নাদালের শেষের শুরু আজ, ফেদেরারের আবেগঘন চিঠি
ডেভিস কাপ দিয়ে পেশাদার টেনিস ক্যারিয়ারকে বিদায় জানাবেন রাফায়েল নাদাল। ২২ গ্র্যান্ড স্লাম ও অলিম্পিক সোনাজয়ী এই টেনিস কিংবদন্তি নিজ দেশের কোর্টেই র্যাকেট তুলে রাখবেন।
নাদালের দীর্ঘ পথচলার শেষের শুরুটা হচ্ছে আজ। বুধবার (১৯ নভেম্বর) মালাগায় ডেভিস কাপের ডাবলস কোয়ার্টার ফাইনালে ১৯ নভেম্বর রাতে স্পেনের প্রতিপক্ষ নেদারল্যান্ডস।
২০১৯ সালের পর স্পেন আর ডেভিস কাপ জিততে পারেনি। এবার স্পেনের বড় ভরসা নাদাল, তরুণ আলকারাজ ও মার্সেল গ্রনোলারস। দেশের হয়ে চার বার ডেভিস কাপ জিতেছেন নাদাল। আজকের ম্যাচে ৩৮ বর্ষী কিংবদন্তির কোর্টে নামা অবশ্য নিশ্চিত নয়। গত জুলাইয়ে অলিম্পিকে দ্বিতীয় রাউন্ড থেকে বাদ পড়ার পর তিনি আর প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ খেলেননি।
ম্যাচের আগে নাদালের অন্যতম প্রতিপক্ষ রজার ফেদেরার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আবেগঘন এক খোলা চিঠি লিখেছেন। তাতে লেখা রয়েছে, ‘ভামোস রাফায়েল নাদাল। এবার তোমার টেনিসের পড়াশোনা শেষ হতে চলল। আবেগপ্রবণ হয়ে যাওয়ার আগে কয়েকটা কথা সেরে রাখি। শুরুটা করা যাক, দুজনের লড়াই থেকেই। তুমি আমাকে প্রচুর ম্যাচে হারিয়েছ। আমিও তোমাকে এত হারাতে পারিনি। যেভাবে তুমি আমাকে প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে ফেলেছ, তার আশেপাশে কেউ ছিল না। বিশেষ করে ক্লে কোর্টে খেলতে নামলে মনে হতো, তোমার ডেরায় ঢুকলাম। তোমার জন্য আমাকে খেলা নিয়ে ভাবনাচিন্তা বদলাতে হয়েছে। এমনকী ভাবতাম, যদি র্যাকেটটা আরো বড় করে তোমার বিপক্ষে জেতা যায়। তোমার জন্যই টেনিসকে সব থেকে বেশি উপভোগ করেছি।’
ফেদেরারের লেখায় নাদালের সঙ্গে তার প্রথম ম্যাচের স্মৃতি তুলে ধরেন। কীভাবে তৎকালীন এক নম্বর র্যাংকিংয়ে থাকা খেলোয়াড়কে স্প্যানিশ তারকা মায়ামিতে অনায়াসে হারিয়েছিলেন, সেই প্রসঙ্গও উঠে আসে।
‘তোমার সম্পর্কে (ম্যাচের আগে) আমি অনেক কিছু শুনেছিলাম, যে মায়াকো থেকে একজন জেনারশনাল প্রতিভা উঠে আসছে। সে হয়তো কোনোদিন মেজর (ট্রফি) জিততে পারে। সেটা একবারেই ভুল ছিল না। আমরা তখন দুজনেই নিজেদের ক্যারিয়ারের শুরুতে ছিলাম এবং এই সফরটা একসঙ্গেই করেছি। ২০ বছর পর বলতেই হবে রাফা, তোমার সফরটা সত্যিই কী দারুণ ছিল। তুমি স্পেনের নাম উজ্জ্বল করেছ। তুমি গোটা টেনিসবিশ্বকে গৌরবান্বিত করেছ।’
৬০০ শব্দের আবেগঘন চিঠিতে ফেদেরার আরো লিখেছেন, ‘১৪ বার ফ্রেঞ্চ ওপেন জয়। আমি একসঙ্গে ভাগ করে নেওয়া স্মৃতিগুলোর কথা ভাবি। একসঙ্গে খেলার দিনগুলো। কেপটাউনে ৫০,০০০ সমর্থকের সামনে খেলা। ২০১৬ সালে মালোরকায় রাফা নাদাল অ্যাকাডেমির উন্মোচনে আমাকে আমন্ত্রণ জানার জন্য তোমার কাছে কৃতজ্ঞ। বিশ্বের বাচ্চাদের কাছে তুমি আদর্শ। আমাদের ছেলেমেয়েরা তোমার অ্যাকাডেমিতে ট্রেনিংয়ের সুযোগ পাওয়ায় আমি এবং আমার স্ত্রী মিরকা খুশি। ওরা ওখান থেকে অনেক কিছু শিখেছে। অবশ্য আমি সবসময় একটা ভয়ে থাকতাম। ভাবতাম আমার বাচ্চারাও হয়তো বাঁহাতি হয়ে যাবে।’
রজার ফেদেরার যখন টেনিস থেকে বিদায় নিয়েছিলেন, তখন লেভার কাপে রাফায়েল নাদালের সঙ্গে জুটি বেঁধেছিলেন । এবার নাদালের বিদায় নেয়ার সময় হয়েছে। সেই প্রসঙ্গটাও ফেদেরারের চিঠিতে উঠে এসেছে।
‘২০২২ সালে লন্ডন লেভার কাপের উল্লেখ করতেই হবে। আমার শেষ ম্যাচ। সেখানে আমি তোমাকে পাশে পেয়েছি। আমার প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে নয়, ডাবলস পার্টনার হিসেবে। সেদিন তোমার সঙ্গে কোর্ট ভাগ করে নেয়া, তারপর চোখের জলে ভেসে যাওয়া আমার জ্যারিয়ারের অন্যতম সেরা মুহূর্তগুলোর মধ্যে জায়গা পাবে। জানি তোমার মহাকাব্যিক ক্যারিয়ারের শেষপর্বে তুমি দৃষ্টি রাখছ। শেষ হলে আমরা কথা বলবো।’
‘বর্তমানে আমি তোমার পরিবার এবং দলকে অভিনন্দন জানাতে চাই। যারা তোমার সাফল্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে। আমি তোমাকে জানাতে চাই, তোমার পুরোনো বন্ধু সবসময় তোমার পাশে আছে। এরপর তুমি যা করবে, তাতেও পাশে পাবে। একজন ভক্ত হিসেবে তোমার ভালো চাই।’
কোর্টে সবসময় তুমুল লড়াই হয়েছে দুজনের মধ্যে। খেলার বাইরে বন্ধুত্ব, পারস্পরিক শ্রদ্ধা, ভালোবাসাটা কখনোই কম ছিল না। রাফায়েল নাদালকে লেখা এই দীর্ঘ চিঠিতে ফেদেরার যেন নিজের অজান্তেই হয়তো সেই প্রমাণটা দিলেন।