সুখকর হলো না সুয়ারেজের বিদায়

লুইস সুয়ারেজ

আগেই ঘোষণা ছিল প্যারাগুয়ের বিপক্ষে দক্ষিণ আমেরিকান অঞ্চলের বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচটি হতে যাচ্ছে উরুগুয়ের তারকা ফরোয়ার্ড লুইস সুয়ারেজের বিদায়ী ম্যাচ। প্যারাগুয়ের সাথে গোল শূন্য ড্র করে ম্যাচটি শেষ করেছে উরুগুয়ে। যে কারণে সুয়ারেজের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের বিদায় মোটেই সুখকর হলো না।

৩৭ বছর বয়সী সুয়ারেজ গত সোমবার ঘোষণা দিয়েছিলেন, ১৭ বছরের বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারের ইতি টানতে যাচ্ছেন তিনি। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে ১৪৩ ম্যাচে উরুগুয়ের জার্সিতে দেশের হয়ে সর্বোচ্চ ৬৯ গোল করেছেন সুয়ারেজ।

বার্সেলোনা ও লিভারপুলের সাবেক এই সুপারস্টার বর্তমানে মেজর লিগ সকারে ইন্টার মিয়ামির হয়ে খেলছেন। মন্টিভিডিওর এস্তাদিও সেন্টেনারিওতে বিদায়ী ম্যাচে তিনি আন্তর্জাতিক গোলসংখ্যাকে আর সমৃদ্ধ করতে পারেননি। যা তাকে দারুণভাবে হতাশ করেছে। একইসাথে দলের পয়েন্ট হারানোয় হতাশা আরো বেড়েছে।

৬৮ শতাংশ বলের পজিশন নিজেদের কাছে ধরে রাখলেও উরুগুয়ে কোনভাবেই প্যারাগুয়ের শক্তিশালী রক্ষনভাগকে টলাতে পারেনি। পুরো ম্যাচে দুই দল মিলে ২৪টি ফাউল করেছে।

২০০৭ সালে উরুগুয়ের জাতীয় দলে সুয়ারেজের অভিষেক হয়েছিল। ২০১৪ বিশ্বকাপে ইতালির গিওর্গিও চিয়েলিনিকে কামড় দিয়ে চার ম্যাচ নিষিদ্ধ হয়েছিলেন সুয়ারেজ, যা তার ক্যারিয়ারের একটি কালো অধ্যায়।

২০১১ কোপা আমেরিকাজয়ী উরুগুয়ে দলের সদস্য ছিলেন ইন্টার মিয়ামির এই ফরোয়ার্ড। এই টুর্নামেন্টে সেরা খেলোয়াড়ও নির্বাচিত হয়েছিলেন। নয়টি বড় টুর্নামেন্টে তিনি দক্ষিণ আমেরিকার প্রতিনিধিত্ব করেছেন।

সুয়ারেজ বলেছেন কোপা আমেরিকায় উরুগুয়েকে শিরোপা জয়ে উদ্বুদ্ধ করা ছিল তার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে সফল মুহূর্ত। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘কোপা আমেরিকার শিরোপার সাথে আমি অন্য কোন কিছু মেলাতে চাই না। সেটা আমার ক্যারিয়ারের সেরা সময় ছিল। এর সাথে অন্য কোন কিছুরই তুলনা হয়না।’

পুরো ক্যারিয়ারে সাফল্য যেমন এসেছে, তেমনি বিভিন্ন কারণে সমালোচনাও তার পিছু ছাড়েনি। ২০১৪ ব্রাজিল বিশ্বকাপে কামড়ের ঘটনায় টুর্নামেন্ট থেকে নিষিদ্ধ হবার আগে ২০১০ দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপে ঘানার বিরুদ্ধে গোল-লাইনের উপর থেকে বল ক্লিয়ার করতে গিয়ে ইচ্ছা করে হ্যান্ডবল করে তিনি সমালোচিত হয়েছিলেন। সুয়ারেজ লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়লেও ঐ ঘটনায় প্রাপ্ত পেনাল্টি থেকে ঘানা সুযোগ কাজে লাগাতে পারেনি। পরবর্তীতে পেনাল্টি শ্যুট আউটে ঘানাকে বিদায় করে উরুগুয়ে সেমিফাইনালে খেলেছিল।

ক্লাব ফুটবলেও বিতর্ক তার নিত্য সঙ্গী ছিল। ২০১১ সালে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ফরাসি স্ট্রাইকার প্যাট্রিস ইভরার বিরুদ্ধে বর্ণবাদী আচরণের কারণে ইংলিশ কর্তৃপক্ষ তাকে আট ম্যাচ নিষিদ্ধ করেছিল।

২০১৮ ও ২০২২ বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে উরুগুয়েকে এগিয়ে যাবার ক্ষেত্রে সব ধরনের সহযোগিতা করেছেন সুয়ারেজ। এ বছর কোপা আমেরিকায়ও তিনি উরুগুয়ের হয়ে খেলেছেন। যদিও বেশিরভাগ সময়ই কোচ মার্সেলো বিয়েসলার অধীনে বদলি হিসেবে মাঠে নেমেছেন। কানডার বিপক্ষে তৃতীয় স্থান নির্ধারনী ম্যাচে সুয়ারেজ ক্যারিয়ারের ৬৯তম গোলটি করেছিলেন।

এই ড্রয়ে সাত ম্যাচে ১৪ পয়েন্ট নিয়ে ১০ দলের দক্ষিণ আমেরিকান বাছাইপর্বে দ্বিতীয় স্থানেই রয়েছে উরুগুয়ে। শীর্ষে থাকা আর্জেন্টিনার থেকে তারা চার পয়েন্ট পিছিয়ে রয়েছে।

কলম্বিয়ার সামনে সুযোগ ছিল উরুগুয়েকে টপকে দ্বিতীয় স্থান দখল করার। কিন্তু লিমাতে পেরুর সাথে ১-১ গোলে ড্র করে সেই সুযোগ কাজে লাগাতে পারেনি কলম্বিয়া। উরুগুয়ের থেকে এক পয়েন্ট পিছিয়ে তৃতীয় স্থানেই রয়েছে তারা।