যুক্তরাজ্যের নির্বাচনে লেবার পার্টিতে বিদ্রোহ

সবাইকে অবাক করে দিয়ে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক গত ২২ মে মধ্যবর্তী নির্বাচনের ঘোষণা দেন। নির্বাচন হবে আগামী ৪ জুলাই। 

এদিকে, গত শনিবার জনমত জরিপের ফলাফল এসেছে। এগুলো সত্যি হলে সুনাকের টোরি দলের জন্য একটি নির্বাচনী সুনামি অপেক্ষা করছে। সাভান্টার জরিপে টোরিরা পাচ্ছে ২১%, আর কিয়ার স্ট্রারমার নেতৃত্বাধীন লেবার পার্টি পাবে ৪৬% ভোট। অন্য দুটি জনমত জরিপও লেবার পার্টিকে বিজয়ী দেখাচ্ছে। 

জরিপগুলো সত্য হলে লেবাররা ২০১০-এর পর এই প্রথম সরকার গঠন করতে পারবে। কিয়ার স্ট্রামার হবেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু দলটিতে সবকিছু যে ভালো চলছে তা না। লেবারের প্রাক্তন প্রধান জেরেমি করবিনকে সাসপেন্ড করা হয়েছে চার বছর আগে। করবিন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচন করছেন। দলের নমিনেশন পাননি কয়েকজন এমপি।

করবিনের ছায়া মন্ত্রীসভার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ডায়ানা এবোট আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন যে কিয়ার স্ট্রারমার নেতৃত্বাধীন লেবার তাকে মনোনয়ন দেবে না। পরে স্ট্রামার জানান যে এবোট লেবার থেকে নির্বাচন করতে পারবেন। 

এবোট যুক্তরাজ্যের সংসদে নির্বাচিত প্রথম কালো নারী সাংসদ। ১৯৮৭ সাল থেকে তিনি তার হ্যাকনি উত্তর ও স্টোক নিউইংটন থেকে নির্বাচিত হয়ে আসছেন। অ্যাবটের এই অবস্হা হলে বাকি বামপন্হী লেবার সদস্যদের অবস্হা কী তা সহজেই অনুমান করা যায়। 

ফায়যা শাহিন লেবারের মনোনয়ন পাননি কিছু সোশাল মিডিয়া পোস্টের কারণে। এর মধ্যে আছে ১১ বছর পুরোনো ডেইলি শো’র একটি পোস্ট যাতে শাহিন লাইক দিয়েছিলেন। তিনি নির্বাচনে দাঁড়াবেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে। 

মনোনয়ন দেওয়া হয়নি ব্রাইটন কেম্পটাউনের লয়েড রাসেল ময়েলকেও। এ আসনে তিনি জিতে আসছেন ২০১৭ সাল থেকে। 

লেবারের মধ্য ডানপন্হী নেতাদের এসব কাজকর্ম দলটির অনেক সদস্যই ভালোভাবে দেখছেন না। এবোট ও ফায়যার ঘটানার পর সাতজন লেবার কাউন্সিলর পদত্যাগ করেছেন। গাজা যুদ্ধে স্ট্রারমারের ভূমিকার কারণে এর আগে পদত্যাগ করেছেন কয়েক ডজন কাউন্সিলর। ফিল বার্টন-কার্টলিজ দলটি থেকে পদত্যাগ করে নির্বাচনে দাড়াচ্ছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে। 

জনমত জরিপগুলো সত্য হলে এবং বড় কোনো অঘটন না হলে ১৪ বছর পর আমরা যুক্তরাজ্যে একটি লেবার সরকার পেতে পারি। দ্রুত জনপ্রিয় হওয়ার জন্য কিছু পদক্ষেপ নিলে ভোট পাওয়া যাবে ঠিকই কিন্তু আখেরে তা লেবার পার্টির ক্ষতি হতে পারে। অভিবাসন, জলবায়ু পরিবর্তন, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন বিষয়ে লেবারের হবু সরকারের অবস্হান হতাশাজনক হতে পারে বলে অনেকে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন। 

ঐতিহাসিকভাবে লেবার সবসময় জনগণের পক্ষে অবস্হান নিয়েছে। এমনকি টনি ব্লেয়ারের সময়ও দলটির মধ্যে একটি শক্তিশালী বাম ধারা বিরাজ করতো। কিন্তু বর্তমানে কিয়ার স্ট্রারমারের লেবার নেতৃত্ব যেভাবে গণহারে দলটিকে বামপন্হীবিহীন করছেন, তাতে নগদে হয়তো দলটির লাভ হতে পারে কিন্তু আখেরে লেবারের তেমন কোনো উপকার হবে বলে মনে হয় না।