গাজায় যুদ্ধ বন্ধে ইসরায়েলের নতুন প্রস্তাবে কী আছে
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় যুদ্ধ বন্ধে ইসরায়েলের নতুন প্রস্তাব মেনে নিতে হামাসের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তিনি বলেছেন, এ যুদ্ধ শেষ হওয়ার সময় এসেছে। তিন পর্যায়ের নতুন এই প্রস্তাবে গাজায় পুরোপুরি যুদ্ধবিরতি কার্যকরের সুযোগ রয়েছে। এখন সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় এসেছে। গাজায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতির এই প্রস্তাবকে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস ইতিবাচকভাবে দেখছে।
হামাস শুক্রবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, হামাস স্থায়ী যুদ্ধবিরতি এবং গাজা থেকে ইসরাইলি বাহিনীর পূর্ণ প্রত্যাহার, বাস্তুচ্যুত লোকদের তাদের বাড়িঘরে ফেরা, সত্যিকারের বন্দী বিনিময়ের যেকোনো প্রস্তাবকে ইতিবাচক ও গঠনমূলকভাবে দেখতে প্রস্তুত।
হামাসের এই মন্তব্যে সংশ্লিষ্টদের মনে স্বস্তি এনে দিয়েছে। হামাস এতো দিন অভিযোগ করে আসছিল যে যুক্তরাষ্ট্র খোলামেলাভাবে ইসরায়েলের পক্ষ নিয়ে যুদ্ধবিরতিতে বাধা দিয়ে আসছে।
যুদ্ধবিরতিতে মধ্যস্ততার কাজে জড়িত এক ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেছেন, হামাস এখন দেখছে যে ভিন্ন মনোভাব নিয়ে আলোচনায় ফেরার জন্য ইসরাইলের ওপর চাপ দেওয়ার দিকে মনোযোগ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তারা ইসরাইলকে বার্তা দিচ্ছে যে যুদ্ধবিরতি মেনে না নিলে তারা আমেরিকার সাথে সংঘাতে জড়ানোর ঝুঁকিতে পড়তে পারে।
মার্কিন এক কর্মকর্তা পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব সাড়ে চার পৃষ্ঠার। এতে যুদ্ধবিরতির শর্তগুলো বিস্তারিতভাবে দেয়া আছে।
ওই কর্মকর্তা বলেন, হামাস আগের রাতে প্রস্তাবটি পেয়েছে। তাদের সিদ্ধান্ত নিতে সময় লাগবে।
তিনি আরো বলেন, হামাস ইতোপূর্বে যেসব দাবি উত্থাপন করেছিল, এতে ছোটখাট কিছু বাদ দিয়ে সবই পূরণ করা হয়েছে।
ইসরাইলের প্রস্তাবিত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষিত নতুন যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব তিনটি ধাপ রয়েছে। ইসরাইল নিজে এই প্রস্তাব ঘোষণা করেনি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন শুক্রবার রাতে এক টেলিভিশন ভাষণে এই রূপরেখা তুলে ধরেন। অনেক বিশ্লেষক বলেছেন, এতে নতুন কিছুই নেই। বিভিন্ন পক্ষ থেকে এসব প্রস্তাব অনেকবারই এসেছে। তবে নতুনত্ব যা রয়েছে, তা হলো এটি ঘোষিত হয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের মুখ দিয়ে।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রস্তাবটি তিনটি পর্যায়ে বাস্তবায়ন করার কথা বলা হচ্ছে। প্রথম পর্যায়ে ছয় সপ্তাহের যুদ্ধবিরতি কার্যকর করা হবে। এ সময়ে গাজার সব জনবহুল এলাকা থেকে ইসরায়েলি সেনাদের তুলে নেয়া হবে।
যুদ্ধবিরতির সময় হামাস ‘নির্দিষ্ট সংখ্যক’ জিম্মিকে মুক্তি দেবে। তাদের মধ্যে নারী, বয়স্ক ব্যক্তি এবং আহত জিম্মিরা থাকবেন। এর বিনিময়ে ইসরায়েলে বন্দি থাকা কয়েক শ মানুষকে মুক্তি দেওয়া হবে। এ ছাড়া হামাসের হাতে জিম্মি অভস্থায় মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মরদেহ পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দিতে হবে।
গাজার সব এলাকায় বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের তাদের বাড়িঘরে ফিরতে সুযোগ দেওয়া হবে। সেই সঙ্গে গাজায় মানবিক সহায়তা কার্যক্রম বাড়ানো হবে। গাজায় প্রতিদিন মানবিক সহায়তাবাহী ৬০০ ট্রাক ঢুকতে দেওয়া হবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় গাজাবাসীর জন্য হাজারো সাময়িক আবাসনের ব্যবস্থা করবে।
ছয় সপ্তাহের যুদ্ধবিরতি চলাকালে যুক্তরাষ্ট্র ও কাতারের মধ্যস্ততায় শান্তি আলোচনা চলমান থাকবে। যদি আলোচনা সফল হয়, তাহলে পরবর্তী পর্যায়ের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরু করা হবে।
দ্বিতীয় পর্যায়ে বাদবাকি জীবিত জিম্মিদের মুক্তি দেবে হামাস। তাদের মধ্যে জিম্মি পুরুষ সেনারাও থাকবেন। সেই সঙ্গে গাজা উপত্যকা থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর সর্বশেষ সেনাকেও সরিয়ে নেওয়া হবে। যুদ্ধবিরতিকে ‘স্থায়ীভাবে শত্রুতা বন্ধে’ উন্নীত করা হবে।
তৃতীয় পর্যায়ে জিম্মি ফেরানোর প্রক্রিয়া পুরোপুরি শেষ করা হবে। গাজার জন্য বড় ধরণের একটি ‘পুনর্গঠন পরিকল্পনা’ বাস্তবায়ন শুরু করা হবে। এর আওতায় মার্কিন ও আন্তর্জাতিক সহায়তায় গাজা উপত্যকায় বাড়ি, বিদ্যালয় ও হাসপাতাল পুনর্নির্মাণ করা হবে।