পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির অবরোধ, তৃণমূলের সঙ্গে সংঘর্ষ

কলকাতাসহ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় বিজেপি ও তৃণমূল কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। কোথাও কোথাও বিজেপি কর্মীদের সঙ্গে পুলিশেরও সংঘর্ষ হয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় রেল ও রাস্তা অবরোধ করেছে বিজেপি কর্মী, সমর্থকরা। অনেক জায়গায় বেধড়ক লাঠি চালিয়ে পুলিশ তাদের উঠিয়ে দেয়। 

এর মধ্যে কলকাতার কাছে ভাটপাড়ায় গুলি চলেছে। বিজেপির অভিযোগ, তৃণমূলের লোকেরা তাদের কর্মীদের ওপর গুলি চালায় ও বোমা মারে। গুলিতে রবি সিং নামে একজন গুরুতর আহত হয়েছেন। 

মঙ্গলবার নবান্ন অভিযানকে ঘিরে পুলিশের বাড়াবাড়ির প্রতিবাদে ১২ ঘণ্টার পশ্চিমবঙ্গ বনধ ডাকে বিজেপি। সেই সঙ্গে তারা আরজি করে ধর্ষিতা ও খুন হওয়া চিকিৎসকের  প্রতি ন্যায়ের দাবিও তুলেছে।

বুধবার বিভিন্ন জায়গায় রেল অবরোধ করেন বিজেপি কর্মীরা। এর ফলে শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখায় ট্রেন চলাচল ব্যাহত হয়েছে। লক্ষ্মীকান্তপুর সেকশনে অনেক জায়গায় রেলের ওভারহেড তারে কলাপাতা ফেলে দেয়া হয়। ফলে ট্রেন চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। শিয়ালদহ থেকে নামখানা, লক্ষ্মীকান্তপুর, কাকদ্বীপে ট্রেন চলাচল অনেকক্ষণ বন্ধ ছিল। 

হুগলি স্টেশনে বিজেপি সমর্থকরা রেললাইনে শুয়ে পড়ে বিক্ষোভ দেখাতে থাকে। এর ফলে বেশ কিছুক্ষণ রেল চলাচল বন্ধ থাকে। সকাল ছয়টা থেকে বনগাঁয় বিজেপি বিধায়ক অশোক কীর্তনিয়ার নেতৃত্বে রেল অবরোধ শুরু হয়। মুর্শিদাবাদের বেশ কয়েকটি স্টেশনেও রেললাইন অবরোধ করেছে বিজেপি। কৃষ্ণনগরেও বিজেপি কর্মীরা রেল অবরোধ করে। সোনারপুরে রেল অবরোধকে কেন্দ্র করে বিজেপি কর্মী ও পুলিশের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়। কর্মীরা লাইনে শুয়ে পড়ে। পুলিশ তাদের জোর করে তুলতে চায়।

এছাড়া বেশ কয়েকটি জেলায় সড়ক অবরোধ করা হয়। বালুরঘাটে বাসস্ট্যান্ডের সামনে সড়ক অবরোধ করে বিজেপি কর্মী-সমর্থকরা। কলকাতায় টালা ব্রিজ অবরোধ করে বিজেপি কর্মীরা টায়ার জ্বালায়। এসপ্ল্যানেড ও শ্যামবাজারে তারা জোর করে মেট্রো স্টেশনের ঝাঁপ ফেলতে যায়। পুলিশ বিজেপি কর্মীদের গ্রেপ্তার করে।

এর মধ্যে সকাল নয়টার কিছু পরে ভাটপাড়ায় গুলি চলে। রবি সিং বলে একজনের কানের পাশে গুলি লাগে। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সাবেক বিধায়ক অর্জুন সিং দাবি করেছেন, ঘোষপাড়া রোডে পুলিশের উপস্থিতিতে গুলি চলেছে। দুজনের গুলি লেগেছে। একজনের মাথা ঘেঁষে গুলি চলে গেছে। বিজেপি কর্মী রবি সিংয়ের কানে গুলি লেগেছে। অভিযোগের আঙুল তৃণমূলের দিকে।

