১৮ উইকেট পতনের দিন ২৬ রানে পিছিয়ে বাংলাদেশ
ভারতের বিপক্ষে দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টের চতুর্থ দিন শেষে ২৬ রানে পিছিয়ে রয়েছে সফরকারী বাংলাদেশ। মোমিনুল হকের সেঞ্চুরিতে প্রথম ইনিংসে ২৩৩ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। জবাবে ৯ উইকেটে ২৮৫ রানে ইনিংস ঘোষনা করে ভারত। প্রথম ইনিংস থেকে ৫২ রানে পিছিয়ে থেকে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে খেলতে নেমে চতুর্থ দিন শেষে ২ উইকেটে ২৬ রান করেছে টাইগাররা।
টেস্টের প্রথম দিন ৩৫ ওভার খেলা হবার পর বৃষ্টির কারণে দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিন ভেস্তে যায়। আজ চতুর্থ দিন ৮৫ ওভারে ৪৩৯ রানের বিনিময়ে দুই দলের ১৮ উইকেটের পতন হয়।
কানপুরের গ্রিন পার্ক স্টেডিয়ামে টস হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে প্রথম দিন শেষে ৩৫ ওভারে ৩ উইকেটে ১০৭ রান করেছিলো বাংলাদেশ। বৃষ্টির কারনে মাঠ খেলার অনুপযুক্ত থাকায় দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিনের খেলা পরিত্যক্ত হবার পর আজ আবারো ব্যাটিংয়ে নামে বাংলাদেশ। মোমিনুল ৪০ ও মুশফিকুর রহিম ৬ রান নিয়ে খেলতে নেমে দিনের খেলা শুরু করেন। ভারতের পেসার জসপ্রিত বুমরাহর দারুণ ডেলিভারিতে দিনের ষষ্ঠ ওভারে ১১ রানে বোল্ড হন মুশফিক। ব্যক্তিগত ৪৮ রানে সাজঘরে ফিরতে পারতেন মোমিনুল। কিন্তু পেসার মোহাম্মদ সিরাজের বলে আম্পায়ারের দেওয়া ক্যাচ আউটে রিভিউ নিয়ে জীবন পান তিনি।
মুশফিক ফেরার পর দ্রুত সাজঘরে ফিরেন উইকেটরক্ষক লিটন দাস ও সাকিব আল হাসান। মোহাম্মদ সিরাজের বলে রোহিত শর্মার দারুন ক্যাচে ১৩ রানে বিদায় নেন লিটন। স্পিনার রবীচন্দ্রন অশি^নকে তুলে মারতে গিয়ে মিড অফে সিরাজের দুর্দান্ত ক্যাচে ব্যক্তিগত ৯ রানে বিদায় নেন সাকিব।
১৭০ রানে ষষ্ঠ উইকেট পতনের পর মেহেদি হাসান মিরাজকে নিয়ে টেস্ট ক্যারিয়ারের ৬৫তম ম্যাচে ১৩তম সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন মোমিনুল। ১৫ মাস পর টেস্টে পাওয়া শতকটি ভারতের বিপক্ষে প্রথম ও বিদেশের মাটিতে দ্বিতীয়। এর আগে ২০২১ সালে পাল্লেকেলেতে শ্রীলংকার বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেছিলেন এই বাঁ-হাতি ব্যাটার। এছাড়াও কানপুরে সফরকারী দলের ব্যাটার হিসেবে ১০ বছর পর টেস্টে সেঞ্চুরি করলেন মোমিনুল। সর্বশেষ ২০০৪ সালে এই মাঠে শতক হাঁকিয়েছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার এন্ড্রু হল।
