পাকিস্তানকে বিদায়ের দুয়ারে ঠেলে সেমির পথে ভারত
ম্যাচের ফল একপ্রকার নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল আগেই। শেষ পর্যন্ত বিরাট কোহলি সেঞ্চুরি করতে পারেন কিনা, তা-ই দেখার বাকি ছিল। জয়ের জন্য যখন ২ রান দরকার, শতক হাঁকাতে কোহলির দরকার তখন ৪। তবে চার মেরেই সব হিসাব-নিকাশ মিলিয়ে দিলেন তিনি।
রবিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) দুবাইয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে টস জিতে শুরুতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন পাকিস্তান অধিনায়ক মোহাম্মদ রিজওয়ান। এরপর ভারতীয় বোলারদের প্রতাপ সামলে ইনিংসের দুই বল বাকি থাকতেই ২৪১ রান তুলে গুটিয়ে যায় তাদের ইনিংস।
২৪২ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে ৬ উইকেট হাতে রেখে ২৪৪ রান করে জয়োল্লাস করে ভারত। ইনিংসের ৪৫ বল বাকি ছিল তাদের।
ভারতের এই জয়ে মূল কাজটি করেন তাদের বোলাররা। দীর্ঘ সময় উইকেট না পেলেও নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে পাকিস্তানের রানের গতি এমনভাবে তারা কমিয়ে দেন যে প্রথম ইনিংসে একেকটি বাউন্ডারি দেখতেই ৪০-৪৫ বলের মতো অপেক্ষা করতে হয়েছে দর্শকদের।
শেষের দিকে রানরেট বাড়াতে গিয়ে একের পর এক উইকেট বিলিয়ে শেষ পর্যন্ত অলআউট হওয়ার লজ্জাও বরণ করতে হয় তাদের।
অপরদিকে, ফিল্ডিং চলাকালে বোলারদের পাশাপাশি ভারতের ফিল্ডারদেরও খানিকটা কৃতিত্ব দিতে হয়। তাদের পরিশ্রমী মানসিকতার কারণেই অনেকগুলো এক পাকিস্তানি ব্যাটাররা দুইয়ে রূপ দিতে পারেননি, অনেকগুলো সম্ভাব্য চার আটকে গেছে তিনে। এরপর রান তাড়ায় নেমে নিজেদের স্বাভাবিক খেলাই উপহার দিয়েছেন ভারতীয় ব্যাটাররা।
অবশ্য শুরুর দিকে (পঞ্চম ওভারের শেষ বলে) রোহিত শর্মাকে ফিরিয়ে দিয়ে লড়াইয়ের ইঙ্গিত দিলেও সময় যত গড়িয়েছে, জয়ের পাল্লা ততই ভারতের পক্ষে ভারী হয়েছে।
৩১ রানে প্রথম উইকেট পতনের পর পাকিস্তান দ্বিতীয় উইকেটের দেখা পায় ১০০ রানের মাথায়। ৫২ বলে ৪৬ রান করা শুভমান গিল এদিন অল্পের জন্য হাফ সেঞ্চুরি বঞ্চিত হলেও কোহলির সঙ্গে দারুণ একটি জুটি গড়ে জয়ের ভিত গড়ে দিয়ে যান। এরপর শ্রেয়াস আইয়ারের সঙ্গে কোহলির ১১৪ রানের জুটিটি পাকিস্তানকে ম্যাচ থেকে ছিটকে দেয়।
৬৭ বলে ৫৬ রান করে শ্রেয়াস ফেরার অল্প সময় পর হার্দিক পান্ডিয়াও আউট হলে ভারতের তখন প্রয়োজন ৬০ বলে মাত্র ১৯ রান। এরপর শেষ মুহূর্তে সেঞ্চুরির মাধ্যমে দলকে জেতানোর পথে অনন্য এক কীর্তি গড়েন কোহলি।
এটি কোহলির ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৫১তম সেঞ্চুরি। শুধু তা-ই নয়, এই সেঞ্চুরি করার পথে শচিন টেন্ডুলকারকে টপকে ওয়ানডে ক্রিকেট দ্রুততম ১৪ হাজার রানের রেকর্ড গড়েছেন তিনি।
এদিন এই মাইলফলক থেকে ১৫ রান দূরে থেকে ব্যাটিং শুরু করেন কোহলি। এরপর ত্রয়োদশ ওভারের দ্বিতীয় বলে হারিস রউফকে চার মেরে তিনি তা স্পর্শ করেন।
১৪ হাজার রান সংগ্রহ করতে কোহলির লাগল ২৮৯ ইনিংস, ভারতের কিংবদন্তি তারকা টেন্ডুলকার ছুঁয়েছিলেন ৩৫০ ইনিংসে।
দারুণ সেঞ্চুরি করে দলকে জিতিয়ে ম্যাচসেরার পুরস্কার পেয়েছেন কোহলিই। তাছাড়া বাংলাদেশের পর পাকিস্তানের বিপক্ষে টানা দুই জয়ে সেমিফাইনালের পথে খানিকটা এগিয়ে গেল ভারত। আর টানা দুই হারে সেমির আশা শেষ হওয়ার পথে পাকিস্তানের।
আগামীকাল রাওয়ালপিন্ডিতে ‘এ’ গ্রুপের আরেক ম্যাচে মুখোমুখি হবে নিউজিল্যান্ড ও বাংলাদেশ। সেখানে বাংলাদেশ হারলে ভারত ও নিউজিল্যান্ড দুই দলই পৌঁছে যাবে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিতে, আর বিদায় ঘণ্টা বেজে যাবে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
পাকিস্তান: ২৪১/১০ (৪৯.৪ ওভার) (সৌদ শাকিল ৬২, রিজওয়ান ৪৬, খুশদিল ৩৮; কুলদীপ ৩/৪০, ২/৩১)।
ভারত: ২৪৪/৪ (৪২.৩ ওভার) (কোহলি ১০০*, শ্রেয়াস ৫৬, শুভমান ৪৬; শাহিন আফ্রিদি ২/৭৪, আবরার আহমেদ ১/২৮)।
ফলাফল: ভারত ৬ উইকেটে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: বিরাট কোহলি।