লেবাননে ঝাঁকে ঝাঁকে সামরিক বিমান পাঠাচ্ছে যুক্তরাজ্য

লেবাননে ঝাঁকে ঝাঁকে সামরিক বিমান পাঠাচ্ছে যুক্তরাজ্য

ফিলিস্তিনের গাজায় চলমান যুদ্ধকে কেন্দ্র করে দখলদার ইসরায়েলের সঙ্গে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ লেবাননের। যে কোনো সময় দেশ দু’টির মধ্যে শুরু হতে পারে যুদ্ধ। এমন উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে লেবাননের রাজধানী বৈরুতে এক ঝাঁক যুদ্ধবিমান পাঠিয়েছে যুক্তরাজ্য। যুক্তরাজ্যের সামরিক ও গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকাণ্ডে নজর রাখা ওয়েবসাইট ডিক্লাসিফায়েড ইউকে এক প্রতিবেদনে এমনটা জানিয়েছে।

ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, গাজায় বোমা হামলা শুরুর পর লেবাননের রাজধানী বৈরুতে ৮০টির বেশি সামরিক পরিবহন বিমান পাঠিয়েছে যুক্তরাজ্য।

সবগুলো বিমানই সাইপ্রাস থেকে উড়ে গেছে। কয়েক সপ্তাহ আগে এই সাইপ্রাস ঘিরেই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতি। ইসরায়েল বলেছিল, তারা সাইপ্রাস থেকে লেবাননে হামলা চালাবে। এরপর সাইপ্রাসে হামলার হুমকি দিয়েছিল লেবাননের প্রতিরোধ যোদ্ধারা।

সাইপ্রাসের আকরোতিরিতে ব্রিটিশ বিমানবাহিনীর ঘাঁটি রয়েছে। এটি বৈরুত থেকে মাত্র ১৫০ মাইল দূরে, উড়ে যেতে লাগে ৪৫ মিনিট। গেল অক্টোবরে গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন শুরুর পর থেকেই লেবাননে সামরিক বিমান পাঠানো শুরু করে যুক্তরাজ্য।

গেল এপ্রিলেই বৈরুতে ২৫টি যুদ্ধবিমান পাঠায় দেশটি। মে মাসেও একই পরিমাণ যুদ্ধবিমান পাঠিয়েছে যুক্তরাজ্য। জুন মাসেও অন্তত ১৪টি যুদ্ধবিমান পাঠানোর খবর দিয়েছে ডিক্লাসিফায়েড ইউকে। সব মিলিয়ে গেল অক্টোবর থেকে ৮৪টি যুদ্ধবিমান বৈরুতে পাঠিয়েছে যুক্তরাজ্য।

ব্রিটেনের যুদ্ধবিমান হঠাৎ করে লেবাননে পাঠানোর কারণ এখনও স্পষ্ট নয়। একটি প্রতিরক্ষা সূত্র ডিক্লাসিফায়েডকে জানিয়েছে, সিনিয়র মিলিটারি এনজেগমেন্টকে সুবিধা দেওয়াই প্রাথমিকভাবে এসব বিমান পাঠানোর উদ্দেশ্য। যদিও ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জানিয়েছে, লেবাননের সশস্ত্র বাহিনীকে সহায়তা দেওয়া ও দেশটির নিরাপত্তা নিশ্চিতে যুক্তরাজ্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

তবে যুদ্ধবিমান পাঠানো নিয়ে যুক্তরাজ্য অতিরিক্ত গোপনীয়তা দেখাচ্ছে। কয়েক সপ্তাহ আগে ব্রিটিশ রয়েল এয়ারফোর্সের দুটি বিমান ইসরায়েলে অবতরণ করে। লেবাননের উড়ে যাওয়া ব্রিটিশ বিমানবাহিনীর প্রায় সব বিমানই ভয়েজার কেসি মার্ক ২।

এই সিরিজের বিমানগুলো ৪৫ টন পর্যন্ত সরঞ্জাম ও ২৯১ জন সেনা কর্মকর্তা বহনে সক্ষম। এগুলো আবার এয়ার টু এয়ার রিফুয়েলিংয়েও ব্যবহার করা হয়। এই তালিকায় সি-17 কার্গো বিমানও রয়েছে।

১৯৬০ সালে ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা পেলেও সাইপ্রাসে যুক্তরাজ্যের দুটি সার্বভৌম ঘাঁটি রয়েছে। এই দুটি ঘাঁটি যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের জন্য সামরিক ও গোয়েন্দা তথ্যের হাব হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এর আগে উইকিলিকস জানিয়েছিল, আকরোতিরি ঘাঁটি থেকে উড্ডয়ন করে যুক্তরাষ্ট্রের ইউ-2 গোয়েন্দা বিমান লেবাননে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করেছে। অক্টোবর থেকে একই ধরনের ভূমিকায় দেখা যাচ্ছে ব্রিটিশ বিমানবাহিনীকে।

সাইপ্রাসের আকরোতিরি থেকে ২০২৩ সালের অক্টোবরের চার মাস আগে যুক্তরাজ্যের মাত্র একটি ফ্লাইট গিয়েছিল। পরবর্তী কয়েক মাসে লেবাননে মাত্র ৫টি ফ্লাইট অবরতণ করে। তবে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে চোখে পড়ার মতো হারে যুদ্ধবিমান বিমান পাঠাতে শুরু করে যুক্তরাজ্য।

এখন পর্যন্ত যতগুলো ফ্লাইট পাঠানো হয়েছে, তাতে ২৩ হাজারের বেশি ব্রিটিশ সেনা লেবাননে পাঠানো সম্ভব।