বিএনপি সরকার আমাকে স্বাধীনতা পুরস্কার দিয়েছিল
কোনো রাজনৈতিক দলের প্রভাবে নয়, নিজের সাংগঠনিক দক্ষতার জোড়েই টানা ১৬ বছর বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সভাপতি পদে আছেন বলে দাবি করেছেন কাজী মো. সালাউদ্দিন।
গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বিভিন্ন সংস্থায় শীর্ষ পদে রদবদল চলছে। অনেক প্রতিষ্ঠানে নেতৃত্ব বদলের জন্য চলছে আন্দোলন। সরকার পতনের পর থেকেই ‘বাংলাদেশি ফুটবল আলট্রাস’ ব্যানারে বাফুফে সভাপতি সালাউদ্দিনের পদত্যাগ চেয়ে আন্দোলন করে যাচ্ছে একদল সমর্থক।
বাফুফে ভবনের সামনে বিক্ষোভ থেকে শুরু করে ‘মার্চ টু বাফুফে’র মতো কর্মসূচিও করেছে তারা। সংগঠনটির দাবি, ফিফার আইনের বাধ্যবাধকতার কারণে কাজী সালাউদ্দিন যদি এই মুহূর্তে পদত্যাগ করতে না পারেন, তাহলে অন্তত আগামী নির্বাচনে প্রার্থী না হওয়ার ঘোষণা যেন দেন।
বাফুফের বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হবে আগামী অক্টোবরে। এরই মধ্যে ২৬ অক্টোবর নির্বাচনের তারিখও ঘোষণা হয়েছে।
এমন প্রেক্ষাপটে রক্ষণাত্মক নয়, আক্রমণাত্মক কৌশলই অবলম্বন করছেন সালাউদ্দিন। আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্যে সরাসরি বলেছেন, ‘এরা ফুটবলের কেউ না। এরা সাইফ পাওয়ার টেকের লোক। ফুটবল খেলতে এসে যারা চলে গেছে (২০২২ সালে বিলুপ্ত হয় প্রতিষ্ঠানটির ক্লাব সাইফ স্পোর্টিং)। সে (ক্লাবের কর্ণধার তরফদার রুহুল আমিন) এসেছিল ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি হওয়ার জন্য। এরা (আন্দোলনকারী) তো তাদের সাপোর্টার।’
আন্দোলনকারীদের দাবির যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে সালাউদ্দিন আরও বলেন, ‘তাদের দাবিটা কি দেখুন? আমি যেন পদত্যাগ করি এবং আমি যেন নির্বাচন না করি। আমি পদত্যাগ না করলে আমাকে রাস্তাঘাটে মারবে। আমি নির্বাচন করব কী করব না, এ নিয়ে কি আমাকে কারও কাছে কৈফিয়ত দিতে হবে?’
সালাউদ্দিন বলে যান, ‘আপনি কিন্তু একটা জিনিস ভুলে গেছেন, আমি একাত্তরে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের খেলোয়াড় এবং আমি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছি। আমি ১৩ বছর জাতীয় দলে খেলেছি। আমি কিন্তু উড়ে এসে জুড়ে বসিনি।’
অনেকে বলেন, নান অনিয়ম ও দুর্নীতির পরও আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কারণে বাফুফে সভাপতির চেয়ারে টিকে ছিলেন সালাউদ্দিন। কিন্তু এমন ভাবনাকে উড়িয়ে দিয়েছেন সালাউদ্দিন। তার দাবি তিনি কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি নন।
সালাউদ্দিনের কথায়, ‘জিয়াউর রহমান সাহেবের সরকার কিন্তু আমাকে জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার দিয়েছে। এরশাদ সাহেবের সরকার আমাকে প্রেসিডেন্ট অ্যাওয়ার্ড দিয়েছে। এরপর বিএনপি সরকার আমাকে দেশের সবচেয়ে বড় পুরস্কার- স্বাধীনতা পুরস্কার দিয়েছে। এরপর এল আওয়ামী লীগ সরকার। তারা আমাকে শেখ কামাল আজীবন সম্মাননা দিয়েছে। আমি কোনো রাজনীতিও করিনি, কোনো দিন সংসদ সদস্য হওয়ার জন্যও আবেদন করিনি। আমি সাধারণ একজন ফুটবলার।’
২০০৮ সালে প্রথমবার বাফুফে সভাপতি নির্বাচিত হন সালাউদ্দিন। সেই সময়ের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি ২০০৮ সালে নির্বাচন করেছি আওয়ামী লীগ ট্যাগের প্যানেলের বিপক্ষে। বাদল রায়, হারুনুর রশীদ, সালাম মুর্শেদী, কাজী নাবিলদের বিপক্ষ প্যানেলে আমি লড়েছি। আমি দক্ষিণ এশিয়ান ফুটবল ফেডারেশনে (সাফ) চারবার নির্বাচন করে নির্বাচিত হয়েছি। যেখানে ভারত, পাকিস্তানের সবাই আছে। ওখানেও আমি জিতেছি। তার মানে আমার ফুটবলের ব্যাকগ্রাউন্ড আছে।’
আন্দোলনকারীদের দাবি নিয়ে আবারও প্রশ্ন রেখে সালাউদ্দিন যোগ করেন, ‘কারা এরা, যারা আমাকে মারবে, যদি আমি নির্বাচন করি? আমার তো মনে হয় না আমার এটা মানার কোনো কারণ আছে। আমি নির্বাচনে হারতে পারি, সেটা কোনো ব্যাপার না। কিন্তু আমাকে মারবে, এটা কোন ধরনের কথা? আমি তো নির্বাচন দিয়েই দিয়েছি। ২৬ অক্টোবর নির্বাচনের তারিখ দিয়েছি। এখন আপনি যদি বদল চান, তাহলে একটাই উপায়- নির্বাচন।’
আর সেই নির্বাচনে নিজে প্রার্থী হচ্ছেন বলেও ঘোষণা দিয়েছেন সালাউদ্দিন, ‘আল্লাহ বাঁচিয়ে রাখলে নির্বাচন করব।’