সিঙ্গাপুর যেতে নাম পরিবর্তন করেন বাংলাদেশি ধর্মপ্রচারক
বাংলাদেশি চরমপন্থী ধর্ম প্রচারক আমির হামজা সিঙ্গাপুরে প্রবেশ করতে এবং সেখানে একটি অবৈধ ধর্মোপদেশ (খুতবা) দিতে পাসপোর্টে নিজের নাম পরিবর্তন করেছেন বলে জানিয়েছে সিঙ্গাপুরের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় (এমএইচএ)।
সিঙ্গাপুর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বুধবার (২১ আগস্ট) বলেছে যে তাদের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বিভাগ আমির হামজার পটভূমি সম্পর্কে অবগত ছিল। কিন্তু দেশটিতে প্রবেশের সময় তার বায়োমেট্রিক্স ছিল না।
মন্ত্রণালয়টি বলছে, তারা তুয়াসের লান্টানা লজ ডরমেটরিতে ৯ আগস্ট অভিবাসী শ্রমিকদের কাছে অনুমোদন ছাড়াই ধর্মপ্রচার করার জন্য বাংলাদেশি নাগরিককে তদন্ত করছে। ঐ অনুষ্ঠানের আয়োজক এবং এর সঙ্গে জড়িত অন্যদেরও তদন্ত করছে।
‘আমির হামজার খুতবা চরমপন্থী এবং বিচ্ছিন্নতাবাদী শিক্ষার প্রচার করেছিল যা বিপজ্জনক এবং সিঙ্গাপুরের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জন্য ক্ষতিকর,’ বলছে এমএইচএ।
বুধবার সংবাদ সম্মেলনে দেশটির আইন ও স্বরাষ্ট্র বিষয়ক মন্ত্রী কে শানমুগাম বলেন, সিঙ্গাপুরকে তার নিরাপত্তার চাহিদা এবং এখানে আসা পর্যটকদের অভিজ্ঞতার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে।
তিনি বলেন, ‘আপনাদের মনে রাখতে হবে, সারা বিশ্বের মানুষ সিঙ্গাপুরে আসে। বিমানবন্দরে বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যবহার করতে হবে। মানুষ যেন মনে করে সিঙ্গাপুর তাদের স্বাগত জানাচ্ছে’।
একই সময়ে, সিঙ্গাপুরে আমির হামজার মতো লোকদের প্রবেশ ঠেকাতে ইমিগ্রেশন অ্যান্ড চেকপয়েন্ট অথরিটির (আইসিএ) ‘খুব কঠিন’ কাজ রয়েছে।
শানমুগাম বলেন, সিঙ্গাপুর অতীতে ধর্মপ্রচারকদের প্রবেশে বাধা দিয়েছে এবং তাদের সীমান্ত থেকেই ফিরিয়ে দিয়েছে।
২০২২ সালের মে মাসে, ইন্দোনেশিয়ান ধর্মপ্রচারক আব্দুল সোমাদ বাতুবারা তানাহ মেরাহ ফেরি টার্মিনালে পৌঁছেছিলেন এবং তাকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। একই দিনে তাকে ইন্দোনেশিয়ার বাটামে ফেরত পাঠানো হয়েছিল।
এই ক্ষেত্রে, তিনি (আমির হামজা) পার পেয়েছিলেন, বলেন শানমুগাম।
পর্যটন এজেন্সিগুলোর প্রক্রিয়া পর্যালোচনা করা হবে কিনা জানতে চাওয়া হলে, শানমুগাম বলেন, ‘যারা সিঙ্গাপুরে আসছেন আপনি প্রত্যেকের সাক্ষাত্কার নিতে পারবেন না, কেউ সম্ভবত মৌলবাদী বা এমন কেউ যিনি একজন মৌলবাদী হতে পারেন।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আইসিএ যা করতে পারে তা হল আগত ভ্রমণকারীকে সনাক্ত করা এবং তাদের বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদ করা। তবে এটি বিমানবন্দরের অভিজ্ঞতা এবং সিঙ্গাপুরের পর্যটন শিল্পকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
‘তিনি (আমির হামজা) সিঙ্গাপুরে আসা অন্য সবার থেকে আলাদা ছিলেন না … আমরা এটি দেখব, তবে আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যে আমরা অর্থনীতির চাহিদার সাথে নিরাপত্তার চাহিদার ভারসাম্য যেন বজায় রাখতে পারি।’
