২০২৩ সালে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত হয়েছে ১২ কোটি মানুষ: জাতিসংঘ
যুদ্ধ, সহিংসতা এবং নিপীড়নের কারণে সারা বিশ্বে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত ১২ কোটি মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ।
জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর বলেছে, বিশ্বব্যাপী জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত হওয়ার এই সংখ্যা পূর্বের সকল রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। গাজা, সুদান এবং মিয়ানমারের মতো জায়গায় সংঘাতের ফলে আরও বেশি লোক তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে।
ইউএনএইচসিআর এক বিবৃতিতে উল্লেখ করেছে, বিশ্বব্যাপী বাস্তুচ্যুত জনসংখ্যা এখন জাপানের সমতুল্য।
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক প্রধান ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘সংঘাত এখনও ব্যাপক বাস্তুচ্যুতির একটি বড় ধরনের কারণ।’
ইউএনএইচসিআর এক প্রতিবেদনে বলেছে, গত বছরের শেষে, ১১৭.৩ মিলিয়ন মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে এবং এপ্রিলের শেষের দিকে সংখ্যাটি আরও বেড়ে গিয়েছিল। বিশ্বজুড়ে আনুমানিক ১২ কোটি মানুষ বাস্তুচ্যুত অবস্থায় বসবাস করছে।
সংস্থাটি বলেছে, সংখ্যাটি এক বছর আগের ১১ কোটি থেকে বেড়েছে এবং টানা ১২ বছর ধরে বেড়ে চলেছে। নতুন এবং পরিবর্তনশীল সংকটের সংমিশ্রণ এবং দীর্ঘস্থায়ী সমস্যাগুলোর সমাধানে ব্যর্থতার মধ্যে ২০১২ সাল থেকে প্রায় তিনগুণ বেড়েছে।
ইউএনএইচসিআর গত বছর ২৯টি দেশে ৪৩টি জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে, যা কয়েক বছর আগে ছিল তার চারগুণেরও বেশি। শরণার্থী এবং অন্যান্যের আন্তর্জাতিক সুরক্ষার প্রয়োজনের সংখ্যা ইতোমধ্যে ৪৩.৪ মিলিয়নে বেড়েছে। সকল শরণার্থী এবং অন্যান্য অভিবাসী ধনী দেশে যায় এমন ধারণার বিরুদ্ধে ইউএনএইচসিআর।
সংস্থাটির মতে, ‘অধিকাংশ শরণার্থীকে তাদের প্রতিবেশী দেশগুলোতে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। তাদের ৭৫ শতাংশ নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে বসবাস করে যেগুলো একসাথে বিশ্বের আয়ের ২০ শতাংশেরও কম উৎপাদন করে।
২০২৩ সালের পর থেকে সুদানের প্রতিদ্বন্দ্বী দুই জেনারেলের মধ্যে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়লে ৯০ লাখেরও বেশি লোককে বাস্তুচ্যুত করেছে। ২০২৩ সালের শেষে প্রায় ১ কোটি ১০ লাখ সুদানিকে বাস্তুচ্যুত করেছে। সংখ্যা তখনও বাড়ছিল।
গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র কঙ্গো এবং মিয়ানমারে গত বছর ভয়ঙ্কর লড়াইয়ের কারণে আরও লক্ষাধিক মানুষ অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছিল। গাজা স্ট্রিপে ১৭ লক্ষ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
ইউএনএইচসিআর বলেছে, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ার পূর্ণ মাত্রায় আগ্রাসনের পর থেকে ইউক্রেনে যুদ্ধের জন্য প্রায় সাড়ে ৭ লক্ষ মানুষ গত বছর দেশের অভ্যন্তরে নতুনভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছে। ২০২৩ সালের শেষ নাগাদ মোট ৩৭ লক্ষ অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হিসেবে নিবন্ধিত হয়েছে। ইউক্রেনীয় শরণার্থী এবং আশ্রয়প্রার্থীদের সংখ্যা ২ লক্ষ ৭৫ হাজার থেকে বেড়ে ৬০ লক্ষে দাঁড়িয়েছে।
সংস্থাটি বলেছে, সিরিয়ায় বিশ্বের সবচেয়ে বড় বাস্তুচ্যুতির ঘটনা ঘটেছে। সেখানে ১৩ কোটি ৮০ লক্ষ মানুষ জোরপূর্বক দেশের ভেতরে এবং বাইরে বাস্তুচ্যুত হয়েছে।