অলিম্পিক থেকে যেন গোল্ড মেডেলটাই আনতে পারি
বাংলাদেশের মাত্র তৃতীয় ক্রীড়াবিদ হিসেবে সরাসরি অলিম্পিকে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছেন আর্চার সাগর ইসলাম। কোটা প্লেস অর্জন করে এবারের প্যারিস অলিম্পিকে খেলবেন তিনি। একান্ত সাক্ষাৎকারে বিকেএসপির এই আর্চার শুনিয়েছেন নিজের সাফল্যের পেছনের গল্প। বলেছেন অলিম্পিকে নিজের লক্ষ্য ও স্বপ্ন নিয়েও
প্রশ্ন: গলফার সিদ্দিকুর রহমান ও আর্চার রোমান সানার পর মাত্র তৃতীয় ক্রীড়াবিদ হিসেবে সরাসরি অলিম্পিকে খেলবেন। কেমন লাগছে?
সাগর: আলহামদুলিল্লাহ। এটা সত্য, আমাদের দেশ থেকে সরাসরি অলিম্পিকে কোয়ালিফাই করার সংখ্যাটা খুবই অল্প। আলহামদুলিল্লাহ যে আমি এরকম একটা সুযোগ পেয়ে তা কাজে লাগাতে পেরেছি। সামনে যে অলিম্পিকটা আছে, সেখানে যেন ভালো কিছু করতে পারি এবং দেশের জন্য মেডেল বয়ে আনতে পারি, এখন এটাই লক্ষ্য। স্বপ্ন চূড়ায় থাকবে। ইনশা আল্লাহ যেন গোল্ড মেডেলটাই আনতে পারি।
প্রশ্ন: অলিম্পিক শুরু হতে খুব বেশি সময় বাকি নেই। আগামী মাসেই অনুষ্ঠিত হবে এ আসর। এই অল্প সময়ে কীভাবে নিজেকে তৈরি করবেন ভেবেছেন?
সাগর: আমাদের কোচ সব কিছু ধাপে ধাপে করতে পছন্দ করে। উনি যেভাবে গাইড করেন, ইনশা আল্লাহ অল্প সময়েও ভালো কিছু করা সম্ভব। শুধু সামনের এক মাস প্রস্তুতি নেব, বিষয়টা এমন না। আগেও নিজেকে শক্তিশালী ভেবেছি যে (অলিম্পিকে) কোয়ালিফাই করতে পারব। তখন থেকেই মানসিকতা এমন ছিল যে, পরবর্তীতে অলিম্পিকে কোয়ালিফাই করতে পারলেও ভালো কিছু করব। আসলে অলিম্পিকে খেলার জন্য মানসিক প্রস্তুতি আগে থেকেই নেওয়া।
প্রশ্ন: এত দূর আসার পেছনে আপনার মায়ের অনেক অবদান বলে জেনেছি। আপনার মুখ থেকে গল্পটা শুনতে চাই…
সাগর: তিন বছর বয়সে আমার বাবা মারা গেছেন। মা রাজশাহী শহরে চায়ের দোকান করে আমাদের চার ভাই-বোনকে বড় করেছেন। সবাইকেই কলেজ পাশ করিয়েছেন, বড় ভাই ও দুই বোনকে বিয়ে দিয়েছেন। আমি খেলাধুলায় এসেছি। মা কখনো বুঝতে দেননি আমাদের অর্থনৈতিক দিকটা অনেক দুর্বল। যখন যা চেয়েছি, সেটাই পেয়েছি। মা পেছন থেকে সব সময় সাপোর্ট দিয়ে গেছেন। বলেছেন, তুমি শুধু খেল। তোমার কি লাগে বলবা, তোমার কোনো টেনশন নেই।
প্রশ্ন: এই যে অলিম্পিকে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছেন। মাকে যখন আনন্দের খবরটা প্রথম দিয়েছেন, কেমন লাগছিল?
সাগর: আমি সেদিন মাকে ফোন দিতে দিতে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিল। মাকে বলছিলাম, আমি অলিম্পিকে কোয়ালিফাই করেছি। মা ততক্ষণে খবরটা জেনে ফেলেছিলেন। মা অনেক বেশি খুশি হয়েছেন। মার কথা শুনে তখন মনে হচ্ছিল আমি সফল ছেলে। মা আমার জন্য এত কষ্ট করেছেন। আলহামদুলিল্লাহ, আমি মার জন্য সাফল্য আনতে পেরেছি। আমার প্রথম চাওয়াই হলো আমার মা যেন খুশি থাকেন। মায়ের খুশিটাই আমার খুশি। কারণ সে এক সময় আমাদের খুশির জন্য তার সব খুশিকে বিসর্জন দিয়েছেন।
প্রশ্ন: আপনার আর্চারিতে আসা কীভাবে?
সাগর: আমি যখন ছোট ছিলাম, তখন এখানে ওখানে সারাদিন খেলে বেড়াতাম। তখন আমাদের রাজশাহী শহরেই একটা আর্চারি ক্লাবে আম্মু আমাকে ভর্তি করান। সেখান থেকে ঢাকায় এসে জাতীয় আর্চারি প্রতিযোগিতায় খেলেছি। বিকেএসপি সম্পর্কেও জানতে পারি তখন। মাকে বিকেএসপিতে ভর্তি হওয়ার কথা বলেছিলাম। মা বলেছিলেন, তুমি একা একা থাকতে পারবে? যাই হোক আম্মু পরে বলেছেন, ঠিক আছে ভর্তি হও। ২০১৭ সালে ক্যাম্প করলেও আমার সুযোগ হয়নি। তবে ২০১৮ সালে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাই। প্রথম অবস্থা থেকেই বিকেএসপি আমাকে যেভাবে সাপোর্ট করেছে, যেভাবে আমাকে বিদেশি কোচ দিয়ে প্র্যাকটিস করিয়েছে, জাতীয় দলে আসার আগে তারাই আমাকে গড়ে তুলেছে। এরপর জাতীয় দলে আসার পর এখানকার সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা পেয়েছি।
প্রশ্ন: খুব অল্প বয়সেই বড় একটি সাফল্য পেলেন। সামনে নিজেকে কোথায় দেখতে চান?
সাগর: অবশ্যই সামনে নিজেকে আরও উঁচুতে দেখতে চাই। যেন দেশকে আরও অনেক বড় বড় সাফল্য দিতে পারি।