বিএনপির সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নে জনগণের সমর্থন চাইলেন তারেক রহমান
আগামী সাধারণ নির্বাচনের অনুষ্ঠানে রোডম্যাপ ঘোষণা করায় অন্তর্বর্তী সরকারকে স্বাগত জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
বুধবার(৬ আগস্ট) নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিএনপি আয়োজিত এক সমাবেশে ভার্চুয়াল ভাষণে তারেক বলেন, বিএনপি ইতোমধ্যেই জনগণের সামনে দলের দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করেছে। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এলে তারা কীভাবে শাসন করবে, রাষ্ট্র পরিচালনা করবে এবং রাজনীতি করবে—তা তুলে ধরেছে।
তিনি বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার সকল গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলের সঙ্গে পরামর্শ করে সংস্কার প্রস্তাব করেছে। বিএনপি দেশ ও জনগণের কল্যাণে এসব কর্মসূচি বাস্তবায়নে জনসমর্থন কামনা করে।’
তারেক রহমান বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার গতকাল (জাতীয়) নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য একটি সময়সীমা ঘোষণা করেছে, যার লক্ষ্য ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশে জনগণের কাছে জবাবদিহিতাপূর্ণ একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করা। সরকার জনগণের ইচ্ছা বাস্তবায়নের জন্য জুলাই ঘোষণাপত্র প্রকাশ করেছে। আমরা বাস্তবায়নের এই উদ্যোগগুলো স্বাগত জানাই।’
২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রথম বার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত এক সমাবেশে ভার্চুয়াল ভাষণে তারেক রহমান এই মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্রপ্রেমী জনগণকে এই ঐতিহাসিক মুহূর্তের জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে। কারণ, তারা বর্তমানে জনগণের জন্য গণতান্ত্রিক ও রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার যাত্রায় এক গুরুত্বপূর্ণ ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে।
ফ্যাসিবাদী শাসনের দমনমূলক কর্মকাণ্ডের কথা উল্লেখ করে তারেক বলেন, শুধুমাত্র ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে দেড় হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন।
এই মুহূর্তটিকে গণতন্ত্রপ্রেমী নাগরিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠার একটি দুর্দান্ত সুযোগ উল্লেখ করে বিএনপি নেতা বলেন, যদি রাজনৈতিক সম্প্রীতি, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে এই সুযোগ কাজে লাগানো যায়—তাহলে ভবিষ্যতে আর কেউ ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠার সুযোগ পাবে না।
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের ভাই, বোন, সন্তান এবং আত্মীয়স্বজনের জীবনের বিনিময়ে কাউকে আর কখনও রক্তাক্ত ২০২৪ সালের মতো ঘটনা দেখতে হবে না। আমি ধর্ম বা বর্ণ নির্বিশেষে প্রতিটি নাগরিকের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই, বলতে চাই যে, একজন নাগরিক হিসেবে আপনার নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠার, আপনার পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার, বর্তমান এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এসেছে।’
ফ্যাসিবাদী শাসনামলে রাজনৈতিক কর্মী, সাধারণ জনগণ নির্বিশেষে কেউ নিরাপদ ছিল না এবং তাদের সমস্ত গণতান্ত্রিক ও রাজনৈতিক অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছিল—এটি সবাইকে মনে রাখার আহ্বান জানান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। বলেন, ‘গণতন্ত্রপ্রেমী জনগণের জন্য পুরো দেশকে একটি বর্বর কারাগারে পরিণত করা হয়েছিল—আয়নাঘর (একটি গোপন কারাগার)।’
তারেক রহমান বলেন, গণতন্ত্র এবং আইনের শাসন ছাড়া, পুরুষ হোক বা নারী, সংখ্যালঘু হোক বা সংখ্যাগরিষ্ঠ—কেউই নিরাপদ থাকতে পারে না।
তারেক আরও বলেন, ‘গণতন্ত্র ও আইনের শাসন নিশ্চিত করার জন্য রাষ্ট্র ও সরকারে জনগণের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠায় আমাদের কাজ হলো—রক্তের বিনিময়ে অর্জিত গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক অধিকারগুলো সঠিকভাবে বাস্তবায়ন ও অনুশীলন করা।’
বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, বিভিন্ন বিষয়ে মতপার্থক্য স্বাভাবিক। তবে আলোচনার মাধ্যমে এই বিষয়গুলো সমাধান করা উচিত। ‘আমরা, গণতন্ত্রপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোর জাতীয় সংসদে একে অপরের দিকে কখনও মুখ ফিরিয়ে নেওয়া উচিত নয়। বরং, জাতীয় স্বার্থের প্রশ্নে আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, সালাহউদ্দিন আহমেদ এবং সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সমাবেশে বক্তব্য দেন।
২০২৪ সালের জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থান উপলক্ষে দলের মাসব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে সমাবেশটি আয়োজন করে বিএনপি। পরে পাশের সড়কে একটি মিছিল বের করা হয়।