চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ভারতই চ্যাম্পিয়ন
সেই ২০০০ সালে তৎকালীন আইসিসি নক-আউট ট্রফির ফাইনালে ভারতকে চার উইকেটে হারিয়ে প্রথম এবং ওই একবারই চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল নিউজিল্যান্ড। ২৫ বছর পর আরও একবার ফাইনালের দেখায় সেই নিউজিল্যান্ডকে একই ব্যবধানে হারিয়ে প্রতিশোধ নিয়েছে ভারত।
রবিবার (৯ মার্চ) দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে কিউইদের ৪ উইকেটে হারিয়েছে রোহিত শর্মার দল।
এর ফলে টুর্নামেন্টের ইতিহাসের এক মাত্র দল হিসেবে সর্বোচ্চ তিনবার সেরাদের এই শিরোপা ঘরে তোলার গৌরব অর্জন করল ভারত।
এদিন টস জিতে শুরুতে ব্যাটিং করে ৭ উইকেট হারিয়ে ২৫১ রান সংগ্রহ করে নিউজিল্যান্ড। জবাবে ব্যাট করতে নেমে এক ওভার হাতে রেখেই জয়ের বন্দরে পৌঁছায় টিম ইন্ডিয়া।
ওপেনিংয়ে ব্যাট করতে নেমে ইনিংস-সর্বোচ্চ ৭৬ রান করে ভারতের জয়ে ভিত্তি গড়ে দেন অধিনায়ক রোহিত শর্মা। এছাড়া প্রথম ইনিংসে বোলারদের সঠিকভাবে ব্যবহার করে নিউজিল্যান্ডের ইনিংস বড় হতে না দেওয়ার পেছনেও দারুণ ভূমিকা ছিল তার নেতৃত্বের। ফলে ফাইনালের ম্যাচসেরার পুরস্কারটি তার হাতেই উঠেছে।
তিনি ছাড়াও মিডল অর্ডারে দলের হাল ধরেন শ্রেয়াস আইয়ার (৪৮) ও অক্ষর প্যাটেল (২৯)। এরপর শেষের দিকে বাকি কাজটুকু সারেন লোকেশ রাহুল (৩৪*)।
অন্যদিকে, দশ ওভার বোলিং করে একটি মেইডেনসহ মাত্র ২৬ রানের খরচায় দুই উইকেট তুলে নিলেও দলকে জেতাতে পারেননি মিচেল ব্রেসওয়েল।
কিউইদের মতো ভারতও দ্বিতীয় ইনিংসে উড়ন্ত সূচনা করে। একদিকে রোহিত শর্মা অগ্নিশর্মা হয়ে ব্যাট চালাতে থাকেন, অপর প্রান্তে তাকে সঙ্গ দিতে থাকেন শুভমান গিল। এর ধারাবাহিকতায় ৭.২তম ওভারে ছক্কা মেরে দলীয় পঞ্চাশ পার করেন রোহিত।
নবম ওভার থেকে অল-আউট স্পিন অ্যাটাকে যায় নিউজিল্যান্ড। এ কারণে ভারতের রান তোলার গতি হঠাৎ শ্লথ হয়ে যায়। ৩৫ বলে ৪৭ করা রোহিতের ফিফটির মাইলফলক ছুঁতে লেগে যায় ৪১ বল। এই টুর্নামেন্টে এটিই তার প্রথম অর্ধশতক।
উদ্বোধনী জুটি অবিচ্ছিন্ন রেখে ১৮তম ওভারের শেষ বলে দলীয় সংগ্রহ ১০০-তে নেয় ভারত। দুই ব্যাটারের ব্যাটও চলে একই ছন্দে—রোহিত ৬০ বলে ৬৮ রান ও গিল ৪২ বলে ২৭ রান।
এর ফলে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালের ইতিহাসে মাত্র তৃতীয়বারের মতো ১০০ বা তার বেশি রানের উদ্বোধনী জুটি গড়ে রেকর্ড বইয়ে ঢুকে পড়েন রোহিত-গিল। এই রেকর্ডে সবার উপরে রয়েছেন নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেই ২০০০ সালের সেই ফাইনালে শচিন টেন্ডুলকার ও সৌরভ গাঙ্গুলির করা ১৪১ রানের উদ্বোধনী জুটিটি। এরপর ২০১৭ সালের ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে ১২৮ রানের জুটি গড়েন তৎকালীন দুই পাকিস্তানি ওপেনার ফখর জামান ও আজহার আলী।
