নির্বাচনে বিএনপির বিজয় ঠেকাতে নানা চেষ্টা চলছে

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, জনগণের রায়কে ঠেকাতে নয়, বরং রাজনীতির মোকাবিলা রাজনীতির মাধ্যমেই করতে হবে।

বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) জন্মাষ্টমী উপলক্ষে এক শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এ মন্তব্য করেন।

তিনি অভিযোগ করেন, কিছু রাজনৈতিক দল আগামী জাতীয় নির্বাচনে বিএনপির বিজয় রোধে অপকৌশলের বা শর্তের বেড়াজালের আশ্রয় নিচ্ছেন। জনগণকে রায় দেওয়ার সুযোগ থেকে বিরত রাখার চেষ্টা না করে রাজনীতিকে রাজনীতির মাধ্যমে মোকাবিলা করতে হবে।

আগামী জাতীয় নির্বাচনে হিন্দু সম্প্রদায়ের সমর্থন ও সক্রিয় সহযোগিতা কামনা করে তারেক বলেন, ‘এটি আমাদের জন্য একটি বড় সুযোগ— ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ে তোলার।’

তিনি আরও বলেন, ‘অবাক করা বিষয় হলো, আজ ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন সরকার নয়, বরং কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও দল—যারা একসময় রাস্তায় নেমে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে সহযাত্রী ছিলেন—তাদের আচরণ এখন উৎখাত হওয়া স্বৈরাচারী সরকারের মতোই বিএনপির বিজয় ঠেকানোর প্রবণতা দেখাচ্ছে।’

তারেক অভিযোগ করেন, একসময় ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদী সরকার বিএনপির বিজয় ঠেকাতে দেশকে বিশাল কারাগার ও পরাধীন রাষ্ট্রে পরিণত করেছিল।

তিনি বলেন, ‘আজকের ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশেও কিছু দল ও গোষ্ঠী আছে, যারা আশঙ্কা করছে নির্বাচন হলে জনগণ বিএনপিকে ভোট দেবে সরকার গঠনের জন্য। এই ভয় থেকেই তারা অশুভ কৌশল নিচ্ছে এবং বিএনপির বিজয় ঠেকাতে নানা শর্ত আরোপ করছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই—রাজনীতির মোকাবিলা রাজনীতির মাধ্যমেই করুন। জনগণের শক্তির ওপর ভরসা ও আস্থা রাখুন। যদি বিএনপির বিজয় জনগণের মধ্য থেকেই আসে—তাহলে শুধুমাত্র বিএনপির জয় ঠেকাতে জনগণের রায় দেওয়ার অধিকারকে বন্ধ করবেন না।’

জন্মাষ্টমী উপলক্ষে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বিএনপি ও বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্ট।

অনুষ্ঠানে তারেক বলেন, দেশের সামাজিক-অর্থনৈতিক, ভৌগোলিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতায় এখনো পিআর পদ্ধতির নির্বাচন বাংলাদেশের জন্য উপযোগী নয়।

তিনি বলেন, ‘জনগণের জানার অধিকার আছে তারা কাকে ভোট দিচ্ছে এবং কোন ব্যক্তি তাদের প্রতিনিধি হয়ে সংসদে যাচ্ছেন। কিন্তু পিআর পদ্ধতিতে ভোটারদের জানার কোনো স্বচ্ছ উপায় থাকে না যে, কোন ব্যক্তি নির্বাচিত হচ্ছেন।’

বিএনপি নেতা বলেন, কোনো রাজনৈতিক দল বা ব্যক্তি যদি জাতির প্রতিনিধি হয়ে সংসদ বা সরকারে যেতে চান, তবে অবশ্যই সরাসরি জনগণের মুখোমুখি হতে হবে, তাদের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করতে হবে এবং ভোটের মাধ্যমে তাদের ম্যান্ডেট নিতে হবে।

তিনি আশা প্রকাশ করেন, পিআর পদ্ধতি ও আরও কিছু ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে মতপার্থক্য রয়েছে—তা সময়ের সঙ্গে সহজভাবে মিটে যাবে।

তিনি বলেন, ‘আসন্ন নির্বাচনকে ঘিরে যারা ধোঁয়াশা তৈরি করছে, তারা হয়তো অজান্তেই গণতন্ত্রের পথকে বাধাগ্রস্ত করছে। একই সঙ্গে তারা উৎখাত হওয়া ফ্যাসিবাদী সরকারের পুনর্বাসনের পথও প্রশস্ত করতে পারে।’

ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে তারেক বলেন, কিছু রাজনৈতিক দল ও গোষ্ঠীর দেওয়া বিবৃতি কিংবা নতুন শর্ত জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি করছে।

তিনি বলেন, প্রতিটি বিষয়ে সব দলের ঐকমত্য প্রয়োজন না হলেও স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় স্বার্থ রক্ষার মতো ইস্যুতে ফ্যাসিবাদ ঠেকাতে সবার ঐক্য জরুরি।

জন্মাষ্টমী উপলক্ষে বাংলাদেশ ও প্রবাসী হিন্দু সম্প্রদায়ের সদস্যদের শুভেচ্ছা জানান তারেক। জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে জীবন উৎসর্গ করা হিন্দু সম্প্রদায়ের সদস্যদের প্রতিও তিনি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

হিন্দু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা প্রসঙ্গে তারেক বলেন, অতীতে হিন্দুদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে, যা মূলত অসৎ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য বা অবৈধ লোভ থেকে হয়েছে, ধর্মীয় কারণে নয়। তিনি যোগ করেন, ‘কোনো কারণেই কাউকে হামলা বা অবিচারের শিকার হতে না দেওয়াটা রাষ্ট্র ও সরকারের দায়িত্ব।’

অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, গত ১৬ বছর দেশ শাসন করা আওয়ামী লীগ সরকার বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক কাঠামো ধ্বংস করে দিয়েছে।

তিনি অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগের নেতারা ব্যাপক দুর্নীতি করেছে এবং দেশের বিপুল অর্থ বিদেশে পাচার করেছে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, এখন এক ধরনের প্রবল প্রচেষ্টা চলছে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকে ভুলিয়ে দেওয়ার। এ ধরনের প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধ এই জাতিকে স্বাধীনতা, ভূখণ্ড ও পরিচয় দিয়েছে। আর জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান মানুষকে দিয়েছে গণতন্ত্রের স্বপ্ন। ‘উভয়কেই সমান গুরুত্ব দিয়ে স্মরণ করতে হবে।’

বিএনপি মহাসচিব চরমপন্থার উত্থান সম্পর্কে সতর্ক করে বলেন, বাংলাদেশে এর বিস্তার কোনোভাবেই হতে দেওয়া যাবে না।
তিনি সবাইকে বিভেদমূলক রাজনীতি এড়িয়ে একসঙ্গে কাজ করে জাতীয় পরিচয় রক্ষা, অস্তিত্ব সুরক্ষা ও দেশের অগ্রগতি ত্বরান্বিত করার আহ্বান জানান।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।

কেউ যেন সাম্প্রদায়িকতাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে দেশকে অস্থিতিশীল করতে না পারে, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হিন্দু সম্প্রদায়ের সদস্যদের তিনি আহ্বান জানান।

সাম্প্রদায়িকতায় বিএনপি বিশ্বাস করে না উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, তার দল বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নিশ্চিত করে একটি রংধনু জাতি গড়ে তুলতে চায়।

অনুষ্ঠানে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, ড. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী এবং নির্বাহী কমিটির সদস্য নিপুণ রায় চৌধুরীসহ অন্যান্য নেতারা বক্তব্য দেন।