হুমকিতে বদলে গেছে আর্চারির সাধারণ সম্পাদক!
নজিরবিহীন এক ঘটনার সাক্ষী হলো বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গন। সার্চ কমিটির প্রধানের পদত্যাগের হুমকিতে বদলে গেল জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ কর্তৃক ঘোষিত বাংলাদেশ আর্চারি ফেডারেশনের অ্যাডহক কমিটির সাধারন সম্পাদক পদ।
গত ২৭ মার্চ কাজী রাজীব উদ্দিন আহমেদ চপলকে সাধারণ সম্পাদক করে আর্চারির অ্যাডহক কমিটি ঘোষণা করেছিল জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি)। কিন্তু ক্রীড়াঙ্গনের অভিভাবক সংস্থাটি প্রজ্ঞাপন জারির পরই পদত্যাগের হুমকি দিয়ে বসেন সার্চ কমিটি আহবায়ক জোবায়েদুর রহমান রানা। তার দাবি, ক্রীড়া পরিষদ যে কমিটি ঘোষণা করেছে, সেটি তাদের নয়।
এ নিয়ে তোলপাড় হয়েছে অনেক। পরে নতুন করে আর্চারির কমিটি ঘোষণা করেছে এনএসসি। যেখানে সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে কাজী রাজীব উদ্দিন আহমেদ চপলকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তার জায়গায় তানভীর আহমেদ হন সাধারণ সম্পাদক। অবশ্য প্রজ্ঞাপনে তানভীর আহমেদকে ‘সম্পাদক’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। আর আর্চারি ফেডারেশনের প্রতিষ্ঠাতা কাজী রাজীব উদ্দিন আহমেদ চপলকে এক নম্বর সদস্য করা হয়েছে।
মূলত চপলের হাত ধরেই দেশে আর্চারির প্রচলন হয়। খুব অল্প সময়েই খেলাটি পায় দারুণ জনপ্রিয়তা ও সফলতা। বিশ্ব আর্চারি ও এশিয়ান আর্চারির বিভিন্ন পর্যায়ে এখন পর্যন্ত ৪১টি স্বর্ণ পদক, ৫০টি রৌপ্য পদক ও ৫৩টি ব্রোঞ্জ পদক অর্জন করেছে বাংলাদেশ। ২০১৯ সালে নেপালে অনুষ্ঠিত দক্ষিণ এশিয়ান গেমসে (এসএ গেমস) তো অভূতপূর্ব সাফল্য দেখান বাংলাদেশের আর্চাররা। ১০টি ইভেন্টের সবকটিতে স্বর্ণ পদক জিতে নেয় বাংলাদেশ।
এছাড়া ২০২০ ও ২০২৪ অলিম্পিকে বাংলাদেশের দুজন আর্চার সরাসরি কোয়ালিফাই করে অংশ নিয়েছেন। ২০১০ যুব অলিম্পিক ও ২০২৪ প্যারা অলিম্পিকেও বাংলাদেশের দুজন আর্চার সরাসরি কোয়ালিফাই করে খেলেছেন। আর এসব অর্জনে চপলের ছিল অগ্রণী ভূমিকা।
তাই তো চপলকে সাধারণ সম্পাদক করে এনএসসি অ্যাডহক কমিটি ঘোষণা করায় মানুষ খুব বেশি অবাক হননি। বরং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে শুরু করে ক্রীড়াঙ্গনে আলোচনা শুরু হয়, চপলকে তার সফলতার স্বীকৃতিই দেওয়া হয়েছে।
কিন্তু বেঁকে বসেন সার্চ কমিটির আহবায়ক জোবায়েদুর রহমান রানা। শুরু থেকেই যিনি ছিলেন বিতর্কিত। সরকার সার্চ কমিটি গঠনের তাকে অপসারণের দাবিতে মানববন্ধনও হয়েছে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপির) যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক এবং জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক আমিনুল হক যেমন এক মানববন্ধনে বলেছিলেন, ‘যাকে সার্চ কমিটির কনভেনর করা হয়েছে ওনার নাম রানা (জোবায়েদুর রহমান রানা)। তার বিষয়ে যে ফুটেজ, তথ্য ও গত ১৬ বছরে আওয়ামী লীগের সাথে তার যে সম্পৃক্ততা, যে পথচলা তাতে তাকে একজন বিতর্কিত লোক বলেই আমার কাছে মনে হয়েছে। এমন একজন বিতর্কিত লোককে সার্চ কমিটির কনভেনর করা সমীচীন হয়নি।’
আদতেই রানা বিতর্কের উর্ধ্বে থাকতে পারেননি। আর্চারির কমিটি ঘিরে যেমন শুধু পদত্যাগের হুমকি নয়, গণমাধ্যমে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সচিবকে আর্চারি কমিটি প্রকাশের জন্য কাঠগড়ায়ও দাঁড় করিয়েছিলেন। যদিও দায়িত্বশীল পদে থেকে তার এমন মন্তব্যের প্রেক্ষিতে ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের কোনো পদক্ষেপ এখনও দৃশ্যমান হয়নি।
এদিকে সার্চ কমিটির প্রধানের দায়িত্ব পেয়ে বিভিন্ন ক্রীড়া ফেডারেশনের অ্যাডহক কমিটিতে পতিত স্বৈরাচারের দোসরদের জায়গা করে দেওয়ার অভিযোগও আছে রানার বিরুদ্ধে। বাংলাদেশ অলিম্পক অ্যাসোসিয়েশনের আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রকৃত ক্রীড়া সংগঠকদের বাইরে রেখে মাঠ ফাঁকা করে নিজের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছেন কি না, এমন প্রশ্নও তুললেন কেউ কেউ।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান এজেন্ডা সংস্কার। অন্যান্য সেক্টরের সংস্কার কার্যক্রম প্রত্যাশানুযায়ী এগিয়ে চললেও ব্যতিক্রম ক্রীড়াঙ্গন। সার্চ কমিটির ধীরে চলো নীতির কারণেই সংস্কার গতিহীন বলে মনে করেন ক্রীড়াবোদ্ধারা।
জাতীয় ক্রীড়া পরিষদও সার্চ কমিটির কার্যক্রমে খুশি নয়। ৫৫টি ক্রীড়া ফেডারেশনের মধ্যে বাফুফে ও বিসিবি বাদে বাকিগুলোর নতুন কমিটির প্রস্তাবনা দেওয়ার কথা সার্চ কমিটির। ৭ মাস অতিক্রম হলেও অর্ধেক কমিটি গঠন করতে পারেনি জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। যে কারণে, ফেডারেশন ও অ্যাসোসিয়েশনের অনুকূলে অর্থ বরাদ্দ দিতে গিয়ে সমস্যায় পড়েছে দেশের ক্রীড়ার অভিভাবক প্রতিষ্ঠানটি।