রেকর্ড বইয়ে জায়গা করে নেওয়ার প্রায় পরপরই গ্লেন ফিলিপসের উড়ন্ত ক্যাচে এই জুটি ভেঙে যায়। সেই সঙ্গে জোড়া ধাক্কা খায় ভারত।
১৯তম ওভারের চতুর্থ বলে সান্টনারের বলে গিল ড্রাইভ করলে শর্ট কভার অঞ্চল থেকে লাফিয়ে উঠে এক হাতে বল তালুবন্দী করেন ফিলিপস। ফলে দলীয় ১০৫ রানের মাথায় ৫০ বলে ৩১ রান করে ফিরতে হয় গিলকে। পরের ওভারের প্রথম বলেই নতুন ব্যাটার বিরাট কোহলিকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলে ফিরিয়ে দেন ব্রেসওয়েল।
দুই রানের ব্যাবধানে দুই উইকেট হারিয়ে চাপ তৈরি হয় ভারতের ওপর। এ সময় স্পিন দিয়ে তাদের আরও ঘায়েল করার চেষ্টা করেন কিউই অধিনায়ক সান্টনার।
কয়েক ওভার পর রোহিতকে সাজঘরে পাঠিয়ে ম্যাচে ফেরে নিউজিল্যান্ড। শুরু থেকে চড়াও হয়ে খেললেও মাঝে কিছু সময় ধরে দেখেশুনে খেলছিলেন ভারতীয় অভিনায়ক। তবে ২৭তম ওভারের প্রথম বলেই রাচিনের ওপর ফের চড়াও হতে গিয়ে খানিকটা এগিয়ে এসেছিলেন তিনি, আর বল-ব্যাটের সংযোগ ঘটাতে ব্যর্থ হওয়ায় পেছন থেকে স্ট্যাম্প গুঁড়িয়ে দেন ল্যাথাম। ৮৩ বলে ৭৬ রান করে রোহিত যখন ফিরে যান, তখন তার দলের সংগ্রহ ৩ উইকেটে ১২২ রান।
এরপর ধীর লয়ে খেলে ভারতের জয়ের ভিত আরও মজবুত করে দেন শ্রেয়াস আইয়ার ও অক্ষর প্যাটেল। ৭৫ বলে ৬১ রানের জুটি গড়ে দলীয় ১৮৩ রানের মাথায় বিদায় নেন শ্রেয়াস। ফেরার আগে হাফ সেঞ্চুরি-বঞ্চিত হলেও তার ৬২ বলে ৪৮ রানের ইনিংসটি ছিল ভারতের জন্য সময়োপযোগী।
এরপর দলীয় সংগ্রহ ২০০ পার করে আউট হয়ে যান অক্ষরও। ৪০ বল মোকাবিলা করে তিনি করেন ২৯ রান।
আবারও স্বল্প সময়ের ব্যবধানে দুই উইকেট তুলে নিয়ে আরও একবার ম্যাচে ফেরার ইঙ্গিত দেয় নিউজিল্যান্ড। তবে তাদের সেই ইঙ্গিত সেখানেই সীমাবদ্ধ করে রাখেন রাহুল ও হার্দিক পান্ডিয়া। অবশ্য জয়ের সুবাস পাওয়ার মাঝেই হার্দিক ১৮ বলে ১৮ রান করে বিদায় নিলে জাদেজাকে নিয়ে লক্ষ্য পার করেন ৩৪ রানে অরাজিত থাকা রাহুল।
৪৯তম ওভারের শেষ বলে দারুণ একটি চার মেরে ব্যাট উঁচিয়ে ধরেন জাদেজা। সঙ্গে সঙ্গেই ডাগআউট থেকে তার সতীর্থরা ছুটে এসে তাকে জড়িয়ে ধরেন। আর এক যুগ পর ফের চ্যাম্পিয়নদের চ্যাম্পিয়ন হয়ে শিরোপা উঁচিয়ে ধরে ভারত।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
নিউজিল্যান্ড: ২৫১/৭ (মিচেল ৬৩, ব্রেসওয়েল ৫৩*, রাচিন ৩৭; কুলদীপ ২/৪০, বরুণ ২/৪৫)।
ভারত: ২৫৪/৬ (৪৯ ওভার) (রোহিত ৭৬, শ্রেয়াস ৪৮, রাহুল ৩৮*; ব্রেসওয়েল ২/২৮, সান্টনার ২/৪৬)।
ফলাফল: ভারত চার উইকেটে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ফাইনাল: রোহিত শর্মা।
ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট: রাচিন রবীন্দ্র।