কষ্টের জয়ে শীর্ষেই রইল বার্সেলোনা
বার্সেলোনার অলিম্পিক স্টেডিয়ামে প্রথম লেগে জমাট রক্ষণের যে কৌশল দিয়ে দলটিকে হারিয়েছিল লাস পালমাস, সেই একই কৌশলে দ্বিতীয় লেগেও তাদের আটকে রাখার চেষ্টা করে দলটি। তবে বার্সার মাঠে পারলেও নিজেদের মাঠে আর কাতালানদের সঙ্গে পেরে উঠল না তারা। ফলে জিততে ঘাম ছুটে গেলেও জয়ের স্বস্তি নিয়েই ঘরে ফিরেছে বার্সেলোনা।
কানারি দ্বীপের গ্রান কানারি স্টেডিয়ামে লা লিগার ২৫তম রাউন্ডের ম্যাচটি ২-০ গোলে জিতেছে হান্সি ফ্লিকের দল।
ম্যাচের ৬২তম মিনিটে বার্সেলোনাকে প্রথম এগিয়ে নেন দানি অলমো। এরপর যোগ করা সময়ের পঞ্চম মিনিটে দ্বিতীয় গোলটি করে লাস পালমাসের কফিনে শেষ পেরেকটি ঠুকে দেন ফেররান তোরেস। মজার বিষয় হচ্ছে, দুই গোলদাতাই বদলি হিসেবে মাঠ নেমে বাজিমাত করেছেন।
এদিন ম্যাচের প্রথমার্ধে বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেও স্বাগতিকদের রক্ষণে চিড় ধরাতে ব্যর্থ হন বার্সেলোনার খেলোয়াড়রা। অবশ্য সুযোগ যে একেবারে আসেনি তা নয়, তবে দুটি পরিষ্কার গোলের সুযোগ নষ্ট করে স্কোরবোর্ডে কোনো পরিবর্তন না এনেই বিরতিতে যায় বার্সেলোনা।
প্রথমার্ধে গেম ডেভেলপমেন্টে তেমন গতি ও মাঝমাঠ তেমন ধারালো পারফরম্যান্স করতে না পারায় ফলস নাইন পজিশনে খেলা ফেরমিন লোপেসকে রেখে দানি অলমোকে নামিয়ে দ্বিতীয়ার্ধ শুরু করেন ফ্লিক।
খেলা শুরুর পর থেকেই দেখা যায় অলমোর প্রভাব। দুর্দান্ত সব পাস দিয়ে লাস পালমাসের রক্ষণে ভীতি ছড়াতে থাকেন তিনি। ফলে দলটির ডিফেন্ডাররাও কিছুটা মনোযাগ হারায়। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ৬২তম মিনিটে লাস পালমাসের ডেডলক ভাঙেন অলেমো নিজেই।
এ সময় লামিন ইয়ামাল ও অলমোর দারুণ যুগলবন্দী দেখে সমর্থকরা, যার পরিণতিতে কাঙ্ক্ষিত গোল পেয়ে যায় সফরকারীরা।
বল ধরে বেশ খানিকটা এগিয়ে গিয়ে বক্সের বেশ বাইরে থাকা অবস্থায় বিপরীত পাশে থাকা লামিনকে পাস দিয়ে বক্সের ভেতরে এগিয়ে যান অলমো। বল পেয়ে প্রতিপক্ষের দুই খেলোয়াড়কে ড্রিবল করে অলমোর উদ্দেশে বক্সের ভেতর থ্রু বল বাড়ান লামিন। এরপর তা ধরে পেনাল্টি স্পটের কাছ থেকে উড়ন্ত শট নেন অলমো, আর বল ক্রসবারে লেগে গোলের ভেতরে আছড়ে পড়ে।
এরপর ৬৮তম মিনিটে রাফিনিয়ার গোলমুখে বাড়ানো শট লক্ষ্যে রাখতে ব্যর্থ হন লামিন। মূলত গোল খেয়ে লাস পালমাস সমতায় ফেরার চেষ্টা শুরু করলে তাদের জমাট রক্ষণ স্বাভাবিকভাবেই কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়ে, আর তার সুযোগ নিয়ে একের পর এক আক্রমণে উঠে ব্যবধান বাড়ানোর চেষ্টা করতে থাকে বার্সেলোনা।
