অসাধারণ প্রত্যাবর্তনের গল্প লিখেও হারল যুক্তরাষ্ট্র
১৯৫ রানের লক্ষ্য তাড়ায় নেমে প্রোটিয়া বোলারদের সামনে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাটাররা দাঁড়াতে পারবেন কি না, তা নিয়েই ছিল সংশয়। শুরুতে থেকে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারালেও মাঝে ৯১ রানের ঝড়ো জুটি গড়ে জয়ের ইঙ্গি দেয় স্বাগতিকরা। তবে একেবারে শেষ মুহূর্তে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেন কাগিসো রাবাদা। ফলে তীরে গিয়ে তরী ডুবল যুক্তরাষ্ট্রের।
দক্ষিণ আফ্রিকার দেয়া ১৯৫ রানের লক্ষ্য তাড়ায় ১৮ রানে হেরেছে যুক্তরাষ্ট্র।
৬ উইকেটে ১৭৬ রান সংগ্রহ করতে গিয়ে ওপেনার অ্যান্ড্রিস গাউস করেন অপরাজিত ৮০ রান। ৪৭ বলে তার এই ইনিংসটি ছিল পাঁচটি করে ছক্কা ও চারের মারে সাজানো। এছাড়া সপ্তম ব্যাটার হারমিত সিং করেন ২২ বলে ৩৮ রান।
নির্ধারিত চার ওভারে মাত্র ১৮ রানে তিন উইকেট নিয়ে দলের জয়ে বড় ভূমিকা রাখেন রাবাদা। তবে ব্যাট হাতে দলকে বড় সংগ্রহ এনে দেয়া এবং উইকেটের পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করায় ম্যাচসেরার পুরস্কার পেয়েছেন কুইন্টন ডি কক।
বড় লক্ষ্য তাড়ায় নেমে শুরু থেকেই রান তোলায় মনোযোগ দেয় যুক্তরাষ্ট্র। প্রতি ওভারে বাউন্ডারি ওভার বাউন্ডারিতে ইনিংসের শুরুতেই রানের ঘোড়া ছুটিয়ে দেন স্টিভেন টেইলর ও অ্যান্ড্রিস গাউস।
ইনিংসের চতুর্থ ওভারে রাবাদার হাতে বল তুলে দেন মার্করাম। বোলিংয়ে এসে তৃতীয় বলেই দলকে ব্রেকথ্রু এনে দেন তিনি। ওভারের প্রথম বলটি চার মেরে শুরু করে পরের বলে সিঙ্গেল নেন গাউস। তবে তৃতীয় ওভারে রাবাদাকে মোকাবিলা করতে গিয়েই আউট হয়ে যান টেইলর। ১৪ বলে ১ ছক্কা ও চারটি চারে ২৪ রান করে দলীয় ৩৩ রানে সাজঘরে ফেরেন তিনি।
পরের ওভারে দুটি ছক্কার সাহায্যে ১৭ রান তোলে যুক্তরাষ্ট্র। সেইসঙ্গে দলীয় ৫০ পার করে তারা। তবে এর পরের ওভারে রাবাদা এসে ফের উইকেট নেন। আবারও ওভারের তৃতীয় বলে নতুন ব্যাটার নিতীশ কুমারের উইকেটটি তুলে নেন তিনি।
সপ্তম ওভারের চতুর্থ বলে অধিনায়ক অ্যারন জোনসের উইকেট তুলে নেন কেশব মহারাজ। মহারাজের প্রথম ওভারেই এজ হয়ে ডি ককের গ্লাভসে কট বিহাইন্ড হয়ে যান তিনি।
ফলে ৭ ওভার শেষে ৫৭ রানে তিন উইকেট হারায় যুক্তরাষ্ট্র। এক পাশ থেকে যখন ব্যাটারদের নিয়মিত ক্রিজে আসা-যাওয়া চলছিল, তখন অপর প্রান্ত আগলে রেখেছিলেন গাউস। এরপর কোরি অ্যান্ডারসনের সঙ্গে বড় জুটি গড়ার চেষ্টা করেন তিনি। তবে সে প্রচেষ্টা খুব বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি।
দশম ওভারের দ্বিতীয় বলে আনরিখ নর্টিকিয়াকে ছক্কা হাঁকান কোরি অ্যান্ডারসন। কিন্তু তার পরের বলেই উইকেট উপড়ে দেন নর্টকিয়া। ফলে ১২ বলে ১২ রান করে ফেরেন অ্যান্ডারসন।
১০ ওভার শেষে যুক্তরাষ্ট্রর স্কোর দাঁড়ায় ৪ উইকেট হারিয়ে ৭৩ রান।
এরপর দ্বাদশ ওভারের প্রথম বলেই সায়ান জাহাঙ্গীরকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন তাবরাইজ শামসি।
৭৬ রানে ৫ উইকেট হারানোর পরপরই মনোভাব বদলে ফেলেন গাউস ও নতুন ক্রিজে আসা ব্যাটার হারমিত সিং। উইকেটের দুইপাশ থেকেই সমানে ব্যাট চালাতে শুরু করেন তারা। এতে সফলও হন। ১১.১তম ওভারে ৭৬ রান থেকে ৬ ওভারের ব্যবধানে দলীয় সংগ্রহ ১৪৬ রানে নিয়ে যান এ দুজন।
রানের এ ধারা অব্যাহত রাখায় শেষ দুই ওভারে ২৮ রানের সমীকরণে চলে আসে যুক্তরাষ্ট্রের ইনিংস। তার আগের ওভারেই ২২ রান নেন এই দুই ব্যাটার।
তবে ১৯তম ওভারের প্রথম বলেই রাবাদাকে ছক্কা মারতে গিয়ে সীমান্তে ধরা পড়েন হারমিত সিং। ৪৩ বলে ৯১ রানের জুটি গড়ে হারমিত বিদায় নিলে বড় ধাক্কা খায় যুক্তরাষ্ট্র। এখান থেকে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি তার। ২২ বলে ৩৮ রান করা হারমিত তিনটি ছক্কা ও দুটি চার মারেন।
এরপর নতুন ব্যাটার জেসি সিং পরের দুই বল ডট খেলে চতুর্থ বলে গাউসকে স্ট্রাইক দেন। বাকি দুই বলে এক রান হলে শেষ ওভারে ২৬ রানের প্রয়োজন ছিল যুক্তরাষ্ট্রের।
তবে নর্টকিয়ার ওই ওভারে ৭ রান সংগ্রহ করে যুক্তরাষ্ট্র। ফলে শেষ পর্যন্ত ১৮ রানের জয় পায় দক্ষিণ আফ্রিকা। অপরদিকে, হেরেও গর্বের সঙ্গে মাঠ ছাড়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নবাগত যুক্তরাষ্ট্র।
এই জয়ে সুপার এইটে নিজেদের তিন ম্যাচের প্রথমটি জিতে সেমিফাইনালের দিকে এক ধাপ এগিয়ে গেল দক্ষিণ আফ্রিকা। আর যুক্তরাষ্ট্রের সেমি ফাইনাল খেলা অনিশ্চয়তায় পড়ে গেল। গ্রুপে তাদের অপর দুই প্রতিপক্ষে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও ইংল্যান্ড।
২১ জুন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে মাঠে নামবে দক্ষিণ আফ্রিকা। একদিন পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের মুখোমুখি হবে যুক্তরাষ্ট্র।