই কাজটি করছেন। তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে যে, তারা যে দর্শনে বিশ্বাস করেন- ওটা বাস্তবায়ন করা।”
রিজভী বলতে থাকেন, ‘‘কিন্তু আমরা যুগ যুগ ধরে দেখেছি যে- বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর যে আদর্শে বিশ্বাস করুক, ওটা তার ব্যক্তিগত। কিন্তু উনি যখন একটি প্রশাসনের প্রধান হন, উনি তো শিক্ষক। উনার কাছে প্রতিটি ছাত্র, প্রতিটি ছাত্র সংগঠন সমান মর্যাদা পাবে।
“তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি রক্ষার জন্য সবার সাথে কথা বলবেন। কিন্তু উনি যদি নত হয়ে যান, উনি যদি তার বিশেষ দর্শন প্রতিষ্ঠিত করার কাজে নেমে যান; তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় কখনই শান্তিপূর্ণ হবে না, বিশ্ববিদ্যালয়ে এখানে কখনোই স্বস্তি বয়ে আনবে না।’’
‘সরকারের দ্বিচারিতা কেন’
রিজভী বলেন, “অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, আমরা জানি না কাদের প্রতিনিধিত্ব করছেন? আপনারদেরকে আমরাও সমর্থন করেছি, এখনও করে যাচ্ছি। কিন্তু এই মিছিলটি যখন আপনাদের যমুনার দিকে যায়, প্রধান উপদেষ্টার বাসার দিকে তখন তাদেরকে সাদরে বরণ করেন। এই তিন-চার দিন আগেই দেখলাম, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে যারা গেলেন, তাদেরকে সাদরে বরণ করলেন।
“আর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেরা তাদের আবাসনের জন্য গেলে তাদেরকে আপনারা উপহার দিলেন লাঠিচার্জ, তাদেরকে উপহার দিলেন টিয়ার গ্যাস, তাদেরকে উপহার দিলেন সাউন্ড গ্রেনেড। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার- আপনারা বলছেন, আপনারা নাকি সবাই সুশীল সমাজ, আপনারা জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তি। কিন্তু আপনাদের আচরণে মধ্যে এই দ্বিচারিতা কেন? আপনাদের আচরণের মধ্যে এই বিভাজন কেন?”
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশ্যে রিজভী বলেন, “ডানে-বামে সব দিকে তাকিয়ে যথাযথভাবে দেশ শাসন করুন। নইলে কেউ রক্ষা পাবেন না। কোনো বিশেষ রাজনৈতিক দল বা কোনো আদর্শকে প্রতিষ্ঠিত করতে গেলে আপনাদেরকে কিন্তু জনগণ ধরে ফেলবে।
“আমরা পানি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে, আমরা জমি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে, আমরা টেরিটোরিয়েল আগ্রাসনের বিরুদ্ধে পার্শ্ববর্তী দেশের। আবার একই দিকে আমরা স্বাধীনতার পক্ষে, আমরা জাতীয় সংগীতের পক্ষে, আমরা জাতীয় পতাকার পক্ষে, আমরা একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধে যারা শহীদ হয়েছেন- তাদের পক্ষে।”
‘আমরা বিএনপি পরিবার’র আহ্বায়ক আতিকুর রহমান রুমনসহ উত্তরবঙ্গ ছাত্র ফোরামের নেতারা মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন।