ভারতের পানিতে বাংলাদেশে ভয়াবহ বন্যা: ডম্বুর বাঁধে ঠিক কী হয়েছে?

ভারতের পানিতে বাংলাদেশে ভয়াবহ বন্যা: ডম্বুর বাঁধে ঠিক কী হয়েছে?

ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ত্রিপুরায় গোমতী জেলায় অবস্থিত গোমতী পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ডম্বুর স্লুইস গেট খুলে দেয়ার ফলে বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ব্যাপক বন্যা হয়েছে।

গোমতী পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কোনো গেট খুলে দেয়া হয়নি - ভারতের পক্ষ থেকে এমন দাবি করা হলেও ফারাক্কা ব্যারেজে নদীর জলস্তর বুধবার থেকে কিছুটা বৃদ্ধি পাওয়ায় সেখানে কয়েকটি গেট খুলে দেয়া হয়েছে বলে ব্যারেজের সূত্রগুলো জানিয়েছে।

সংবাদমাধ্যম বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ত্রিপুরায় গত তিন দশকেরও বেশি সময়ের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা হচ্ছে বলে জানিয়েছে সেখানকার সরকার।

রাজ্যের এক মন্ত্রী বলেছেন, আগস্ট মাসে যা বৃষ্টিপাত হয়েছে, তা স্বাভাবিকের থেকে ১৫১ শতাংশ বেশি।

এখন পর্যন্ত অন্তত ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং দু’জন নিখোঁজ রয়েছেন বলে রাজ্য প্রশাসন জানিয়েছে। এদের মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন সাতজন।

প্রায় ১৭ লাখ মানুষ সেখানে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন বলে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জানিয়েছে রাজ্য সরকার।

ডম্বুর বাঁধে কী হয়েছে?

এই বন্যায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যেসব জেলা, তার মধ্যে আছে গোমতী। গোমতী জেলাতেই গোমতী জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ডম্বুর স্লুইস গেট খুলে দেওয়ার ফলে বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ব্যাপক বন্যা হয়েছে বলে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে।

রাজ্যের বিদ্যুৎ দপ্তরের অধীন ওই জলবিদ্যুৎ প্রকল্পটি। দপ্তরের মন্ত্রী রতন লাল নাথ বলেছেন, যে প্রচারটা করা হচ্ছে ডম্বুর গেট খুলে দেওয়া নিয়ে, সেটা অপপ্রচার ছাড়া কিছু না।

‘গোমতী জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কোনও গেট খুলে দেওয়া হয়নি। এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জলাধারটির সর্বোচ্চ ধারণ ক্ষমতা ৯৪ মিটার। জলস্তর এর বেশি উঠলেই পানি স্বয়ংক্রিয়ভাবে গেট দিয়ে বেরিয়ে যাবে। পানির স্তর আবার নিচে নেমে গেলে নিজের থেকেই গেট বন্ধ হয়ে যাবে। জলস্তর সর্বোচ্চ ধারণ ক্ষমতার বেশি হয়ে যেতেই জলাধারের দুটি গেট দিয়ে জল বেরোচ্ছে। এর মধ্যে একটি গেট দিয়ে ৫০ শতাংশ হারে পানি বেরোচ্ছে। সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষকে আগে থেকেই মাইকিং করে সতর্ক থাকার অনুরোধও জানানো হয়েছিল,’ বিবিসিকে বলছিলেন রতন লাল নাথ।

তিনি আরো বলেন, গত তিন দশকে এরকম বন্যা হয়নি ত্রিপুরায়। ১৯৯৩ সালের ২১ আগস্ট ত্রিপুরার সাব্রুমে একদিনে ২৪৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড ছিল। আর এ বছর ২০ আগস্ট একদিনে বৃষ্টি হয়েছে ৩৭৫ দশমিক ৮ মিলিমিটার। ঠিক ৩১ বছর পর একদিনে এত বেশি বৃষ্টি হয়েছে। পুরো মাসের হিসাব যদি দেখি, আগস্ট মাসের ২১ দিনে স্বাভাবিক বৃষ্টি হওয়ার কথা ছিল ২১৪ মিলিমিটার। সেখানে বৃষ্টিপাত হয়েছে ৫৩৮ দশমিক ৭ মিলিমিটার। অর্থাৎ ১৫১ শতাংশ বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে।

