ফেব্রুয়ারিতে যেন নির্বাচন না হয় তার ষড়যন্ত্র চলছে: মির্জা ফখরুল

ফাইল ছবি

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল আলমগীর বলেছেন, গোলমাল তখনই শুরু হলো যখন ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের কথা ঠিক হলো। অর্থাৎ তাদের কথা হলো নির্বাচন হতে দেওয়া যাবে না। কিন্তু এদেশের মানুষ বারবারই সংগ্রাম করেছে। তাদের যেটা দাবি, সে দাবি আদায় করে নিয়েছেন এবং এই নির্বাচনও অবশ্যই দেখবেন ঘোষিত সময়ের মধ্যেই অনুষ্ঠিত হবে।

বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে ছাত্রদল আয়োজিত ‘জুলাই আন্দোলনে শহীদ ছাত্রদের স্মরণে স্মরণসভা’ শীর্ষক আয়োজনে তিনি এসব কথা বলেন।

শহীদরা ফ্যাসিস্টবিরোধী আন্দোলনে ভ্যানগার্ডের ভূমিকা পালন করেছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ফ্যাসিস্ট মুক্ত হয়েছি, সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু ষড়যন্ত্র থামেনি। পরিকল্পিতভাবে গণতন্ত্রের যেন উত্তরণ না ঘটে, তার জন্য কাজ শুরু হয়েছে।

‘সোশ্যাল মিডিয়াতে বিভিন্নভাবে কাজ করা হচ্ছে। নেতাদের বিরুদ্ধে কথা বলা হচ্ছে। এমনকি আমার নেতা তারেক রহমান সম্পর্কে অশ্লীল অশ্রাব্য ভাষায় কথা বলা হচ্ছে। এটা কেন করা হচ্ছে? তারা ভয় পেয়েছে। তারেক রহমান তো জাতীয় নেতা হিসেবে অলরেডি প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছেন। সুতরাং তিনি যদি ফিরে আসেন, তাহলে তারা যাবে কোথায়,’ প্রশ্ন করেন তিনি।

‘আমাদের সংগ্রাম শেষ হয়ে যায়নি। আমাদের শত্রু চারদিকে। মনে রাখবেন, বিএনপি ডেমোক্রেসি, বিএনপি ফ্রিডম। বিএনপি হচ্ছে ডেভেলপমেন্ট। ভবিষ্যতে আমরাই বাংলাদেশকে একেবারে উন্নয়নের চরমে নিয়ে যাব।’

তিনি বলেন, কোনো পাতা ফাঁদে আমরা পা দেব না। এরা ফাঁদ পাতছে। আমাদেরকে প্রভোক করছে। যাতে আমরা ঝাঁপিয়ে পড়ি, প্রতিবাদ করি, কনফ্রন্টেশন করি—এমন একটা অবস্থা তৈরি করি যেন গণতন্ত্রে উত্তরণটা ব্যাহত হয়।

ফখরুল বলেন, ‘জনগণকে ক্ষমতায়নের জন্যে, তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য আমরা দীর্ঘকাল লড়াই করেছি। আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়া ২০০৯ সালের পর থেকে এই সংগ্রাম শুরু করেছিলেন। বিশেষ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিধান বাতিল হওয়ার পরে তিনি সেই সংগ্রাম আরো জোরদার করেছিলেন।’

‘এরপর তাকে গ্রেফতার করা হয় এবং ছয় বছর জেল খাটেন। তারপর বিএনপির মূল নেতৃত্ব নেন আমাদের বর্তমান নেতা তারেক রহমান, যাকে লক্ষ্য করে বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষ এখন গণতন্ত্রের স্বপ্ন দেখছে। তার নেতৃত্বে আমরা সেই গণতন্ত্রের আন্দোলন করেছি এবং সফল হয়েছি।’

তিনি অভিযোগ করেন, ‘৬০ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা হয়েছে, প্রায় এক হাজার ৭০০ নেতাকর্মীকে গুম করা হয়েছে। আমাদের প্রায় ২০ হাজার নেতাকর্মীকে এক্সট্রা জুডিশিয়াল কিলিং ও বিভিন্নভাবে হত্যা করা হয়েছে।’

‘আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়াকে সম্পূর্ণ মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে ছয় বছর কারাগারে আটক করে রাখা হয়েছে। আমাদের নেতা তারেক রহমানকে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে শারীরিক নির্যাতন করে তাকে বিদেশে নির্বাসিত করা হয়েছে। অসংখ্য মিথ্যা মামলা, হত্যা, খুন, জখম নিয়েও বিএনপি মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার চেষ্টা করেছে এবং একবারের জন্য ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে থামেনি।’

তিনি একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করে বলেন, ছাত্রদলের অসংখ্য ছেলে আছে যারা এই নির্যাতন সহ্য করেছে। শুধু ঢাকায় নয়, সারাদেশে। ছাত্রদলের ছেলেরা দেশে থাকতে না পেরে, গ্রামে থাকতে না পেরে ঢাকায় চলে এসেছে। রিকশা চালিয়েছে, অটো চালিয়েছে, বাইক চালিয়ে, এমনকি গার্ডের চাকরি করেছে। এই ত্যাগ করেই কিন্তু আজকে এই একটা সুযোগ তৈরি হয়েছে।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের কথা উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, এই কৃতিত্বের দাবি অনেকেই করছেন। আসলে কৃতিত্ব জনগণের। গ্রামের কৃষক থেকে শুরু করে বোরকা-হিজাব পরা নারীরা এবং সকল পেশার মানুষ এক হয়ে গিয়েছিল। লক্ষ্য ছিল যে আমরা একটা গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ চাই। মুক্তিযুদ্ধেও প্রায় ৩০ লাখ মানুষ শহীদ হয়েছিলেন। সেটাই ছিল আমাদের ভিত্তি। সেই ভিত্তিটার ওপরেই এগিয়ে আজ পর্যন্ত এইখানে এসেছি।

তিনি বলেন, জিয়া বহুদলীয় গণতন্ত্র চালু করেন এবং দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া সংসদীয় গণতন্ত্র নিয়ে এসেছেন। আমরাই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান চালু করেছিলাম। কারণ বিএনপি হচ্ছে সেই দল, সত্যিকার অর্থেই বাংলাদেশের পরিবর্তন চায়।

তিনি বলেন, খুব দুঃখ হয় যখন দেখি যে আমাদের আহত ভাইয়েরা বলছে যে আমরা কোনো সহযোগিতা পাচ্ছি না। এই সরকার কেন এখন পর্যন্ত তাদের সেই ব্যবস্থা করেনি!