অধ্যাপক ইউনূসের নির্দেশে দ্রুত নির্বাচনের প্রস্তুতি নেবে ইসি, আশা ফখরুলের

জাতীয় নির্বাচনের বিষয়ে নতুন নির্দেশনার জন্য প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ধন্যবাদ জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আশা প্রকাশ করেছেন যে, নির্বাচন কমিশন দ্রুত তাদের নির্বাচনী প্রস্তুতি সম্পন্ন করবে।

বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) একটি আলোচনা অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘আমি এই অনুষ্ঠান থেকে অধ্যাপক ড. ইউনূসকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। কারণ তিনি ডিসেম্বরের মধ্যে সমস্ত কাজ সম্পন্ন করার জন্য নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশ দিয়েছেন। এটি একটি অত্যন্ত ইতিবাচক বিষয়।’

ফখরুল বলেন, ‘আমরা আশা করি নির্বাচন কমিশন খুব দ্রুত এই কাজ সম্পন্ন করবে এবং নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করবে।’

তিনি বলেন, আমাদের দল চায় নির্বাচন কমিশন এমনভাবে কাজ করুক—যাতে এটি জাতিকে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দিতে পারে। ‘আমরা আশা করি তারা সেভাবেই কাজ করবে।’

জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘ছাত্র-জনতার জুলাই অভ্যুত্থানে সাংবাদিকদের ভূমিকা’ শীর্ষক এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) এবং ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)।

নির্বাচন সময়মতো অনুষ্ঠিত তা নিয়ে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন মির্জা ফখরুল। তবে নির্বাচন নিয়ে কিছু মহল যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে—তা উড়িয়ে দেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘কেন নির্বাচন হবে না? এ দেশের মানুষ নির্বাচন চায়। তারা নির্বাচনের জন্য তাদের জীবন উৎসর্গ করেছে। তারা নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি সংসদ চায়।’

ফখরুল বলেন, নির্দিষ্ট একটি মহল বিএনপিকে সংস্কারের বিরোধিতাকারী দল হিসেবে চিত্রিত করার চেষ্টা করচে। কিন্তু বাস্তবতা হলো বিএনপিই বাংলাদেশে সকল বড় সংস্কার শুরু করেছে।

তিনি বলেন, ‘সংস্কার আমাদের রক্ত ও ডিএনএতে আছে। আমরা সংস্কারের মাধ্যমেই জন্মগ্রহণ করেছি।’ তাই, এটা বলা অন্যায্য যে বিএনপি সংস্কারের বিরুদ্ধে। বিএনপি সংস্কারে বাধা দিচ্ছে দাবি করার চেয়ে সত্যের বিকৃতি আর কিছু হতে পারে না।’

তবে বিএনপির এই নেতা বলেন, সংস্কারের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জনগণই নেবে। ‘এই অন্তর্বর্তী সরকারের কাছ থেকে আমরা কেন সবকিছু আশা করব?’

জুলাই সনদ সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে ফখরুল বলেন, বিএনপি এর আগে সরকারের কাছ থেকে খসড়া পাওয়ার পর বুধবার রাতে তাদের মতামত জানিয়েছে এবং আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া চূড়ান্ত করেছে। ‘তাহলে, সমস্যা কোথায়?’

জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর ভিন্ন ভিন্ন মতামত থাকতে পারে, কিন্তু দেশ ও গণতন্ত্রের স্বার্থে তাদের ঐক্যবদ্ধ থাকা উচিত।

তিনি রাজনৈতিক দলগুলোকে তাদের বিরোধীদের কথা বলার সময় বা সমালোচনা করার সময় সতর্ক ও সম্মানজনক ভাষা ব্যবহার করার আহ্বান জানান—যাতে ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তির ঐক্য সম্পর্কে মানুষ ভুল বার্তা না পায়।

জামায়াত নেতা সকল গণতন্ত্রপন্থী দলকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, তাদের মধ্যে যেকোনো অনৈক্য ফ্যাসিবাদী শক্তির উত্থানে সাহায্য করতে পারে।

সাংবাদিকদের সভ্যতার ব্যারোমিটার হিসেবে বর্ণনা করে তিনি গণমাধ্যমকে ন্যায্য ও বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা অনুশীলন করে আরও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের অনুরোধ করেন।

পরওয়ার অভিযোগ করেন, কিছু গণমাধ্যম গণতান্ত্রিক শক্তির মধ্যে বিভেদ তৈরির জন্য জামায়াত, বিএনপি এবং অন্যান্য দল সম্পর্কে মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে দিচ্ছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. এ জেড এম জাহিদ বলেন, আওয়ামী লীগের স্বৈরাচারী ও ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থা উৎখাতে ভূমিকা পালনকারী তরুণ নেতাদের মানসিকতা ও মনোভাবের কোনো পরিবর্তন না হওয়ায় তিনি বাকস্বাধীনতা এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন।

তরুণ নেতাদের আরও সংযম ও ধৈর্য প্রদর্শনের আহ্বান জানান তিনি। বলেন, তাদের কাজে ও কথায় অহংকার এড়াতে হবে। ‘আপনাদের সতর্ক থাকতে হবে, যাতে আপনাদের কথা ও কাজে ফ্যাসিবাদী ও স্বৈরাচারীদের মানসিকতার প্রতিফলন না হয়।’

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, সংস্কার প্রস্তাবনা সম্পর্কে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় কোনো বড় অগ্রগতি হয়নি।

তবে, নির্বাচনকে সামনের রেখে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়ার জন্য তিনি প্রধান উপদেষ্টার প্রশংসা করেন।

মান্না সতর্ক করে বলেন, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া উচিত। যেকোনো বিলম্ব দেশকে অন্ধকার ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দিতে পারে। ‘একটি সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হলে গণঅভ্যুত্থান সফল হবে,’ বলেন তিনি।