সপ্তম উইকেটে মোমিনুলের সাথে ৫৪ রানের জুটি গড়ে আউট হন মিরাজ। ৪টি চারে ২০ রান করেন তিনি। মিরাজ ফেরার পর লোয়ার অর্ডারের ব্যাটাররা মোমিনুলকে সঙ্গ দিতে না পারলে ২৩৩ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। সতীর্থদের যাওয়া-আসার মাঝে অন্যপ্রান্তে ১০৭ রানে অপরাজিত থাকেন মোমিনুল। তার ১৯৪ বলের ইনিংসে ১৭টি চার ও ১টি ছক্কা ছিলো।
বুমরাহ ৩টি, সিরাজ, অশ্বিন ও আকাশ দীপ ২টি করে এবং রবীন্দ্র জাদেজা ১ উইকেট নেন। ক্যারিয়ারের ৭৪তম টেস্টে ৩০০ উইকেট পূর্ণ করেছেন জাদেজা।
জবাবে খেলতে নেমে উদ্বোধনী জুটিতে ২৪ বলে ৫৫ রান সংগ্রহ করেন ভারতের দুই ওপেনার যশ্বসী জয়সওয়াল ও অধিনায়ক রোহিত শর্মা। ১১ বলে ১টি চার ও ৩টি ছক্কায় ২৩ রান করে স্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজের শিকার হন রোহিত।
অধিনায়ক ফেরার পর শুভমান গিলকে নিয়ে ৬৩ বলে ৭২ রান যোগ করেন জয়সওয়াল। এই জুটির কল্যাণে ১০.১ ওভারে ১০০ রান স্পর্শ করে ভারত। টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে ৫০’এর পর দ্রুত ১০০ রান স্পর্শ করার বিশ্ব রেকর্ড গড়ে টিম ইন্ডিয়া। ১৫তম ওভারে বিধ্বংসী জয়সওয়ালকে বোল্ড করেন বাংলাদেশের পেসার হাসান মাহমুদ। ৩১ বলে টেস্ট ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ হাফ-সেঞ্চুরি করা জয়সওয়াল ৭২ রানে থামেন। তার ৫১ বলের ইনিংসে ১২টি চার ও ২টি ছক্কা ছিল।
এরপর ভারতের রানের চাকা দ্রুত ঘুড়িয়েছেন গিল, বিরাট কোহলি ও লোকেশ রাহুল। গিল ৩৯ ও কোহলি ৪৭ রানে আউট হলেও টেস্টে ১৫তম হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ নেন রাহুল। ৭টি চার ও ২টি ছক্কায় ৪৩ বলে ৬৮ রান করেন রাহুল। তার অর্ধশতকে ওভারপ্রতি ৮.২২ রান তুলে ৯ উইকেটে ২৮৫ রানে ইনিংস ঘোষণা করে ভারত। এর ফলে প্রথম ইনিংসে ৫২ রানের লিড পায় স্বাগতিকরা। এই ইনিংসে দেড় শতকের পর দ্রুত ২০০ রানের বিশ্ব রেকর্ডও গড়ে টিম ইন্ডিয়া। সাকিব ৭৮ রানে ও মিরাজ ৪১ রানে ৪টি করে উইকেট নেন।
৫২ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসের ১৮ রানের উদ্বোধনী জুটির পর উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ১০ রান করা ওপেনার জাকির হাসানকে শিকার করেন স্পিনার অশ্বিন। নাইটওয়াচম্যান হিসেবে নেমে ৯ বলে ৪ রান করে অশ্বিনের দ্বিতীয় শিকার হন হাসান মাহমুদ। ক্যাচ দিয়ে জীবন পাওয়া আরেক ওপেনার সাদমান ৭ ও মোমিনুল শূন্যতে অপরাজিত থেকে দিন শেষ করেছেন। ১৪ রানে ২ উইকেট নিয়েছেন অশ্বিন।
স্কোর কার্ড: (চতুর্থ দিন শেষে)
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস: ২৩৩/১০, ৭৪.২ ওভার (মোমিনুল ১০৭, শান্ত ৩১, বুমরাহ ৩/৫০)।
ভারত প্রথম ইনিংস : ২৮৫/৯ ডি, ৩৪.৪ ওভার (জয়সওয়াল ৭২, রাহুল ৬৮, মিরাজ ৪/৪১, সাকিব ৪/৭৮)।
বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংস : ২৬/২, ১১ ওভার (জাকির ১০, সাদমান ৭*, অশ্বিন ২/১৪)।