এরই ধারাবাহিকতায় দুই মিনিট পর গোলমুখে থাকা লেভানডোভস্কিকে দুর্দান্ত এক ক্রস দেন লামিন। তাতে হেড দিলেও শটটি ঠেকিয়ে দেন লাস পালমাস গোলরক্ষক। তার তিন মিনিট পর আরও একবার প্রতিপক্ষের বক্সের মধ্যে বল পেয়ে তা উড়িয়ে মারেন লেভা।
৮০তম মিনিট পড়তেই পেনাল্টির জন্য জোর আবেদন করে লাস পালমাসের খেলোয়াড়রা। মূলত তাদের এক খোলোয়াড়ের গোলের উদ্দেশে নেওয়া শট বার্সা ডিফেন্ডার এরিক গার্সিয়ার হাতে লাগলে এই দাবি জানায় তারা। তবে রিপ্লেতে দেখা যায়, বল গার্সিয়ার হাতে লাগার আগেই ক্রসটি যখন আসে, তখন অফসাইডে ছিলেন পালমাসের ওই খেলোয়াড়। এরপর টাচলাইন মনিটরে রিভিউ দেখে তাদের সেই আবেদন নাকচ করে দেন রেফারি।
নির্ধারিত সময় শেষ হলে অতিরিক্ত আট মিনিট খেলার সুযোগ দেওয়া হয়। এ সময় বার্সাকে চেপে ধরে লাস পালমাস। তবে সফলতার সঙ্গে তাদের সেসব আক্রমণগুলো প্রতিহত করে জাল অক্ষত রাখে ফ্লিকের শিষ্যরা।
উল্টো ৯৫তম মিনিটের শেষ মুহূর্তে দ্বিতীয় গোল খেয়ে সমতায় ফেরার সব আশা শেষ হয়ে যায় স্বাগতিকদের।
ফ্রেঙ্কি ডি ইয়ংয়ের কাছ থেকে হঠাৎ গোলমুখে পাস পেলেও এক ডিফেন্ডারের চ্যালেঞ্জে তা ধরতে ব্যর্থ হন লেভা, তবে তাকেও লেভা চাপে রাখায় বক্সের ঠিক বাইরে থেকে বড় কেড়ে নেন রাফিনিয়া। এরপর লাস পালমাসের উন্মুক্ত গোলমুখে বল বাড়ালে সেখানে একপ্রকার ফাঁকায় থাকা ফেররান তোরেস বল ধরে জায়গা করে নিয়েই বুলেট শটে লক্ষ্যভেদ করেন।
পরে অবশ্য আরও কয়েকবার চেষ্টা করে দুই দল, তবে আর গোল না হওয়ায় ২-০ গোলের স্বস্তির জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে বার্সেলোনা।
এই জয়ে ৫৪ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষেই রইল কাতালানরা। দিনের অপর ম্যাচে ভালেন্সিয়ার মাঠে ৩-০ গোলের জয় পেয়েছে আতলেতিকো মাদ্রিদ। ফলে বার্সেলোনার সমান ২৫ ম্যাচ খেলে এক পয়েন্ট কম নিয়ে দুইয়ে রয়েছে তারা।
এক ম্যাচ কম খেলা রিয়াল মাদ্রিদের পয়েন্ট ৫১। রবিবার রাত সোয়া ৯টায় (বাংলাদেশ সময়) জিরোনাকে আতিথ্য দেবে মাদ্রিদ জায়ান্টরা। ম্যাচটি জিতলে বার্সেলোনার সমান পয়েন্ট নিয়েও গোল ব্যবধানে পিছিয়ে থেকে আবারও দুইয়ে উঠবে কার্লো আনচেলত্তির শিষ্যরা। আর হারলে বা ড্র করলে তিনেই থিতু হতে হবে তাদের।