এমএইচএ এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে যে বাংলাদেশি নাগরিক তার ৯ আগস্টের খুতবায় অমুসলিমদের ‘কাফির’, অর্থাৎ নাস্তিক বলে অভিহিত করেন।
‘তিনি কথিত বাংলাদেশি চরমপন্থীদেরকে ধর্মীয় ধার্মিকতার ঘাঁটি হিসেবে ধরে রেখেছেন, যার মধ্যে ইসলামপন্থী দল জামায়াত ইসলামির বেশ কয়েকজন নেতা রয়েছেন, যেটি দলটি বাংলাদেশে নিষিদ্ধ, এবং যাদের সদস্যদের কথিত সন্ত্রাসী কার্যকলাপে জড়িত থাকার জন্য গ্রেফতার করা হয়েছিল,’ বলছে এমএইচএ।
আমির হামজা তার খুতবা নিয়েও রাজনীতি করেন। তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বিগত বাংলাদেশি সরকারকে “অত্যাচারী” বলে অভিহিত করেন এবং দাবি করেন যে তারা তাদের বিরোধিতাকারীদের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল।
‘তিনি আরো দাবি করেন যে বাংলাদেশ একটি 'ইসলামী দেশ' হলে বিজয় আসবে,’ এমএইচএ বলেন।
আমির হামজা বা আয়োজক কেউই সিঙ্গাপুরে খুতবা দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় অনুমোদনের জন্য আবেদন করেননি, বলে যোগ করে সিঙ্গাপুর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
ধর্মপ্রচারের পরের দিন ১০ আগস্ট আমির হামজা সিঙ্গাপুর ত্যাগ করেন এবং কর্তৃপক্ষ ১২ আগস্ট পুলিশ রিপোর্ট পায়।
আমির হামজা তার কথিত চরমপন্থী শিক্ষা এবং সন্ত্রাসী যোগসূত্রের জন্য বাংলাদেশে নিরাপত্তার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
‘তিনি তার বক্তৃতায় ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা, ঘৃণা ও সহিংসতার প্রচার করেছেন বলে জানা গেছে। তিনি বাংলাদেশে কর্মরত আল-কায়েদাপন্থী সন্ত্রাসী সংগঠন আনসার আল-ইসলাম (এএআই) এর একজন প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব বলেও অভিযোগ রয়েছে,’ বলেছে সিঙ্গাপুর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
সন্ত্রাসী যোগসূত্র, সন্ত্রাস-সম্পর্কিত কার্যকলাপ এবং জঙ্গিবাদে উসকানি দেওয়ার জন্য ২০২১ সালে বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনী আমির হামজাকে গ্রেফতার করেছিল। গত বছরের ডিসেম্বরে বিচারের অপেক্ষায় থাকা অবস্থায় তিনি জামিনে মুক্তি পান বলে জানা গেছে।
আমির হামজার বক্তব্যে বাংলাদেশের পার্লামেন্টে হামলার পরিকল্পনাকারী এএআই-সংশ্লিষ্ট সন্ত্রাসী সন্দেহভাজনকে প্রভাবিত করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
তিনি কথিতভাবে স্বীকার করেছেন যে তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে ধর্মীয় শিক্ষার ভুল ব্যাখ্যা করেছেন এবং তার উপদেশের মাধ্যমে চরমপন্থা ছড়াচ্ছেন, এমএইচএ জানিয়েছে।
কর্তৃপক্ষ ৯ আগস্টের ঘটনার সাথে জড়িতদের তদন্ত করা হচ্ছে জানিয়ে এমএইচএ বলছে, বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। যদি এক্ষেত্রে সিঙ্গাপুরের আইন লঙ্ঘন বা নিরাপত্তার ক্ষেত্রে কোনো হুমকির তথ্য প্রকাশ পায় তবে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।