ক্যাসিনো সাঈদসহ হকির পুরো কমিটি ভেঙে দেওয়ার দাবি
ছাত্র-জনতার অভ্যত্থানের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের সর্বত্র উঠেছে সংস্কারের ডাক। সেই হাওয়া লেগেছে ক্রীড়াঙ্গনে। দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, তহবিল তছরুপ, জোরপূর্বক চেয়ার দখল করে এতদিন যারা দেশের ক্রীড়াঙ্গনকে কলঙ্কিত করেছে, এবার তাদের সরাতে একাট্টা দেশের পরীক্ষিত, যোগ্য সংগঠক, সাবেক তারকা খেলোয়াড়রা। সঙ্গে আছেন দলের বর্তমান সদস্যরাও। ফুটবল, ভলিবল, ক্রিকেটের পর এবার হকিতে উঠেছে পরিবর্তনের ডাক। ‘সন্ত্রাসী-আওয়ামী দালাল হটাও হকি বাঁচাও’ ব্যানারে আজ মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) মওলানা ভাসানী জাতীয় হকি স্টেডিয়াম প্রাঙ্গনে সাতদফা দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচিতে অংশ নেন হকির এক সময়কার মাঠ কাঁপানো সব তারকা, ছিলেন বর্তমান খেলোয়াড়, যোগ্য-পরীক্ষিত সংগঠকরা।
আলোচিত ক্যাসিনোকাণ্ডের নায়ক বর্তমান অবৈধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক মুমিনুল হক সাঈদসহ পুরো কমিটির পদত্যাগ দাবি করে অতি দ্রুত যোগ্যদের নিয়ে অ্যাডহক কমিটির দাবি জানিয়েছেন তারা। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কাছে পরে স্মারক লিপি পেশ করেন। আগামী তিনদিনের মধ্যে বর্তমান কমিটি ভেঙে বিভিন্ন সময়ে যারা বঞ্চিত ছিলেন তাদেরসহ, যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে অ্যাডহক কমিটি গঠনের অনুরোধ জানিয়েছেন মানববন্ধন কর্মসূচিতে অংশ নেয়া সাবেক তারকারা।
বাংলাদেশের হকি মূলত পরিচালিত হয় সাধারণ সম্পাদক দ্বারা। গত বছর একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে জোরপূর্বক ক্ষমতা দখল করা সাধারণ সম্পাদক সাঈদ এখন পলাতক। কমিটির সুবিধাবাদী সহ-সভাপতি রশিদ শিকদার এবং যুগ্ম সম্পাদক মাহবুবুল এহছান রানারও কোনো হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। এমতাবস্থায় দেশের হকি কিছুতেই চলতে পারে না। তাই প্রাণের খেলাকে বাঁচাতে এগিয়ে এসেছেন সাজেদ এ এ আদেল, রফিকুল ইসলাম কামাল, কামরুল ইসলাম কিসমত, মামুন-উর-রশিদ, শহিদুল্লাহ দোলন, মনোয়ার হোসেন, খাজা ইরতেজা কাদের গুড্ডু, জহিরুল ইসলাম মিতুল, তারেক এ আদেলসহ দেশের সব নামকরা হকি খেলোয়াড়রা।
মানববন্ধনে সাজেদ এ এ আদেল বলেন, ‘এখানে যারা এসেছেন সবাই হকি খেলোয়াড়। আমাদের প্রাণপ্রিয় খেলা হকি এটা এতদিন ভালোভাবে চলেনি। আমরা ভালোভাবে চালাতে চাই। বর্তমান কমিটির পদত্যাগের পাশাপাশি অ্যাডহক কমিটি চাই।’
২০২৩ সালে সবশেষ হকি ফেডারেশনে নির্বাচনে সাঈদের নির্মম নির্যাতনের শিকার হন সাজেদ এ এ আদেল। ওই সময়কার ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে জাতীয় দলের সাবেক এ খেলোয়াড় বলেন, ‘নির্বাচনে আমরা দুইটা ক্লাব কাউন্সিলরশিপ ছিনতাই করা হয়েছিল। আমাকে নমিনেশন পেপার কিনতে দেয়া হয়নি, জমা তো দূরের কথা। মুমিনুল হক সাঈদ সাহেব আমাকে ডাইরেক্ট বলেছেন টাকা-পয়সাতে আপনি আমার ওপরে থাকতে পারেন, পেশী শক্তিতে নয়। ন্যায়বিচার চেয়ে আমি আদালতে গিয়েছিলাম। ২০২৩ সালের ২১ জুন আদালত এই কমিটিতে অবৈধ ঘোষণা করেছে।’
