রেজাল্ট দেখে আমরা অনেক কিছু সেক্রিফাইস করে ফেলি
পাকিস্তানের মাটি থেকে সদ্যই দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ ২-০ ব্যবধানে জিতে ফিরেছে বাংলাদেশ। নিজেদের ঘরের মাঠে মাত্র দ্বিতীয়বার হোয়াইটওয়াশের স্বাদ পেতে হয়েছে পাকিস্তানকে। আসলে যেটা ভাবেনি কেউ, সেটাই করে দেখিয়েছেন টাইগাররা। বিশেষ করে পেস বোলিংয়ের উর্বর ভূমিতে বাংলাদেশের পেসাররা ঘটিয়েছেন নতুন স্বপ্নের বুনন। হাসান মাহমুদ, তাসকিন আহমেদ, নাহিদ রানারা তো রীতিমতো রাজত্ব করেছেন রাওয়ালপিন্ডিতে অনুষ্ঠিত ম্যাচ দুটিতে। অথচ পাকিস্তানের ফার্স্ট বোলাররা সেখানে ছিলেন ম্লান। ব্যাট হাতে দৃঢ়তা দেখিয়েছেন মুশফিকুর রহিম, লিটন দাসরা।
অভাবনীয় এই সাফল্যের পর এরই মধ্যে দেশে ফিরেছে বাংলাদেশ দল। কিন্তু দেশে ফেরার পর ক্রিকেটারদের নিয়ে আলোচনা কই! আলোচনার পুরোটা জুড়েই ভিনদেশী একজন। তিনি চন্ডিকা হাথুরুসিংহে, বাংলাদেশের প্রধান কোচ। প্রচণ্ড আলোচিত ও সমালোচিত একজন। হাথুরুসিংহেকে বাংলাদেশের প্রধান কোচের পদে রাখা উচিত কি-না, এই নিয়েই এখন যত আলোচনা। আর এ বিষয়ে দ্য মিরর এশিয়ার সঙ্গে খোলামেলা কথা বলেছেন জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাসুদ পাইলট। হাথুরুসিংহের সমালোচনা করে যিনি সাম্প্রতিক অতীতে অনেক কথাই বলেছেন। তবে পাকিস্তানের মাটিতে বাংলাদেশ দলের অভাবনীয় সাফল্যের জন্য শ্রীলঙ্কান এই কোচকে কৃতিত্ব দিতে ভুলছেন না পাইলট। তার মতে, ‘এই মুহূর্তে আমি অবশ্যই তাকে অভিনন্দন জানাব। এতো বড় একটা অর্জনের জন্য এই অভিনন্দন তিনি ডিজার্ভ করেন।’
এতটুকুতে বোঝা যায় হাথুরুসিংহেকে নিয়ে পাইলটের মনোভাব বদলে গেছে। আদতে কিন্তু তা নয়। পাইলট অবশ্য আলোচনার শুরুতেই একটা কথা বলে নিলেন, ‘আমি কিন্তু হাথুরুসিংহের বিপক্ষে না। আবার পক্ষে এটাও বলব না। হাথুরুসিংহেকে নিয়ে অনেক কথাই আমি বলেছি। তার সমালোচনা করেছি।’
সেই সমালোচনাটা কেন করেছেন, তার ব্যাখ্যা দিয়ে পাইলট বলেন, ‘আমার সমালোচনার বড় বিষয় ছিল আর্থিক জায়গাটায়। একটা ৫০০ মিলি লিটার পানির বোতলের দাম মার্কেটে যদি ২০ টাকা হয়ে থাকে, সেটা নিশ্চয়ই আপনি ৪০ টাকা দিয়ে কিনবেন না। সেই হিসেবে আমি সব সময় বলেছি, অনেক টাকা দিয়ে এমন একজন লোককে নিয়ে আসা হয়েছে, যেটা মার্কেট ভেল্যুর চেয়ে অনেক বেশি।’
হাথুরুসিংহে এ নিয়ে দ্বিতীয় মেয়াদে বাংলাদেশ দলের প্রধান কোচের দায়িত্বে আছেন। প্রথম দফায় ২০১৪ সালের জুন থেকে ২০১৭ সালের নভেম্বর পর্যন্ত টাইগারদের দায়িত্ব সামলান তিনি। সেবার চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই বাংলাদেশকে অনেকটা বিপাকে ফেলেই চলে যান তিনি। এরপরও ২০২৩ সালে তাকে দ্বিতীয় মেয়াদে ফিরিয়ে আনে বিসিবি। সেটাও মাসে ২৫ হাজার ডলার বেতনে। এই বেতনটা আবার কর মুক্ত। বেতন বাবদ যে কর দেওয়ার কথা তার, সেটা পরিশোধ করে বিসিবিই।
এমনিতে হাথুরুসিংহের কোচিংয়ে বাংলাদেশ দল মাঠের ক্রিকেটে দারুণ কিছু সাফল্য পেয়েছে। পরিসংখ্যানের বিচারে তাকেই বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল কোচ বলে দেওয়া যায়। তবে এটাও ঠিক, নিজের দুই মেয়াদেই বাংলাদেশের ক্রিকেটে নানা কর্মকাণ্ডে তিনি বেশ সমালোচিতও হয়েছেন। ৪৪ টেস্ট ও ১২৬ ওয়ানডে খেলা পাইলট অবশ্য কোচ হিসেবে হাথুরুসিংহে ভালো না খারাপ, সেই বিচারে যেতে চান না। তিনি এই ভার দিতে চান বিসিবির ক্রিকেট অপারেশনস বিভাগের ওপর।
পাইলটের কথায়, ‘আমরা হয়তো মাঠের খেলা দেখে পারফরম্যান্স অনুযায়ী বিচার করি। অনেক সময় অনেক কোচ কিন্তু অনেক ভালো দল পেয়েছে, কিন্তু রেজাল্ট করতে পারেনি। দক্ষিণ আফ্রিকা সব সময় ভালো দল পেয়েছে, কিন্তু রেজাল্ট নেই। আবার অনেক কোচ তুলনায় অনেক খারাপ দল পেয়েও রেজাল্ট করেছে। ইমরান খানের কথাই ধরেন। খুব বেশি ভালো দল তার ছিল না। কিন্তু অধিনায়ক হিসেবে তিনি দলকে চ্যাম্পিয়ন বানিয়েছেন। তাই এটা (কোচের পারফরম্যান্স) বিচার করা খুব কঠিন। এই বিচারটা করবে আসলে ক্রিকেট অপারেশনস বিভাগ। যেখানে কর্মকর্তাদের সঙ্গে অধিনায়ক, নির্বাচকরাও পড়েন। এই বিভাগের লোকজন কোচকে খুব কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করে থাকেন। তাই তারাই সবচেয়ে ভালো বলতে পারবেন হাথুরুসিংহে কতখানি কার্যকরী আমাদের জন্য।’
তবে পাইলট এরপর যোগ করেন, ‘চিন্তা করতে হবে আমাদের এই কোচকে কি এতো দামে নেওয়া খুব প্রয়োজন ছিল। কোন সেন্সে আমি এটা বলছি। উনি অস্ট্রেলিয়ার একটি ফার্স্টক্লাস দলের কোচ ছিলেন। অস্ট্রেলিয়ার কোনো একটা ফার্স্টক্লাস দলের প্রধান কোচ, যে কি-না বেতন পায় ১৪ থেকে ১৫ হাজার অস্ট্রেলিয়ান ডলার। সেই তাকে আমরা বাংলাদেশে আনলাম কতগুণ বেশি টাকা দিয়ে। এই জায়গাটা আমার মনে হয় খুব ব্যয়বহুল কোচ তিনি (হাথুরুসিংহে)।’
পাইলট মনে করেন, ‘অনেক সময় আমরা রেজাল্ট দেখলে অনেক কিছু সেক্রিফাইস করে ফেলি। কিন্তু এত টাকা খরচ করে আমাদের আসলেই লাভ হচ্ছে না ক্ষতি হচ্ছে, এটা অবশ্যই ম্যানেজমেন্টের চিন্তা করা উচিত।’
উল্লেখ্য, হাথুরুসিংহের সঙ্গে বিসিবির চুক্তি ২০২৫ সালের চ্যাম্পিয়নস ট্রফি পর্যন্ত। ফেব্রুয়ারি-মার্চে যা অনুষ্ঠিত হবে পাকিস্তানে। অর্থাৎ এই হিসেবে আরও সাত মাস বিসিবের সঙ্গে চুক্তি রয়েছে হাথুরুসিংহের।