অবশেষে ইউরোপ সেরার মুকুট পরল পিএসজি

কাড়ি কাড়ি টাকা খরচ করে একের পর এক মহাতারকা দলে ভিড়িয়ে কত চেষ্টাই না করে এসেছে প্যারিস সেন্ত জার্মেই (পিএসজি)। কিন্তু কেউই ক্লাবটির স্বপ্নপূরণের সারথী হতে পারেননি। তবে অবশেষে হ্যামেলিনের বাঁশিওয়ালার মতো এক জাদুকরী কোচের অধীনে অধরা ট্রফিটি উঁচিয়ে ধরার সুযোগ হলো পিএসজির।

শনিবার রাত জেগে যারা খেলা দেখেছেন, তার নিশ্চয়ই বুঝে গেছেন, কী বলা হচ্ছে। হ্যাঁ, অবশেষে ক্লাব প্রতিষ্ঠার প্রায় ৫৫ বছর পর উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা জিতেছে প্যারিসের দলটি।

আনহেল দি মারিয়া, এদিনসন কাভানি, নেইমার, এমবাপ্পে, মেসি—কেউই দলটিকে যা এনে দিতে পারেননি, তারুণ্যনির্ভর এক দল গড়ে অসাধারণ কৌশল আর দলীয় পারফরম্যান্সে সেই বাজিমাত করলেন কোচ লুইস এনরিকে। আর এমনভাবেই জিতেছেন, যা ইতিহাসের অংশ হয়ে গেছে।

শনিবার (৩১ মে) রাতে মিউনিখের আলিয়ান্স আরেনা স্টেডিয়ামে সিমিওনে ইনজাগির ইন্টার মিলানকে ৫-০ গোলে হারিয়েছে এনরিকের পিএসজি।

এত বড় ব্যবধানের জয় চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ইতিহাসে কেউ কখনও পায়নি। এর আগে চার গোলের ব্যবধানে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনাল জেতার রেকর্ড আছে চারটি। ১৯৬০ সালে আইনট্রাখট ফ্রাঙ্কফুর্টের বিপক্ষে রিয়াল মাদ্রিদ ৭-৩ গোলে, ১৯৭৪ সালে আতলেতিকো মাদ্রিদের বিপক্ষে বায়ার্ন মিউনিখ ৪-০ গোলে, ১৯৮৯ সালে এফসিএসবির বিপক্ষে এসি মিলান ৪-০ গোলে এবং ১৯৯৪ সালে বার্সেলোনার বিপক্ষে আবারও এসি মিলান ৪-০ গোলে জিতেছিল। তবে সেসব টপকে রেকর্ডটি এবার নিজেদের করে নিয়েছে পিএসজি।

বেশ কিছুটা নিষ্প্রভ ইন্টার মিলানকে এদিন ম্যাচের শুরুর ২০ মিনিটেই দুই গোল দিয়ে এগিয়ে যায় পিএসজি। এরপর দ্বিতীয়ার্ধে ৬৩, ৭৩ ও ৮৬তম মিনিটে বাকি তিনটি গোল হলে উৎসবে মাতে প্যারিস আর বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা দলটির সমর্থকরা।

স্বপ্নের ফাইনাল জয়ের রাতে গোল না পেলেও দুটি অ্যাসিস্ট করেছেন চলতি মৌসুমে পিএসজির জার্সিতে আলো ছড়ানো উসমান দেম্বেলে। আর দুই গোল ও একটি অ্যাসিস্টসহ মোট তিনটি গোলে অবদান রেখে ম্যাচসেরার পুরস্কার নিয়েছেন প্যারিসের দলটির ১৯ বছর বয়সী উইঙ্গার দেজিরে দুয়ে। এ ছাড়াও আশরাফ হাকিমি, কিভিচা কেভারাস্টখেলিয়া ও শেষ দিকে নামা আরেক তরুণ সেনি মায়ুলু করেছেন একটি করে গোল।

সেমিফাইনালে বার্সেলোনাকে হারিয়ে যে দাপট দেখিয়ে ফাইনালে উঠেছিল ইন্টার, তার ছিটেফোঁটাও দেখাতে পারেনি শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে। তাছাড়া তাদের সুপরিচিত শক্তিশালী রক্ষণও এদিন দেখিয়েছে হাড় জিরজিরে চেহারা। অপরদিকে, শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দুর্দান্ত পিএসজি ছিল এককথায় নির্ভুল। ফলে কাঙ্ক্ষিত জয় নিয়েই শিরোপা উল্লাসে মাতে এনরিকের শিষ্যরা।

পাশাপাশি, নিজের প্রয়াত মেয়ের স্মরণে উৎসর্গ করতে চাওয়া ম্যাচটি জিতে অনন্য উচ্চতায় উঠেছেন সাবেক বার্সেলোনা ও স্পেন জাতীয় দলের এই কোচ। ২০১১ সালে বার্সেলোনার কোচ হয়ে প্রথম ট্রেবল জিতেছিলেন তিনি। পিএসজির হয়ে এ বছর আরও একবার ট্রেবল জয়ের কীর্তি গড়লেন এই স্প্যানিশ কোচ।

পিএসজির এই জয় শুধু ক্লাবের নয়, পুরো ফ্রান্সের ফুটবলের জন্য এক গৌরবের মুহূর্ত। ১৯৯৩ সালে অলিম্পিক মার্শেইয়ের পর এই প্রথম কোনো ফরাসি ক্লাব ইউরোপ সেরার মুকুট জিতল। দীর্ঘ ৩২ বছর পর ফরাসি লিগে ফের এলো ইউরোপের সর্বোচ্চ ক্লাব ট্রফি।