হকির এক সময়কার মাঠ কাঁপানো খেলোয়াড় রফিকুল ইসলাম কামাল এবং আরেক কিংবদন্তী মামুন-উর-রশিদও হকিতে দ্রুত অ্যাডহক কমিটির দাবি জানিয়েছেন। যোগ্য, বঞ্চিতদের মূল্যায়নের কথা বলেছেন। কামাল বলেন, ‘ছাত্র জনতার গণ-আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন আমি তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। বর্তমানে যে প্রেক্ষাপট বাংলাদেশের হকিতে এটা পরিবর্তনের দরকার আছে এবং সেই পরিবর্তনের দাবিতে এখানে এসে দাঁড়িয়েছি। আমরা বর্তমান কমিটি বিলুপ্ত করে সবাইকে নিয়ে একটা নতুন কমিটি তৈরি করে দেয়ার জন্য ক্রীড়া উপদেষ্টার কাছে অনুরোধ করব।’
এ ব্যাপারে মামুন-উর-রশিদ বলেন, ‘গেল ১০-১৫ বছর একটা গোষ্ঠী খেলোয়াড়দেরকে বঞ্চিত করেছে, সংগঠকদের বঞ্চিত করেছে, খেলাটাকে কুক্ষিগত করে ফেলেছিল। হকির যে উন্নতির কথা ছিল সেটা হয়নি। যা ইচ্ছা তাই করেছে। আমরা এর অবসান চাই। ফেডারেশন তার নিজস্ব নিয়মে চলবে, খেলোয়াড়দের তাদের নিয়মে চলবে। সুষ্ঠ একটা পরিবেশ থাকবে। সবাই যেন প্রাণ খুলে খেলতে পারে। স্বৈরচার বা স্বেচ্ছাচারিতা যেন না হয়। যাকে ইচ্ছা তাকে বাদ দিলাম, যোগ্য লোকদের কখনো মূল্যায়ন হয়নি এখানে। আমি চাই যারা যোগ্য তাদের যেন মূল্যায়ন করা হয়। খেলা এবং খেলোয়াড়দের যেন উন্নতি। ফেডারেশন যাতে ভালো মতে চলে।’
বর্তমান কমিটির বিলুপ্তির পাশাপাশি অ্যাডহক কমিটি গঠনের সুর ছিল সাবেক খেলোয়াড়-পরীক্ষিত সংগঠক কামরুল ইসলাম কিসমত, সাবেক তারকা শহিদুল্লাহ দোলন এবং সাবেক খেলোয়াড় হকির পরিচিত মুখ তারেক এ আদেলের কণ্ঠেও। এ ব্যাপারে কামরুল ইসলাম কিসমত বলেন, ‘বাংলাদেশে এখন পরিবর্তনের হাওয়া লেগেছে। প্রত্যেকটা সংস্থায় পরিবর্তন হচ্ছে। হকিতে আমরা যারা সাবেক খেলোয়াড়, সংগঠক আছি তাদের নিয়ে যাতে সুষ্ঠু, সুন্দর কমিটি গঠিত হয় সেটাই আমার চাওয়া।’
শহিদুল্লাহ দোলন বলেন, ‘প্রকৃত হকি খেলোয়াড়রা আস্তে আস্তে দূরে সরে যাচ্ছিল। বহিরাগত কিছু লোক এসে আমাদের হকি অঙ্গন দখল করে নিয়েছিল। আমরা যারা হকি খেলেছি, হকির সঙ্গে জড়িত – সবাই মিলে একটা সুন্দর হকি কমিটি চাই। যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টার কাছে আশা করব তরুণ-অভিজ্ঞদের সুন্দর একটা কমিটি তিনি গঠন করে দেবেন।’
দলীয়করণ, নোংরা রাজনীতির কারণে দেশের হকি যে দিনকে দিন তলানীতে চলে গেছে সেই কথা মনে করিয়ে দেন সাবেক খেলোয়াড় তারেক এ আদেল। তিনি আরো যোগ করেন, ‘আমরা সকলেই চাই কিছুদিন আগে ঘটে যাওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যারা গুলিবর্ষণকারী, যারা সন্ত্রাসী, যারা আওয়ামী লীগের ওপর ভর করে যুবলীগের সন্ত্রাসী এবং যারা ক্যাসিনো কেলেঙ্কারিতে জড়িত ছিল। যাদের সম্পর্কে সারা বাংলাদেশ অবগত আমরা তাদের পদত্যাগ চাই। যারা হকি বুঝে, অন্তরে ধারণ করে, হকিকে ভালোবাসে তাদের হকিতে আসা উচিত।