অন্তবর্তী সরকারে এনসিপি-বিদেশি ও ফ্যাসিবাদের দোসর রয়েছে: সালাহউদ্দিন আহমেদ

অন্তর্বর্তী সরকারকে এনসিপি মার্কা সরকার আখ্যা দিয়ে বিদেশি নাগরিককে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা করার সমালোচনা করেছেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ।

শনিবার (১৭ মে) খুলনায় যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের উদ্যোগে আয়োজিত তারুণ্যের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় খুলনা ও বরিশাল বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

অধ্যাপক ড. ইউনূসকে উদ্দেশ করে বলেন, অন্তবর্তী সরকারের একমাত্র ম্যান্ডেট ছিল দেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করা। কিন্ত অন্ততকাল জুড়ে বিচার ও সংস্কারের বাহানা দিয়ে গণতন্ত্রকে কন্টকাকীর্ণ করবেন না।

তিনি বলেন, ‘আপনার সরকারে এসসিপির প্রতিনিধি আছে। বিদেশি নাগরিককে আপনি জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা করেছেন। আপনার উপদেষ্টা পরিষদে ফ্যাসিবাদের দোসর রয়েছে। অবিলম্বে তাদেরকে পদত্যাগ করতে বলুন অথবা আপনি তাদেরকে অপসারন করুন।’

জনগণের সঙ্গে কথা না বলেই অন্তবর্তী সরকার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে এমন অভিযোগ করে তিনি বলেন, নির্বাচনের দাবিতে যদি সরকার ঘেরাও করি সেটা হবে দুর্ভাগ্যের। নিজেকে অসীম ক্ষমতার অধিকারী ভাববেন না। বিদেশে গিয়ে কি চুক্তি করে এসেছেন জানতেও চান তিনি।

খুলনা নগরীর সার্কিট হাউজ মাঠে সাম্প্রতিক সময়ের বৃহত্তম এই সমাবেশে খুলনা বিভাগের ১০ জেলা ও বরিশাল বিভাগের ৬ জেলার লক্ষাধিক নেতাকর্মী অংশ নেয়। দিনের শুরু থেকেই সমগ্র নগরীজুড়ে ছিল নেতাকর্মীদের পদচারণা। তবে জৈষ্ঠ্যের তীব্রতর খরতাপ ও গরমে নাজেহাল হয়েছেন তারা। তবে বিকাল ৪টার পরে তাপদাহ কিছুটা কমে এলে সমাবেশস্থল সার্কিট হাউজ মাঠ কানায় কানায় পরিপূর্ণ হওয়ার পর আশেপাশের কয়েক কিলোমিটার এলাকায় আগত কর্মীরা ছড়িয়ে পড়েন। এ কারণে সার্কিট হাউজ মাঠ ছাড়াও আশেপাশের সড়কে বিদ্যুতের খুটিতে কয়েক শত মাইক টানানো হয়। তবে দূর দূরান্ত থেকে নেতাকর্মী আসায় দিনভর নগরী জুড়ে ছিল তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। বরিশাল থেকে বড় লঞ্চেও বহু কর্মী খুলনা আসেন।

২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনের সময় যাদের বয়স ১৮ বছর ছিল তারা কেউই ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেননি বলে অভিযোগ করেন সালাহাউদ্দিন আহমেদ। বলেন, চার থেকে সাড়ে চার কোটি ভোটার কেউই গণতন্ত্রের স্বাদ পাননি। শেখ হাসিনা খুনের রাজত্ব কায়েম করেছিল। জতিসংঘের রিপোর্ট বলছে, আন্দোলন দমন করতে মারণাস্ত্র ব্যবহার করে ১ হাজার ৪০০ ছাত্র-জনতাকে হত্যা করা হয়েছে। কিন্ত এই গণহত্যা চালিয়েও আওয়ামী লীগের ভেতরে কোনো অনুশোচনা নেই।

আওয়ামী শাসনামলে লুটপাট, অর্থ পাচার ও দুর্নীতির নানা পরিসংখ্যান তুলে ধরে তিনি বলেন, এগুলো আমার তথ্য না, এগুলো দুর্নীতি সংক্রান্ত শ্বেপত্র কমিটি প্রকাশ করেছে।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক মৃত্যু হয়েছে ঢাকায়, আর দাফন হয়েছে দিল্লিতে। বিএনপি ঘোষিত ৩১ দফা বাস্তবায়নের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক, মানবিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে এবং আজকের তরুণ ছাত্র-যুবককে সেই ৩১ দফার অ্যাম্বাসেডর হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

সমাবেশ শেষে জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা জাসাসের শিল্পীরা সমাবেশ মঞ্চে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করে।

জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিবের সভাপতিত্বে প্রধান বক্তা ছিলেন জাতীয়তাবাদী যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি আব্দুল মোনায়েম মুন্না।

স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান ও ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাসিরউদ্দিন নাসিরের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য দেন স্বেচ্ছাসেবক দল সভাপতি এস এম জিলানী, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন, বাগেরহাটে আততায়ীর গুলিতে নিহত তানু ভূঁইয়ার বিধবা স্ত্রী কানিজ ফাতেমা, স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম সম্পাদক ফখরুল ইসলাম রনি, যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক বিল্লাল হোসেন তারেক ও ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক আমানউল্লাহ আমান।