মন্ত্রী বলেন, স্বাভাবিকভাবেই এত বেশি বৃষ্টিপাত হওয়ায় এত বড় বন্যা দেখা গেছে তিন দশকেরও বেশি সময় পরে।

তিস্তা-ফারাক্কা

সিকিম থেকে নেমে আসা তিস্তা নদীতেও পানির স্তর বিপজ্জনক। তবে পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাঞ্চলীয় নদী বিশেষজ্ঞ এবং ওই অঞ্চলে পরিবেশ সংরক্ষণের সাথে যুক্ত রাজ বসু বলছেন, সিকিমে দুদিন আগে একটি বড়সড় ভূমিধসের ঘটনা হয়েছে, তবে নদী অববাহিকায় ব্যাপক বৃষ্টিপাত হচ্ছে না।

তার কথায়, ‘কোনোদিন বৃষ্টি হচ্ছে, আবার কোনোদিন রোদ উঠছে। ফলে ভূমিধসের সম্ভাবনা বেড়েছে। কিন্তু এখনও কোনও বিপদ সঙ্কেত দেখানো হয়নি নদী অববাহিকা অথবা গজলডোবা ব্যারাজে।’

রাজ্য সরকারের সেচ দপ্তরের সূত্রে বলা হয়েছে, গজলডোবা এবং কালীঝোড়া–তিস্তার ওপরে এই দুটি বাঁধে পানির স্তর স্বাভাবিক রয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় গজলডোবা দিয়ে ১০৪৫ দশমিক ৯২ কিউসেক পানি ছাড়া হয়েছে। আর কালীঝোড়া বাঁধ থেকে একই সময়ে ১০২৭ কিউসেক পানি ছাড়া হয়েছে বলে ব্যারেজ কর্তৃপক্ষের সূত্রগুলো জানিয়েছে।

তবে রাজ বসু বলেন, তিস্তার সমস্যাটা অনেক দীর্ঘমেয়াদী। তিনি বলেন, গত বছর অক্টোবর মাসে গ্লেশিয়াল লেক আউটবার্স্ট ফ্লাডের ফলে যে বিপুল পরিমাণ পাথর, মাটি, ধ্বংস হয়ে যাওয়া বাড়ি-গাড়ি বা অন্যান্য স্থাপনা তিস্তা দিয়ে নেমে এসেছে, সেগুলো নদীবক্ষেই জমে আছে। এর ফলে নদীবক্ষের গভীরতা কমে গেছে। কিছুটা বেশি বৃষ্টি হলেই নদীর পাড় ছাপিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ঠিক এই মুহূর্তে সেই অবস্থাটা নেই। এই সমস্যার সমাধান একদিনে হবে না, দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করতে হবে। সেরকম কোনও উদ্যোগ না কেন্দ্রীয় সরকারের দেখছি, না দুটি রাজ্য সরকার – সিকিম আর পশ্চিমবঙ্গের তরফে দেখা যাচ্ছে।

অন্যদিকে ফারাক্কা ব্যারেজে নদীর পানির স্তর বুধবার থেকে কিছুটা বৃদ্ধি পাওয়ায় সেখানে কয়েকটি গেট খুলে দেওয়া হয়েছে বলে ব্যারেজের সূত্রগুলো জানিয়েছে। কিন্তু ঠিক কতটা জলস্তর বেড়েছে বা কটি গেট খুলে দেওয়া হয়েছে, সে ব্যাপারের ফারাক্কা ব্যারেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি।