দাবাড়ু নীড়কে নিয়ে মায়ের যে আক্ষেপ

সাফল্যের রথে ছুটে দাবাড়ু মনন রেজা নীড় মাত্র ১৪ বছর বয়সে আন্তর্জাতিক মাস্টারের (আইম) খেতাব অর্জন করেছেন। বাংলাদেশের দাবাড়ুদের মধ্যে সবচেয়ে কম বয়সে এই কীর্তি গড়েছেন তিনি। নীড় এই রেকর্ড গড়ার পথে পেছনে ফেলেছেন কিংবদন্তি নিয়াজ মোর্শেদকে। অথচ নীড়ের এমন সাফল্যে তার মা মৌমন রেজার অনুভূতিটা মিশ্র।

ছেলের সাফল্যে মা হিসেবে তার মনে খুশি আছে ঠিক। কিন্তু উল্টো পিঠে আক্ষেপও কম নেই। এই আক্ষেপ এগিয়ে চলার পথে নীড়কে প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে না পারার।

দ্য মিরর এশিয়ার সঙ্গে আলাপে নীড়ের মা মৌমন রেজা যেমন বলছিলেন, ‘ওকে তো যোগ্য সাপোর্টটাই আমরা কেউ দিতে পারি না। আজ পর্যন্ত কখনোই আমি ওকে ব্যক্তিগত কোচ রেখে লম্বা সময় ট্রেনিং করাতে পারিনি। এটা আমার ব্যর্থতা।’

খুব অল্প বয়সেই দাবায় হাতে খড়ি হয়েছিল নীড়ের। ২০১৭ সালে প্রথমবার জুনিয়র জাতীয় দাবা প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া তার। ওই বছরই ক্যান্ডিডেট মাস্টার ও ২০২৩ সালে ফিদে মাস্টার খেতাব অর্জন করেন নীড়। সম্প্রতি হাঙ্গেরির একটি প্রতিযোগিতায় অর্জন করেছেন আন্তর্জাতিক মাস্টারের খেতাব।

এই কিছু দিন আগে ১৪ বছর বয়সে জাতীয় দাবায় চ্যাম্পিয়নের কৃতিত্বও দেখান নীড়। তবে সবচেয়ে কম বয়সে বাংলাদেশের জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার রেকর্ডটা ছোঁয়া হয়নি তার। সেই রেকর্ড থেকে গিয়েছিল কিংবদন্তি নিয়াজ মোর্শেদের দখলেই (১৩ বছর বয়সে)। সেই নিয়াজ মোর্শেদকেই এবার অন্য আরেক কীর্তিতে ঠিকই পেছনে ফেলেছেন নীড়।

দেশের প্রথম গ্র্যান্ডমাস্টার নিয়াজ মোর্শেদ আন্তর্জাতিক মাস্টার হয়েছিলেন ১৯৮১ সালে। এ সময় তার বয়স ছিল ১৫ বছর ৫ মাস। নীড় যখন আন্তর্জাতিক মাস্টার হলেন, তখন তার বয়স ১৪ বছর ৩ মাস।

হাঙ্গেরির বুদাপেস্টে সিক্স ডেইজ বুদাপেস্ট টু ইয়ারস-২০২৪ গ্র্যান্ডমাস্টার ‘এ’ প্রতিযোগিতার অষ্টম রাউন্ডে ভারতের আন্তর্জাতিক মাস্টার সাম্বিত পান্ডাকে হারানোর মধ্য দিয়ে নীড় আন্তর্জাতিক মাস্টারের জন্য প্রয়োজনীয় তৃতীয় নর্মটি অর্জন করেন।

একই প্রতিযোগিতার নবম ও শেষ রাউন্ডে তার প্রথম জিএম নর্ম (গ্র্যান্ডমাস্টার নর্ম) অর্জনেরও সুযোগ ছিল। কিন্তু হাঙ্গেরির ফিদে মাস্টার পাস্তর বালাসের সাথে ম্যাচটা ড্র করায় জিম নর্ম হাতছাড়া হয় তার। তবে এই প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন তিনি।

নীড় যেভাবে এগিয়ে চলেছেন, তাতে দেশের ষষ্ঠ গ্র্যান্ডমাস্টার হিসেবে তাকে দেখতে চাওয়াটা মোটেও দোষের কিছু নয়। কিন্তু নীড়ের মা সাহস পান না। ছেলের এত দূর উঠে আসায় তার অবদানটা অনেক বেশি। সেই তিনিই কি না বলছেন, ‘এখন পর্যন্ত ও যতদূর এগিয়েছে সবটা নিজের চেষ্টায়। জিএম খুব অল্প সময়ে সম্ভব, কিন্তু এর জন্য ওকে কমপক্ষে ৬ মাস প্রোপার ট্রেনিংয়ের মধ্যে রাখতে হবে। লম্বা সময় ট্রেনিং পেলে ও নিশ্চয়ই দ্রুতই জিএম হবে। কিন্তু এটা তো করতে পারি না।’

কঠিন বাস্তবতার কথা তুলে ধরে মৌমন রেজা বলেন, ‘অর্থের কারণে শুধু নীড় না, আমাদের সব দাবাড়ুরাই বেশি বেশি টুর্নামেন্ট খেলতে পারে না। হাঙ্গেরির এই টুর্নামেন্টেই নীড় খেলতে পারবে কি না, আমি দ্বিধায় ছিলাম এ নিয়ে। কারণ স্পন্সর জোগাড় করতে পারছিলাম না। শেষ পর্যন্ত মডেল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুদুজ্জামান সাহেব এবং নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাহমুদুল হক সাহেবের সহায়তায় নীড় এই টুর্নামেন্ট খেলতে পেরেছে।’

এটাই হচ্ছে বাংলাদেশের সকল দাবাড়ু কিংবা বেশিরভাগ খেলোয়াড়ের জীবনের বাস্তবতা।