রাদারফোর্ডের ঝড়ো সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশকে হারাল উইন্ডিজ

শেরফানে রাদারফোর্ডের বিধ্বংসী সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশের বিপক্ষে জয় তুলে নিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ক্যারিবীয়রা টাইগারদের বিপক্ষে গত ছয় বছরে টানা ১১ ওয়ানডে হারের পর এই প্রথম জয়ের দেখা পেল।

বাংলাদেশ সময় রবিবার (৮ ডিসেম্বর) রাতে তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে ২৯৫ রানের লক্ষ্য তাড়া করে ৫ উইকেটে জয় পায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরির স্বাদ নিয়ে ৮০ বলে ১১৩ রান করেন রাদারফোর্ড।  

সেন্ট কিটসের ওয়ার্নার পার্কে টস জিতে  ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন সফরকারী বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ। ওপেনার তানজিদ হাসান তামিম ও অধিনায়ক মিরাজ তৃতীয় উইকেটে দলকে ভালো ভিত এনে দেন। চতুর্থ উইকেট জুটিতে আফিফ হোসনকে নিয়ে আরও একটি ভালো জুটি গড়েন মিরাজ। আর শেষের দিকে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও জাকের আলি গড়েন সেঞ্চুরি ছোঁয়া জুটি। এই তিন জুটির সুবাদে বাংলাদেশ পেয়ে যায় ৬ উইকেটে ২৯৪ রানের পুঁজি।

বাংলাদেশের ইনিংসে ফিফটি ছোঁয়া ইনিংস তিনটি। মেহেদী হাসান মিরাজ সর্বোচ্চ ৭৪ রান করেছেন। ১০১ বলে ১ ছক্কা ও ৬ চারে নিজের ইনিংস সাজিয়েছেন তিনি। তানজিদ ৬০ বলে ৬০, জাকের আলি ৪০ বলে ৪৮, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ৪৪ বলে অপরাজিত ৫০ রান করেন।

মাহমুদউল্লাহ ও জাকের দুজনই তিনটি করে ছক্কা ও চার হাঁকিয়েছেন। তানজিদের ইনিংসে ছিল ৬টি চার ও ৩টি ছক্কা। ক‍্যারিবিয়ানদের পক্ষে সেরা বোলার রোমারিও শেফার্ড। ৫১ রানে ৩ উইকেট নিয়েছেন তিনি।

২৯৫ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে নবম ওভারের মধ্যে দুই ওপেনারকে হারায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। অষ্টম ওভারে ব্র্যান্ডন কিংকে ৯ রানে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন পেসার তানজিম হাসান সাকিব। পরের ওভারের প্রথম বলেই আরেক ওপেনার এভিন লুইসকে ১৬ রানে লেগ বিফোরে সাজঘরে পাঠান নাহিদ রানা।

২৭ রানে ২ উইকেট পতনের পর ৬৭ রানের জুটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে লড়াইয়ে ফেরান কেসি কার্টি ও অধিনায়ক শাই হোপ। ২টি চারে ২১ রান করার পর কার্টিকে শিকার করেন স্পিনার রিশাদ হোসেন।

দলীয় ৯৪ রানে কার্টি ফেরার পর রাদারফোর্ডকে নিয়ে বাংলাদেশ বোলারদের সামনে প্রতিরোধ গড়ে তুলেন হোপ। ৬২ বলে হাফ-সেঞ্চুরির জুটি পূর্ণ করেন তারা। আর ৬০ বলে ওয়ানডেতে হোপ ২৬তম এবং ৪৭ বলে ষষ্ঠ অর্ধশতক করেন রাদারফোর্ড।  

৩৮তম ওভারের প্রথম বলে হোপ-রাদারফোর্ডের জমে যাওয়া জুটি ভাঙেন মিরাজ। ছক্কা মারার চেষ্টায় ডিপ মিড উইকেটে জাকেরকে ক্যাচ দেন হোপ। ৩টি চার ও ৪টি ছক্কায় ৮৮ বলে ৮৬ রান করেন ক্যারিবীয় অধিনায়ক। রাদারফোর্ডের সাথে ৯৩ বলে ৯৯ রানের জুটি গড়েন হোপ।  

তৃতীয় ব্যাটার হিসেবে হোপ যখন ফিরেন তখন দলের রান ১৯৩। এসময় ৭৭ বলে ১০২ রান দরকার ছিলো ওয়েস্ট ইন্ডিজের। এরপর জাস্টিন গ্রেভসকে নিয়ে বাংলাদেশ বোলারদের উপর চড়াও হন রাদার্রফোর্ড। তানজিমের করা ৪১তম ওভারে ১৩ রান, মিরাজের ৪২তম ওভারে ১০ ও তাসকিনের ৪৩তম ওভারে পরপর দুই ছক্কায় ১৫ রান তুলে ম্যাচের লাগামটা হাতের নাগালে নেন তারা।

পেসার সৌম্যর করা ৪৭তম ওভারের প্রথম বলে ক্যারিয়ারের দশম ওয়ানডেতে এসে প্রথম সেঞ্চুরির দেখা পান রাদারফোর্ড। এজন্য ৭৭ বল খেলেছেন তিনি। ৭টি চার ও ৮টি ছক্কায় ৮০ বলে ১১৩ রান করেন রাদারফোর্ড। তার বিদায়ের সময় জয় থেকে ৭ রান দূরে ছিলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ১৪ বল বাকি রেখে ৪৮তম ওভারের চতুর্থ বলে দলের জয় নিশ্চিত করেন গ্রেভস ও রোস্টান চেজ। ৫টি চারে ৩১ বলে গ্রেভস ৪১ ও চেজ ২ রানে অপরাজিত থাকেন।

পঞ্চম উইকেটে রাদারফোর্ড ও গ্রেভস ৭৪ বলে ৯৬ রানের জুটিতে সেন্ট কিটসের ওয়ার্নার পার্কে সর্বোচ্চ রান তাড়া করে ম্যাচ জয়ের রেকর্ড গড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এর আগে ২০১৬ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ২৬৫ রান তাড়া করে জিতছিল ক্যারিবীয়রা।

তানজিম-রানা-রিশাদ-মিরাজ ও সৌম্য ১টি করে উইকেট নেন। ম্যাচ সেরা হয়েছেন রাদারফোর্ড।  

১-০ ব্যবধানে পিছিয়ে থেকে আগামীকাল একই ভেন্যুতে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ।