এবার হবে কী দক্ষিণ আফ্রিকার!

বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকা ফেভারিট থাকবে, কিন্তু চ্যাম্পিয়নের স্বাদ তাদের পাওয়া হবে না। চ্যাম্পিয়ন কি! চ্যাম্পিয়ন হতে হলে তো অন্তত ফাইনাল খেলতে হয়। প্রোটিয়ারা তো সেই পথেই হাঁটতে পারেনি কোনোবার।

এখন পর্যন্ত কোনো বৈশ্বিক আসরে ফাইনালই খেলা হয়নি দলটির। সর্বোচ্চ সেমিফাইনালের চৌকাঠেই আটকে গেছে তাদের স্বপ্নযাত্রা। তাই দুনিয়াজুড়ে এই দলটার ভক্তকুল যতই থাক, বিশ্বকাপ ট্রফি নিয়ে স্বপ্ন দেখার আগে দুবার ভাবেন। চোকার্সদের নিয়ে স্বপ্ন দেখা মানেই যে হৃদয় ভঙ্গের গল্প!

তবে যুক্তরাষ্ট ও ওয়েস্ট ইন্ডিজে চলমান টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে যে দক্ষিণ আফ্রিকাকে দেখা যাচ্ছে, এই দলটা কিন্তু একটু অন্য রকমই। মৃত্যুকূপ হিসেবে পরিচিত ‘ডি’ গ্রুপ থেকে যারা সবার আগে সুপার এইট নিশ্চিত করে ফেলেছে। এখন পর্যন্ত তিন ম্যাচের সবকটিতে জেতা দক্ষিণ আফ্রিকার পারফরম্যান্সকে নিখুঁতই বলতে হবে।

আনরিক নর্কিয়া, কাগিজো রাবাদা, কেশভ মহারাজ, হেইনরিক ক্লাসেন কিংবা ডেভিড মিলার। নিজেদের ছাপ তারা এরই মধ্যে রেখেছেন এবং এও জানান দিয়েছেন যে, বিশ্বকাপ ম্যাচের ভাগ্য একা গড়ে দেওয়ার সামর্থ্য তারা প্রত্যেকে রাখেন।

শ্রীলঙ্কাকে মাত্র ৭৭ রানে অলআউট করে ৬ উইকেটের জয়ে বিশ্বকাপ শুরু করেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। এরপর নেদারল্যান্ডসকে ও বাংলাদেশকেও হারিয়ে টানা তিন জয় তুলে নেয় দলটি। এই তিনটি ম্যাচই তারা খেলেছে এক ভেন্যুতে।

নিউইয়র্কের নাসাউ কাউন্টি আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে। আসরের শুরু থেকেই যে মাঠের উইকেট নিয়ে প্রবল সমালোচনা হচ্ছে। সমালোচনার কারণ এ মাঠের উইকেট পুরোই বোলিং সহায়ক। এখন পর্যন্ত যে ম্যাচগুলো হয়েছে, তার সবগুলোই ছিল লো-স্কোরিং।

সেই লো-স্কোরিং ম্যাচগুলোতেই নাটক-রোমাঞ্চের মঞ্চায়ন দেখেছেন দর্শকরা। তবে একটা জিনিস কিন্তু বদলায়নি কখনো। দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে গেছে অজেয়।

তাই বলে পথটা মোটেও সহজ ছিল না এইডেন মার্করামদের জন্য। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচটার কথাই ধরা যাক। আগে ব্যাট করতে নামা লঙ্কানদের মাত্র ৭৭ রানে অলআউট করে দেবে তারা, এটা ছিল প্রবল বিস্ময়ের এক বিষয়। দ্বিতীয় ম্যাচে দলটির সামনে আসে নেদারল্যান্ডস। যাদের বিপক্ষে গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ও সবশেষ ওয়ানডে বিশ্বকাপেও হারতে হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকাকে।

অর্থাৎ ডাচরা বিশ্বকাপের মঞ্চে বড় এক জুজু হয়েই দেখা দিয়েছিল। সেই জুজু জয় করেই মিলার-ক্লাসেনরা এগিয়েছেন সামনে। ডাচদের হারিয়েছে ৪ উইকেটে।

এরপর বাংলাদেশের বিপক্ষে তৃতীয় ম্যাচে হারতে হারতে জয় পায় দলটি। ১১৪ রান তাড়ায় বাংলাদেশ তো ম্যাচটা জিতেই যাচ্ছিল। কেশভ মহারাজের করা ২০তম ওভারের পঞ্চম বল উড়িয়ে মেরে দলকে জয়ের বন্দরেই নিয়ে যাচ্ছিলেন মাহমুদউল্লাহ। কিন্তু লং অনে কোথা থেকে দৌড়ে এসে ছোঁ মেরে বল তালুবন্দি করেন মার্করাম। তাতে  জয়টাও বাংলাদেশের মুঠো থেকে গলে পড়ে নিউইয়র্কের সবুজ গালিচায়। ১১৩ রানের পুঁজি নিয়ে জয়। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মঞ্চে আগে এমন কিছু ঘটেনি।

সবমিলিয়ে এই দক্ষিণ আফ্রিকাকে দুর্দান্ত তো বলতেই হচ্ছে। সেই সঙ্গে ভাগ্যটাও এবার যেন তাদের পাশে আছে। এই ভাগ্য পাশে থাকে না বলেই তো চোকার্স তারা! তাহলে এবার হবে কী দক্ষিণ আফ্রিকার?