লিটনকে বিরতিতে পাঠানোর চিন্তায় বিসিবি
ওয়ানডে ফরম্যাটে সর্বশেষ ৭ ইনিংসেই দুই অংকের ঘরে যেতে পারেননি লিটন দাস। সংখ্যাগুলোতে চোখ বুলালে চমকেই যেতে হবে ( ৬, ১, ০, ০, ২, ৪, ০)! অর্থাৎ শেষ সাত ইনিংসে তার মোট রান ১৩। বাংলাদেশের এই উইকেটরক্ষক ব্যাটারের টি-২০ ফরম্যাটেও দুরাবস্থা কাটছে না। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ম্যাচে আকিল হোসেনের বলে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে গোল্ডেন ডাক মেরেছেন।
লিটনের বর্তমান পারফরম্যান্স এতটাই শোচনীয় যে, দরকার হলে সাময়িক বিরতির ডানহাতি ব্যাটারকে দেওয়ার কথা ভাবতে পারে বিসিবি। এমনটিই জানিয়েছেন জাতীয় দলের প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন লিপু।
মিরপুর শের-ই বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) বিজয় দিবসের প্রদর্শনী ম্যাচ মাঠে গড়িয়েছিল। খেলা শেষে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে লিপু কথা বলেন। শ্রীলংকার বিপক্ষে চলতি বছরের মার্চে প্রথম দুই ওয়ানডেতেই তিনি রানের খাতা খোলেননি। তৃতীয় ম্যাচে তাই বাদ পড়েন। সেই প্রসঙ্গটি প্রধান নির্বাচক স্মরণ করিয়ে দেন।
‘দেখুন, আমরাও বুঝতে পারছি লিটন দাসের কাছ থেকে দল যা আশা করে..সে মানসম্পন্ন ব্যাটার। সাদা বলে সে মোটেই ধারাবাহিক না। এজন্য কিন্তু টুর্নামেন্ট (সিরিজ) নির্ধারণী ম্যাচেও কিন্তু তাকে দলের বাইরে রেখেছিলাম।’
এই মুহূর্তে সে টি-২০ সংস্করণে আমাদের অধিনায়ক, একটা সিরিজ চলছে। আমার মনে হয় এত বিস্তারিতভাবে কথা বলার জন্য এটা আদর্শ সময় না। তবে এতটুকু বলতে পারি আমরাও খানিকটা চিন্তিত, সে যেভাবে আউট হচ্ছে। অদূর ভবিষ্যতে সেখানে যদি কোন মেরামতের প্রয়োজন হয়, মেরামতের জন্য কোচরা আছেন। সাময়িক বিরতির যদি প্রয়োজন হয় সেটার জন্য কোচরা আছেন। অথবা আগামীতে আরো দুটি খেলা আছে সেখানে যদি সে ফেরত আসতে পারে, তাহলে আমরা স্বাগত জানাবো।’
একদিনের ক্রিকেটে যাচ্ছেতাই পারফরম্যান্সের পর লিটনের টি-২০তে অধিনায়কত্ব পাওয়া নিয়ে চলছে সমালোচনা। যদিও তার নেতৃত্বে ক্যারিবীয়দের সঙ্গে সিরিজের প্রথম ম্যাচে জিতেছে বাংলাদেশ।
এ প্রসঙ্গে লিপুর ভাষ্য, ‘আমি মনে করি স্বল্পমেয়াদী একটা হিসেব করেই হয়ত বোর্ড সমাধান করার চেষ্টা করেছে। কারণ বোর্ডের হাতেও যে অনেক অপশন ছিল ,সেই অবস্থায় বোর্ড ছিল না। অনেক খেলোয়াড়ই ইনজুরিতে। ইতিবাচক দিক যেটা দেখি একজন ব্যাটার যখন ফর্মে থাকে না সেটা যখন সে চালিয়ে যাচ্ছেন। নতুন দায়িত্ব পাওয়ার পরও তখন তার দল তাকে যে সমর্থনটা করেছে একজন বিজয়ী দলের অধিনায়ক হিসেবে দিনশেষে। আমার মনে হয় সেটা হয়ত তাকে অনুপ্রাণিত করবে। অধিনায়কের জন্য দল দারুণ কাজ করেছে।’
লিটনকে অধিনায়ক হিসেবে বেছে নেয়ার ক্ষেত্রে নির্বাচকদের মতামত ছিল কিনা এমন প্রশ্ন লিপুর কাছে রাখা হয়েছিল। তার উত্তর, ‘আমাদের যে দায়-দায়িত্ব আছে জাতীয় দল নির্বাচনটা আমাদের এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে। জাতীয় দলের জন্য অধিনায়ক কাকে বিবেচনা করা হবে এটা সম্পূর্ণরূপে বাংলাদেশ বোর্ডের এখতিয়ার।’
সেটা স্বল্পকালীন সময়ের জন্য হবে নাকি দীর্ঘকালীন সময়ের জন্য হবে, আমার মনে হয় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড সেটা অবস্থার প্রেক্ষিতে নির্ধারণ করে। এবারো তাই করা হয়েছে। আমি জয়েন করার পরে আমাদের কাছ থেকে শুধু ‘এ’ দল, হাই পারফরম্যান্স দলের জন্য অধিনায়ক, সহ-অধিনায়ক রিকোমেন্ডেশনটা চাওয়া হতো। জাতীয় দলের জন্য আমি যোগ দেয়ার পর থেকে বলতে পারি, কখনো কোনো রিকোমেন্ডেশন চাওয়া হয়নি।’
এক বছর আগে থেকে আরম্ভ হয়েছে লিটনের এমন রানখরা। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে স্যাক্সটন ওভালে মাত্র ৬ রানে সাজঘরে ফেরেন। একই প্রতিপক্ষের সঙ্গে পরের ম্যাচে এক রানেই তুষ্ট থাকেন! এরপর শ্রীলংকার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে ব্যর্থ হন।
এবার ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে প্রথম দুই ওয়ানডেতে ৪ ও ২ রানের বেশি করতে পারেননি। শেষ ওয়ানডেতে ডাক মেরে ড্রেসিং রুমের পথ ধরেন। ক্লাসিক ব্যাটিং স্টাইলের কারণে অনেকেই তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হলেও কখনোই হতে পারেননি ধারাবাহিক।