দুর্গাপুরের বেনাচিতিতে বিজেপি ও তৃণমূলের সদস্যদের মধ্যে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। বিজেপি বিধায়ক এখানে রাস্তায় নেমেছিলেন। তখন সেখানে তৃণমূলের বনধ বিরোধী মিছিল শুরু হয়। দুই মিছিল মুখোমুখি আসে। শুরু হয় সংঘর্ষ। বিধায়কসহ একাধিক বিজেপি কর্মী আহত হন।

মালদহে বিজেপি ও তৃণমূল কর্মীদের সংঘর্ষ হয়। সেখানেও দুই দলের কর্মীরা মিছিল বের করেছিল। তারপর তাদের মধ্যে হাতাহাতি হয়।

বসিরহাটে তৃণমূল ও বিজেপি কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। বিজেপির রাস্তা অবরোধকে কেন্দ্র করে ঝামেলা শুরু হয়। অভিযোগ, বিজেপির রাখা চেয়ার লাথি মেরে সরিয়ে দেন তৃণমূলের নেতারা। প্রবল উত্তেজনা দেখা দেয়। তারপর পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি সামলায়। 

বুনিয়াদপুরে তৃণমূল কর্মীদের বিরুদ্ধে তাদের দুই কর্মীর মাথা ফাটানোর অভিযোগ তুলেছে বিজেপি। তৃণমূল যথারীতি এর দায় অস্বীকার করেছে।  

মেদিনীপুরের বেলদায় পুলিশের সঙ্গে বিজেপি কর্মীদের ঝামেলা হয়। বিজেপি কর্মীরা বেলদায় রাস্তা অবরোধ করেছিলেন। তারা বাসের সামনে শুয়ে পড়েন। পুলিশ আসে। তারা জোর করে বিজেপি কর্মীদের সরিয়ে দিতে যায়। বিজেপি কর্মীদের সঙ্গে  পুলিশের ঝামেলা হয়। 

মানকুন্ডু স্টেশনেও পুলিশের সঙ্গে বিজেপি কর্মীদের বাকবিতণ্ডা ও সংঘর্ষ হয়। বিজেপি কর্মীরা রেললাইন অবরোধ করে রেখেছিল। পুলিশ গিয়ে বেধড়ক লাঠি চালিয়ে তা খালি করার চেষ্টা করে। বিজেপি কর্মীরা পাথর ছোড়ে। বাঁকুড়াতেও বনধকে ঘিরে পুলিশের সঙ্গে বিজেপি কর্মীদের সংঘর্ষ হয়। 

কলকাতার বিভিন্ন জায়গায় বিজেপির বনধকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়ায়। চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউতে বিজেপি কর্মীরা ব্যারিকেড ভাঙলে তাদের উপর লাঠিচার্জ করে পুলিশ। অসংখ্য বিজেপি কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়। 

শ্যামবাজারে আটক করা হয় সাবেক সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়কে। বিজেপি নেতা সজল ঘোষ শিয়ালদহে দোকান বন্ধ করার অনুরোধ করলে তৃণমূল কর্মীদের সঙ্গে তার ঝামেলা হয়। বাগুইআটিতেও পুলিশের সঙ্গে বিজেপি কর্মীদের অশান্তি হয়। বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রচুর বিজেপি কর্মীকে আটক করা হয়। 

কলকাতার মেয়ো রোডে তৃণমূলের প্রতিষ্ঠা দিবসের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কলকাতার মেয়ো রোডে তৃণমূলের প্রতিষ্ঠা দিবসের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। 

অন্যদিকে, বনধের বিরোধিতা করে হাইকোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা করা হয়েছিল। কিন্তু মামলাকারী আইনজীবীর নাম শুনেই প্রধান বিচারপতি শিবজ্ঞানম তা খারিজ করে দেন। তিনি আইনজীবীর ৫০ হাজার টাকা জরিমানার নির্দেশ দেন।

বিচারপতি অমৃতা সিনহার আদালত থেকে একটি মামলা সরিয়ে নেয়ার জন্য জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেছিলেন ওই আইনজীবী। আদালত সূত্রে জানা যায়, সেক্ষেত্রেও বেশ কিছু ভুল তথ্য দিয়েছিলেন তিনি। মামলার শুনানিতে প্রধান বিচারপতির কাছে ভর্ৎসিত হয়েছিলেন তিনি। সেই বিষয়টি উল্লেখ করে এই মামলা খারিজ করে দেন তিনি।