ট্রাম্পের রানিং মেট কে এই জেডি ভ্যান্স?
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আবারো বিজয়ী হয়েছেন রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। নির্বাচনে ট্রাম্পের ‘রানিং মেট’ হিসাবে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদের জন্য ভোটের ময়দানে লড়েছেন জেডি ভ্যান্স।
এককালে ট্রাম্পের ‘কড়া সমালোচক’ হিসাবে পরিচিত ভ্যান্স সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনের প্রচারাভিযানের সময় পরবর্তী রিপাবলিকান প্রার্থী হিসাবে নিজেকে ইতোমধ্যেই প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেছেন। তবে কে এই জেডি ভ্যান্স। ডোনাল্ড ট্রাম্পের কড়া সমালোচক থেকে তার রানিং মেট হয়ে ওঠা এবং নির্বাচনে জয়ের মাধ্যমে জেডি ভ্যান্সের নতুন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হতে যাওয়ার এই সফর বেশ আকর্ষণীয়।
ব্যক্তিগত জীবন
জেডি ভ্যান্সের জন্ম ওহাইয়োর মিডলটাউনে। তার নাম ছিল জেমস ডোনাল্ড বোম্যান। তার ছেলেবেলার অভিজ্ঞতা খুব একটা সুখকর ছিল না। তার বাবা যে সময় বাড়ি ছাড়েন, তখন জেডি ভ্যান্সের বয়স খুবই কম আর মা লড়াই করছিলেন মাদকাসক্তির সঙ্গে। পরিস্থিতির কারণে প্রায়শই নানা-নানির বাড়িতে আশ্রয় নিতে হতো তাকে। পরে জেডি ভ্যান্সকে তার নানা-নানি দত্তক নেন। বর্তমানে তাদের পদবিটাই ব্যবহার করেন ভ্যান্স।
তার ছাত্রজীবন আর কর্মজীবন বেশ উল্লেখযোগ্য। মিডলটন হাইস্কুল থেকে পাস করার পর যুক্তরাষ্ট্রের মেরিন কর্পসে যোগ দেন। পরে ইরাকে মোতায়েন করা হয় তাকে। এরপর ওহাইয়ো স্টেট ইউনিভার্সিটি এবং ইয়েল ল স্কুল থেকে পড়াশোনা করেন। পরবর্তীতে ক্যালিফোর্নিয়ায় বিনিয়োগকারী হিসেবে কাজ শুরু করেন তিনি। জেডি ভ্যান্সের বেড়ে ওঠা এবং তার ব্যক্তিত্ব শ্রমজীবী ভোটারদের আকৃষ্ট করতে পারে ভেবেই তাকে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদের জন্য ডোনাল্ড ট্রাম্প মনোনীত করেছিলেন বলে মনে করা হয়।
ভ্যান্সের ভারতীয় সংশ্লিষ্টতা
ভ্যান্সের একটা ভারতীয় সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। তার স্ত্রী ঊষা চিলুকুরি ভারতীয় বংশোদ্ভূত। ২০১৩ সালে ইয়েল ইউনিভার্সিটিতে পড়াকালীন তাদের পরিচয় হয়।
সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইয়েল ল স্কুলে পড়ার সময় ‘শ্বেতাঙ্গ-অধ্যুষিত যুক্তরাষ্ট্রে সামাজিক অবক্ষয়’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় প্রথম দেখা হয় তাদের। ২০১৪ সালে বিয়ে করেন এই যুগল। তারপর অনেকটা পথ একসঙ্গে পেরিয়ে এসেছেন তারা। বর্তমানে এই দম্পতির তিন সন্তান রয়েছে– ইভান, বিবেক ও মিরাবেল।
হিলবিলি এলিজি দিয়ে ব্যাপক পরিচিতি
জেডি ভ্যান্স তার শৈশবে বেড়ে উঠার স্মৃতিকথা তুলে ধরেন হিলবিলি এলিজি নামের একটি বইতে, যা তাকে পরবর্তীতে বিখ্যাত করে তুলেছে। হিলবিলি এলিজি বইতে ওহিও ও কেনটাকি অঙ্গরাজ্যে ভ্যান্সের শৈশবকে চিত্রায়িত করা হয়েছে। এতে শ্বেতাঙ্গ দরিদ্র সম্প্রদায়ের মানুষের সমস্যাগুলোর ওপর আলোকপাত করেছেন লেখক জেডি ভ্যান্স। তিনি লেখেন, নিম্ন সামাজিক জীবনযাত্রায় দারিদ্র্য থেকে শুরু করে বিবাহবিচ্ছেদ ও মাদকাসক্তি পর্যন্ত রয়েছে, আমার বাড়ি ছিল যন্ত্রণার কেন্দ্রস্থল।
