কৃষ্ণার স্ট্যাটাস ঘিরে তোলপাড়
অনেকদিন ধরেই চোটে ভুগছেন কৃষ্ণা রানী সরকার। সেই চোট সারাতে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) থেকে পর্যাপ্ত সাহায্য-সহযোগিতা না পাওয়ার অভিযোগ এনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন তারকা এই ফুটবলার। শুক্রবার (৩১ মে) দিন জুড়েই যা ছিল বাংলাদেশ ফুটবলে আলোচনার কেন্দ্রে ছিল।
এদিন চাইনিজ তাইপের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচ দিয়ে প্রায় ৬ মাস পর আন্তর্জাতিক ফুটবলে ফিরেছে বাংলাদেশের মেয়েরা। বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনায় অনুষ্ঠিত ম্যাচে খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি সাবিনারা। হেরেছে ৪-০ গোলের বড় ব্যবধানে। তবে এই ম্যাচ ছাপিয়ে কৃষ্ণার স্ট্যাটাসটাই থেকেছে আলোচনার শীর্ষে।
কৃষ্ণা তার ফেরিভায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া দীর্ঘ স্ট্যাটাসে ফুটবল থেকে হারিয়ে যাবেন কি না সেই শঙ্কার কথাও বলেছেন। কৃষ্ণার এই স্ট্যাটাস বেশ ভাইরাল হয়। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের খবরেও ওঠে আসে। তবে বিষয়টি মোটেও ভালোভাবে নেয়নি বাফুফে।
সংস্থার সাধারন সম্পাদক ইমরান হোসেন তুষার কৃষ্ণার অভিযোগ অস্বীকার করেন। সংবাদমাধ্যমকে তিনি এও বলেন, কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হবে কৃষ্ণাকে। বাংলাদেশ-চাইনিজ তাইপে ম্যাচ দেখতে গিয়ে বাফুফের নারী উইংয়ের চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণও এ নিয়ে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় বেশ ক্ষুদ্ধই লাগছিল তাকে। তিনিও বলেছেন কৃষ্ণাকে শোকজ নোটিশ দেওয়ার কথা।
২০২২ সালে বাংলাদেশের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ে বড় ভূমিকা রাখেন কৃষ্ণা। বয়স মাত্র ২৩ হলেও প্রায় ১০ বছর ধরে তিনি খেলছেন জাতীয় দলের জার্সিতে। সাবিনা খাতুনের পর তিনিই সবচেয়ে দীর্ঘ সময় দেশকে প্রতিনিধিত্ব করছেন। কিন্তু সাফের পর থেকেই চোটে ভুগছেন তিনি। তার চোটও বেশ অদ্ভুত।
যে ডান পায়ে অসংখ্য গোল করেছেন, সেই ডান পায়ের মধ্যমা ও চতুর্থ আঙুলের গোড়ার দিকটা শুকিয়ে গিয়েছিল কৃষ্ণার। চোটটা কখন কীভাবে হয়েছিল, সেটা ঠিকঠাক বলতে পারেন না। এখন অবশ্য চোটের অবস্থা আগের থেকে ভালো। কিন্তু পুরোপুরি ফিট নন তিনি। কিন্তু মাঠের বাইরে থাকতে থাকতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন বলে চোট নিয়েই কিছুদিন আগে শেষ হওয়া উইমেন্স ফুটবল লিগে খেলার সিদ্ধান্ত নেন।
