বিক্ষোভে বাধা দিচ্ছেন মমতা, অভিযোগ সেই চিকিৎসকের বাবা-মায়ের

বিক্ষোভে বাধা দিচ্ছেন মমতা, অভিযোগ সেই চিকিৎসকের বাবা-মায়ের

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের ১৩৮ বছরের পুরনো আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের এক চিকিৎসককে ধর্ষণের পর হত্যাকে ঘিরে ভারতজুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে চলছে একটানা বিক্ষোভ। নিহত চিকিৎসক ছিলেন কলকাতার আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের একজন চিকিৎসক। ৩১ বছর বয়সী ওই তরুণীর দেহের ময়নাতদন্তে চরম যৌন লাঞ্ছনার প্রমাণ মিলেছে।

জানা গেছে, ভারতে দেশজুড়ে যে বিক্ষোভ চলছে, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাতে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ করেছেন ওই চিকিৎসকের মা। তিনি বলেন,  মুখ্যমন্ত্রী একদিকে ন্যায়বিচার চেয়ে রাস্তায় নামছেন, অন্যদিকে আন্দোলন যাতে না হয় তার চেষ্টাও করছেন। তার এমন আচরণ কোনোভাবেই মেনে দিতে রাজি নয় ভুক্তভোগীর পরিবার।

ওই নারী চিকিৎসকের মা বলেন,তিনি (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) বলেছিলেন, যতদ্রুত সম্ভব অপরাধীদের গ্রেফতার করা হবে। অথচ এখন পর্যন্ত মাত্র একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। হাসপাতালের আরো অনেকে এ ঘটনায় জড়িত বলে আমি নিশ্চিত। আমার ধারণা, মুখ্যমন্ত্রী বিক্ষোভে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করছেন।

বিক্ষোভে অংশ নেয়া সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, অপরাধীরা গ্রেফতার না হওয়া পর্যন্ত আপনারা পাশে থাকবেন। আর কারো সঙ্গে যেন এটি না ঘটে, কোনো মা যেন আর তার সন্তানকে না হারান।

নিহত শিক্ষার্থীর বাবা শেখর রঞ্জন দেবনাথ বলেন, মুখ্যমন্ত্রী এত কথা বলছেন, নিহতের বিচার চাই বলে রাস্তায় নামছেন, আন্দোলন করছেন। আবার অন্যদিকে আন্দোলন যাতে না হয়, সেই চেষ্টাও করছেন। তিনি কেন দ্বিচারিতা করছেন? তিনি কি সাধারণ মানুষদের ভয় পাচ্ছেন?

তার অভিযোগ, যারা মুক্তকণ্ঠে প্রতিবাদ করছেন, মুখ্যমন্ত্রী তাদের কণ্ঠরোধ করার চেষ্টা করছেন। তিনি নিজে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করছেন, আবার প্রতিবাদ যাতে না হয় তারও ব্যবস্থা করছেন।

হাসপাতালে দায়িত্বরত অবস্থায় মৌমিতা দেবনাথকে ধর্ষণের পর খুনের ঘটনার এক সপ্তাহেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেছে। কিন্তু এখনো বিষয়টির কোনো সুরাহা হয়নি। মৌমিতা হত্যার সুষ্ঠু বিচার এবং সবস্তরে নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন প্রতিবাদীরা।

এ অবস্থায় রাজ্যবাসীর কাছে মৌমিতার মায়ের বার্তা, যারা কন্যাশ্রী প্রকল্প, লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের সুবিধা নিচ্ছেন, তারা সেগুলো নেয়ার আগে নিজেরা সুরক্ষিত কি না একবার ভেবে দেখবেন।

তিনি বলেন, আগে দোষীদের চরম শাস্তি দাবি করছি। তারপর আর্থিক ক্ষতিপূরণের বিষয়টি ভেবে দেখবো। তখন হয়তো ক্ষতিপূরণের টাকা নেবো। কিন্তু ন্যায়বিচারের আগে নয়।

আর জি কর মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষকে টানা জিজ্ঞাসাবাদ প্রসঙ্গে শেখর রঞ্জন বলেন, এটি বিচারাধীন বিষয়। সিবিআই তাকে কী ধরনের প্রশ্ন করছে, তা নিয়ে আমরা কিছু বলতে পারি না।

মেয়ের কাছ থেকে উদ্ধার ডায়েরি সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু বলতে না চাইলেও মৌমিতার বাবা বলেছেন, সেদিন আমার মেয়ে লিখেছিল, সে সুখে থাকতে চায়।

সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, আরজি কর হাসপাতালের ঘটনার প্রতিবাদে ভারতজুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় রাজ্যগুলোর পুলিশ বাহিনীকে প্রতি দুই ঘণ্টায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।

যেকোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা এড়াতে রোববার থেকে ২৪ আগস্ট পর্যন্ত আরজি কর মেডিকেল কলেজ ও এর আশপাশের কয়েকটি এলাকায় পাঁচজন বা তার বেশি মানুষের জমায়েত নিষিদ্ধ করেছে কলকাতা পুলিশ।