বার্মার সামরিক জান্তাকে সমর্থন করেই চলেছে ভারত

বার্মার বিভিন্ন জাতিসত্তার মানুষ অস্ত্র হাতে ঝাঁপিয়ে পড়েছে বেশ আগেই। দেশটির সাধারণ মানুষ বিভিন্ন জোট গঠন করে সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে দেশের সামরিক শাসকদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে এবং দেশব্যাপী বিজয়ের মুখও দেখছে। জান্তা বাহিনী লেজ গুটিয়ে পালিয়েছে বিস্তীর্ণ অঞ্চলে। অনেকে নাফ নদী পার হয়ে বাংলাদেশেও আশ্রয় নিতে চলে এসেছিল।

এদিকে বার্মার নিপীড়ক শাসকদের সাহায্য করে চলেছে ভারত। ভারত দেশটির তৃতীয় বৃহত্তম অস্ত্রের জোগানদার। আর এ গোলাবারুদ ব্যবহার হচ্ছে মিয়ানমারের বেসামরিক জনগণের ওপর।

পরশু সামরিক গোয়েন্দা দপ্তরের যুগ্ম মহাপরিচালক, মেজর জেনারেল চরণজিৎ সিং দেবগান ছুটে গিয়েছেন বার্মার রাজধানী নিপিদো-তে। দেখা করেছেন জান্তার জেনারেল মং মং আই-এর সাথে।

মং মং আই মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন সামরিক শাসকদের প্রথম তিনজনের একজন। দেশটির গণতন্ত্রবিরোধী কাজের জন্য পশ্চিমা দেশগুলি জেনারেল আই-র উপর স্যাংশন আরোপ করেছে বেশ আগেই। কিন্তু তা জান্তার সাথে ভারতের দহরম মহরমে কোন ছেদ টানতে পারেনি।

জেনারেল আই মিয়ানমারের ক্ষমতাসীনদের হয়ে অস্ত্র কেনার কাজ করেন। ধরে নেয়া হচ্ছে ভারতের সামরিক গোয়েন্দা দপ্তরের যুগ্ম মহাপরিচালকের সফর এসবের সাথেই সম্পর্কিত।

এ ধরনের যাতায়াত একদমই নতুন নয়। ভারতের সহকারী বিমান বাহিনী প্রধান (গোয়েন্দা), এয়ার ভাইস মার্শাল ইচেত্তিরা আইয়াপ্পা কুত্তাপ্পা মিয়ানমারের বিমান বাহিনীর প্রধান তুন অং-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন কিছুদিন আগে।

এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ভারতীয় সামরিক বাহিনীর জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (থার্ড কোর) লেফটেন্যান্ট জেনারেল হারজিৎ সিং সাহি সাক্ষাৎ করেছেন জান্তার সেকেন্ড ইন কমান্ড সো উইনের সাথে।

এদিকে বার্মার সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ কিন্তু নতুন নয়। ভারতের এয়ার ভাইস মার্শাল কুত্তাপ্পার সফরের কিছুদিন পরেই জান্তার বিমান হামলায় দেশটির সাগাইং এলাকায় নিহত হন ৪০ জন। এদের মধ্যে বেসামরিক জনগোষ্ঠীর মানুষ থাকার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না।

দেশটির মুক্তিকামী মানুষ ভারতকে অনুরোধ করেছে সামরিক জান্তাকে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করতে। কিন্তু ভারত তাতে এখন পর্যন্ত কোন কর্ণপাত করেনি।

অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে ভারত তার সব ডিম এক বাক্সে রাখার নীতিতে বিশ্বাস করে। এদিকে মিয়ানমারের গণ প্রতিরোধ বাহিনী দেশটির রাজধানীকে প্রায় ঘেরাও করে ফেলেছে। বিরোধীদের হাতে রাখাইন (আরাকান) রাজ্যের পতন এখন সময়ের ব্যাপার বলে মনে হচ্ছে।

মিয়ানমারের গণতন্ত্র ফিরে আসলে ভারতের সাথে দেশটির সম্পর্ক জটিল আকার ধারণ করতে পারে। ভারতের জন্য শঙ্কার জায়গা হচ্ছে তার নিজের উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলো। এরা পরিচিত সেভেন সিস্টার্স হিসাবে। এসব রাজ্যে অনেকদিন ধরে বিদ্রোহ-বিবাদ লেগেই ছিল। মিয়ানমারের কুকি-চীন-সহ বিভিন্ন জাতিসত্তার সাথে সেভেন সিস্টার্সের অনেক নৃগোষ্ঠীর ঐতিহাসিক সম্পর্ক আছে।

বার্মার জান্তার উপর ভারতের নিরবচ্ছিন্ন সমর্থন এদের কারোরই ভালোভাবে দেখার কথা না।

এ রিপোর্টটি বিভিন্ন অনলাইন সূত্র থেকে তৈরী করা।