যে কারণে প্রতিশোধ নিতে বিলম্ব করেছে হিজবুল্লাহ

যে কারণে প্রতিশোধ নিতে বিলম্ব করেছে হিজবুল্লাহ

ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক হামলা বিলম্বিত করার পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে বলে জানিয়েছেন হিজবুল্লাহ প্রধান হাসান নাসরুল্লাহ। তিনি জানিয়েছেন, হামাস এবং ইসরায়েলের মধ্যে গাজা নিয়ে চলমান যুদ্ধবিরতি আলোচনার বিষয়টি এই সিদ্ধান্তে বড় ভূমিকা পালন করেছে। খবর তাসের।

প্রতিবেদনে বলা হয়, কায়রোতে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে রোববার (২৫ আগস্ট) নাসরুল্লাহ বলেন, ফুয়াদ শুকরের হত্যার প্রতিশোধ নিতে আমরা তাৎক্ষণিকভাবে হামলার প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। তবে আমরা বুঝতে পারি যে ইসরায়েল ও তার মিত্র যুক্তরাষ্ট্র আমাদের প্রতিক্রিয়ার জন্য প্রস্তুত ছিল এবং তাড়াহুড়ো করলে পরাজয়ের সম্ভাবনা ছিল। এর পাশাপাশি, গাজা সংক্রান্ত আলোচনা চালিয়ে যেতে চেয়েছিলাম।

হিজবুল্লাহ প্রধান বলেন, লেবাননের স্বার্থে প্রতিশোধের সময় বিলম্বিত করা হয়নি, তবে এই বিলম্বের ফলে ইসরায়েল এবং তার অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।

নাসরুল্লাহ বলেন, রোববার হিজবুল্লাহ সিদ্ধান্ত নেয় যে তারা তাদের অন্যান্য মিত্রদের থেকে আলাদাভাবে কাজ করবে এবং তাদের নিজস্ব বিষয় বিবেচনা করে এগিয়ে যাবে, যা পরবর্তীতে প্রকাশ করা হবে।

হিজবুল্লাহ প্রধান আরও বলেন- ইরান, ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী এবং ইয়েমেনের আনসার আল্লাহ (হুথি) গোষ্ঠীসহ প্রতিরোধ অক্ষের অন্যান্য সদস্যরা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবে তা স্বতন্ত্রভাবে সিদ্ধান্ত নেবে।

রোববার রাতে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা পুনরায় বৃদ্ধি পায়, যখন ইসরায়েল হিজবুল্লাহর সম্ভাব্য ক্ষেপণাস্ত্র হামলা প্রতিরোধে লেবাননে হিজবুল্লাহর লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালায়। তবে হিজবুল্লাহ জানায়, তারা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ৩২০টিরও বেশি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে এবং এই হামলাকে ফুয়াদ শুকরের হত্যার প্রতিশোধের প্রথম ধাপ হিসেবে উল্লেখ করেছে। পরে, তারা জানায় যে তাদের প্রথম ধাপের অপারেশন শেষ হয়েছে।

হিজবুল্লাহ প্রধান জানিয়েছেন, তাদের প্রতিশোধমূলক হামলায় ইসরায়েলের গ্লিলট সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে, যা তেলআবিব থেকে মাত্র ১.৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।

হাসান নাসরুল্লাহ বলেন, ‘আমরা যখন আমাদের প্রতিশোধ পরিকল্পনা করি, তখন আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে আমরা বেসামরিক স্থাপনা ও জনসংখ্যাকে লক্ষ্যবস্তু বানাব না, বরং তেলআবিবের কাছে সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করব, যা ফুয়াদ শুকরের হত্যার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিল। আমরা গ্লিলট ঘাঁটিটি বেছে নিয়েছিলাম কারণ এখানে ইসরায়েলি সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার ইউনিট ৮২০০ অবস্থান করছে, যা রাজনৈতিক হত্যার জন্য দায়ী।’

হিজবুল্লাহ প্রধান জানান, এই অপারেশন দুটি ধাপে সম্পন্ন হয়েছে। প্রথমে একযোগে ৩০০টিরও বেশি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ এবং পরে ড্রোন ব্যবহার করা হয়। ফলস্বরূপ, আমরা ইসরায়েলের আয়রন ডোমকে (বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা) বিভ্রান্ত করতে সক্ষম হই এবং আমাদের তথ্যানুযায়ী, কিছু ড্রোন তাদের লক্ষ্যবস্তুতে পৌঁছাতে পেরেছে। কিন্তু শত্রুপক্ষ এই তথ্য গোপন করছে, বলে মন্তব্য করেন নাসরুল্লাহ।

হাসান নাসরুল্লাহ যোগ করেন, হিজবুল্লাহ এই হামলায় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেনি তবে ভবিষ্যতে এমনটি ব্যবহারের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া হয়নি।

হিজবুল্লাহ প্রধান জানান, তাদের সশস্ত্র শাখার কমান্ডার ফুয়াদ শুকরের হত্যার প্রতিশোধ নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ফুয়াদ শুকরের হত্যার প্রতিশোধ সফল হয়েছে, যেমনটি আমরা পরিকল্পনা করেছিলাম। যারা দেশের দক্ষিণে তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছিলেন, তারা এখন বাড়িতে ফিরতে পারেন। তবে তিনি ইঙ্গিত দেন যে, যদি হিজবুল্লাহ তাদের অপারেশনের ফলাফল এবং ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়ায় সন্তুষ্ট না হয়, তবে তারা আবারো প্রতিক্রিয়া জানানোর অধিকার রাখে।

হাসান নাসরুল্লাহ সতর্ক করে দেন যে, তার দল গাজা উপত্যকা এবং তার বাসিন্দাদের পাশাপাশি পুরো ফিলিস্তিনকে রক্ষার কাজ অব্যাহত রাখবে। পরিস্থিতি এবং হতাহতের পরিমাণ যাই হোক না কেন রোববারের অপারেশন পরিকল্পিত এবং বাস্তবায়িত হয়েছে। লেবাননের ওপর প্রচণ্ড চাপ থাকা সত্ত্বেও এটি করে দেখিয়েছে হিজবুল্লাহ।

নাসরুল্লাহ মনে করেন, হিজবুল্লাহর পদক্ষেপ গাজার যুদ্ধবিরতি আলোচনায় ফিলিস্তিনপন্থীদের জন্য উপকারি হতে পারে এবং ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রকে একটি স্পষ্ট বার্তা দিতে পারে। গাজাকে যারা সমর্থন করছে তাদের চুপ করানোর যেকোনো প্রচেষ্টা ব্যর্থ হবে বলে মন্তব্য করেন নাসরুল্লাহ।