ভরসা থেকে সাকিব এখন বোঝা!
সাকিব আল হাসান এখন আর বাংলাদেশের ভরসার নাম নন। ৩৭ বছর বয়সী এই ক্রিকেটার যেন দিনে দিনে দলের বোঝা হয়ে উঠছেন! অন্তত চেন্নাই টেস্টের আবহ সেটাই বলছে। বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার যেখানে ব্যাটে-বলে একেবারেই বিবর্ণ। এর বাইরে চোট লুকিয়ে খেলার মতো অভিযোগও উঠছে তার বিরুদ্ধে।
মাঠে কিংবা মাঠের বাইরে সাকিবের সময় ভালো যাচ্ছে না অনেক দিন ধরেই। ক্রিকেট ছাড়ার আগেই রাজনীতিতে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। সবশেষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেন এবং সংসদ সদস্যও নির্বাচিত হন। কিন্তু সাকিবের সংসদ সদস্য ক্যারিয়ারটা লম্বা হয়নি। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের সঙ্গে সঙ্গে সংসদসদস্য পদ যায় সাকিবেরও। এমনকি তার বিরুদ্ধে দেশে হত্যা মামলাও হয়েছে। সেই সময় থেকে বাংলাদেশ দলে সাকিবের ভবিষ্যত নিয়েও প্রশ্ন উঠতে থাকে।
তবে সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে সাকিব বাংলাদেশের হয়ে পাকিস্তান সিরিজে অংশ নিয়েছিলেন। মাঝে ইংল্যান্ডের কাউন্টি ক্রিকেটে একটি ম্যাচ খেলে এসে এখন ভারতের বিপক্ষে চেন্নাই টেস্টে খেলছেন। কিন্তু ব্যাটে-বলে এই সাকিব যেন আগের সাকিব নেই।
পাকিস্তান সফরে প্রথম টেস্টে ব্যাট হাতে সাকিবের রান ১৫। প্রথম ইনিংসে এই রান করেন তিনি। দ্বিতীয় ইনিংসে তার ব্যাটিংয়ে নামার প্রয়োজন পড়েনি। বোলিংয়ে দুই ইনিংস মিলিয়ে ৪ উইকেট নেন। তবে রান দিয়েছিলেন ১৪৪ রান। দ্বিতীয় ম্যাচে ব্যাট হাতে যথাক্রমে ২ ও অপরাজিত ২১ রান করেন। বোলিংয়ে দু-ইনিংসে নেন মাত্র ১ উইকেট।
এরপর কাউন্টিতে সারের হয়ে সামারসেটের বিপক্ষে একটি ম্যাচ খেলেন সাকিব। সেখানে ব্যাটিংয়ে ব্যর্থ হলেও বল হাতে উজ্জ্বল ছিলেন। দুই ইনিংস মিলিয়ে নেন ৯ উইকেট। কিন্তু ভারত সফরে এসে যেন বোলিংটাও ভুলে গেছেন সাকিব।
চেন্নাই টেস্টের প্রথম দিনে সাকিবকে বোলিংয়ে আনা হয় ৫২ ওভারের পর। বোলিংয়ে এসেও শুধু রান বিলিছেয়েন। প্রথম ইনিংসে ৮ ওভার বল করে ৫০ রান খরচায় ছিলেন উইকেটশূন্য। ব্যাটিংয়ে অন্যদের ব্যর্থতার মাঝে প্রথম ইনিংসে দলীয় সর্বোচ্চ ৩২ রান করেছেন। কিন্তু সেখানে তাকে ভুগতে দেখা গেছে যথেষ্টই। দ্বিতীয় ইনিংসে সাকিব ১৩ ওভার বোলিং করানো হয়। এ দফায় ৭৯ রান খরচ করলেও কোনো উইকেট পাননি।
চোখের সমস্যার কারণে সাকিব অনেক দিন ধরেই ব্যাটিং নিয়ে ভুগছেন। হেড পজিশন ঠিক রেখে ব্যাট করতে রীতিমতো সংগ্রাম করতে হচ্ছে তাকে। কিন্তু বোলিংয়ে ঠিকই পুষিয়ে দিচ্ছিলেন। এখন সেই বোলিংয়েও সাকিব বিবর্ণ।
আজ চেন্নাই টেস্টের তৃতীয় দিনের খেলা চলাকালে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে, সাকিব নাকি সম্প্রতি তার বোলিং আঙুলে অস্ত্রোপচার করিয়েছেন। ধারাভাষ্য দেওয়ার সময় বিস্ফোরক এই তথ্য দিয়েছেন ভারতের সাবেক স্পিনার মুরালি কার্তিক। সহ ধারাভাষ্যকার হিসেবে থাকা বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক তামিম ইকবাল এ তথ্য জেনে রীতিমতো সমালোচনা করেছেন টিম ম্যানেজমেন্টের।
এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও সাকিবকে নিয়ে চলছে সমালোচনা। কানপুরে পরের টেস্টে তাকে একাদশের বাইরে রাখার দাবিও উঠছে। সবমিলিয়ে সাকিব শুধু কঠিন সময়ই পার করছেন না, ক্যারিয়ারের শেষও যেন দেখতে পাচ্ছেন।
চেন্নাই চেস্টে সাকিবের কিছু করে দেখানোর সময় অবশ্য এখনও আছে। ৫১৫ রানের লক্ষ্যে ৪ উইকেটে ১৫৮ রানে দিন শেষ করেছে বাংলাদেশ। সাকিব সেখানে অপরাজিত আছেন ৫ রানে।
এখন বড় ইনিংস খেলে সাকিব কি সব সমালোচনা ও জল্পনার জবাব দিতে পারবেন? কাজটা ব্যাট হাতে করতে হবে বলে ভরসা রাখার উপায়ই তো নেই।