এর আগে গত ডিসেম্বরে সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে দুই ম্যাচের প্রীতি সিরিজে তাকে দলের বাইরে রাখা হয়। নেই এবারের চাইনিজ তাইপের বিপক্ষে দুই ম্যাচের সিরিজেও। সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে দুই ম্যাচের সিরিজে আগে কখনোই জাতীয় দল থেকে বাদ পড়েননি কৃষ্ণা। এবার পর দুই সিরিজে বসে থাকার অভিজ্ঞতা হচ্ছে তার। কৃষ্ণার মনের ওপর হয়তো ঝড়ই বয়ে যাচ্ছে।
কে জানে, সেই হতাশা থেকেই হয়তো ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন তিনি। ফেসবুকে কৃষ্ণা লিখেছেন, ‘২০২৩ সালে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের ফিজিও দেবাশিষ চৌধুরি স্যারকে (বিসিবির প্রধান চিকিৎসক) দেখিয়েছিলাম। উনি প্রায় আমাকে অনেকদিন দেখেন, যখন ব্যথা কমছিল না। স্যার বলেছিলেন অস্ট্রেলিয়া, ভারতে গিয়ে ট্রিটমেন্ট করাতে। কিন্তু যখন আমি বাফুফেকে জানাই, উনারা বলেন আরও কিছুদিন দেশে ডাক্তার দেখাতে। আমি অনেকদিন তাদেরকে ভারতে যাওয়ার কথা বলছি। কিন্তু উনারা আমার কথায় কোনো গুরুত্ব দেয়নি। আজও পর্যন্ত ব্যথা নিয়ে প্র্যাকটিস করছি।’
কৃষ্ণা আরও লিখেন, ‘চায়নাতে যখন এশিয়ান গেম খেলতে যাই, তিনটা ম্যাচ বেঞ্চে বসে কাটিয়েছি। ব্যাক টু ব্যাক দুইটা টুর্নামেন্ট থেকে বাদ পড়ে গেলাম। একজন প্লেয়ার হিসেবে এটা মেনে নেওয়া খুব দুঃখজনক। কষ্ট একটাই, কখনও কোনো টিমমেট, প্লেয়ার বা কোচকে বলতে দেখলাম না, কৃষ্ণার ইনজুরি তাকে তাড়াতাড়ি ট্রিটমেন্ট করানো হোক। কারো কোনো মাথা ব্যথাই নেই। ১০ বছরের পরিশ্রম এক নিমিষে শেষ।’
কিন্তু বাফুফের নারী উইংয়ের প্রধান কিরণ বলছেন, ‘অবশ্যই বাফুফে চিকিৎসার ব্যবস্থা করবে। এর আগে আরও প্লেয়ারের ব্যবস্থা করা হয়েছে না? এখন ও যদি বলে অস্ট্রেলিয়া পাঠাতে হবে, দেবাশিষ বলেছে, অস্ট্রেলিয়া পাঠাতে হবে, সেটা তো সম্ভব নয়। ভারত পাশের দেশ, সেখানে পাঠাতে চেয়েছি আমরা। আমাদের ক্যাম্পে যারা থাকে, তাদের সমস্ত চিকিৎসার বিষয়টি আমরাই দেখি।’
কিরণ আরও বলেন, ‘আমরা বলেছি, তুমি ভারতে যাও। তোমার যাওয়ার জন্য কত টাকা লাগতে পারে, সেটা তো আমরা জানি না। একটা রিকুইজিশন দাও। ডাক্তার দেখাও। কী লাগে, না লাগে, সেটা আমরা দেখব। এই কথা বলার পর সে কিভাবে এই স্ট্যাটাস দিতে পারে?’
কিরণ বলে যান, ‘বাংলাদেশের যত ট্রিটমেন্ট আছে, ওর জন্য করা হয়েছে। ক্রিকেট বোর্ডের দেবাশিষ সাহেবকে দেখানো হয়েছে। সে বলেছে, বাংলাদেশে এই ট্রিটমেন্ট হবে না। ভারত, অস্ট্রেলিয়া বা সিঙ্গাপুর যেতে হবে। আমরা ওর ভারতে যাওয়ার ভিসার বিষয়টি অ্যারেঞ্জ করে দিয়েছি। এখন ভুল বোঝাবুঝি কি না, সেটা ওকে জিজ্ঞাসা করেন। সে বাফুফের চুক্তিবদ্ধ খেলোয়াড়। কেন সে এ কথা বলল, সেটা নিয়ে আমরা তাকে শোকজ নোটিশ দেব।’