বইটি ২০১৬ সালের গ্রীষ্মে প্রকাশিত হয়েছিল। এটিকে শ্বেতাঙ্গ ও শ্রমিক-শ্রেণির মানুষের সমর্থনে ট্রাম্পের নির্বাচনি বিজয় ব্যাখ্যা করার একটি উপায় হিসেবে দেখা হয়েছিল। বইটি বেস্টসেলার অর্থাৎ সর্বাধিক বিক্রিত হয়।
ট্রাম্পের এক সময়ের কড়া সমালোচক
গত জুলাইয়ে ট্রাম্প যখন তার রানিং মেট বেছে নেয়ার কাজটা সীমিত করে নিয়ে এসেছিলেন, সেসময় ভ্যান্সের ২০১৬ সালে করা দুটি উদ্ধৃতি নতুন করে সামনে এসেছিল। সেগুলো হলো—‘মাই গড, কি একটা ইডিয়ট’ এবং ‘আমি তাকে নিন্দনীয় মনে করি’। তবে একপর্যায়ে ভ্যান্স অভিজাত শ্রেণির প্রতি ট্রাম্পের ঘৃণার বিষয়টি চিহ্নিত করেন। কয়েক বছর পরে ওহিওতে মার্কিন সিনেটের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সময় তিনি ট্রাম্পের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্রদের একজন হয়ে ওঠেন। তখন তার পুরানো সমালোচনা ট্রাম্পের সঙ্গে সম্পর্কের কোনো ক্ষতি করেনি। বরং, তিনি যেন ট্রাম্পের ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে পছন্দনীয় হতে নিজেকে মেলে ধরেন।
ক্যারিয়ারে স্ত্রীর বড় প্রভাব
ভ্যান্স ৩৮ বছর বয়সী ঊষাকে তার পক্ষের একজন ‘শক্তিশালী নারী’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। এই জুটির সাক্ষাৎ হয়েছিল ইয়েল ল স্কুলে। ২০১৪ সালে বিয়ে করেছিলেন তারা। তাদের দুটি ছেলে ও একটি মেয়ে রয়েছে। ভ্যান্সের স্ত্রী ঊষা একজন আইনজীবী। ভারতীয় অভিবাসী দম্পতির ঘরে তার জন্ম।
ভ্যান্স স্কুল ছেড়ে মেরিন কর্পসে যোগ দিয়েছিলেন
ভ্যান্স মেরিন কর্পসে চার বছর দায়িত্ব পালন করেন। এ সময় তিনি ইরাকেও কাজ করেছেন। পরে তিনি ওহিও স্টেট ইউনিভার্সিটির ইয়েল ল স্কুলে ভর্তি হন। এরপর তিনি ক্যালিফোর্নিয়ায় বিনিয়োগকারী হিসেবে কাজ করেন।
জাতীয় পর্যায়ে তার সবচেয়ে বড় মুহূর্ত সম্ভবত ভাইস প্রেসিডেন্ট টিভি বিতর্ক
ভ্যান্স নিউইয়র্ক সিটিতে মুখোমুখি হয়েছিলেন আরেক মধ্য-পশ্চিমাঞ্চলীয় মুখ ডেমোক্র্যাটিক ভাইস প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী টিম ওয়ালজের। এ বিতর্কে ভ্যান্সের মূল বার্তা ছিল কেন কমলা হ্যারিস দায়িত্বে থাকাকালে ২০২৪ সালের নির্বাচনি প্রচারে দেওয়া প্রতিশ্রুতিগুলোর একটিও বাস্তবায়ন করেননি। তবে ট্রাম্প গত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আসলেই হেরে গিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি অতটা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেননি, সরাসরি উত্তর দিতে অস্বীকার করেন।
গাজা-ইউক্রেন সহ অন্যন্য ইস্যুতে তার অবস্থান
সিনেটে তিনি নির্ভরযোগ্য কনজারভেটিভ (রক্ষণশীল) ভোটার হিসাবে পরিচিত তিনি। জনপ্রিয় অর্থনৈতিক নীতিকে সমর্থন করতে দেখা যায়। ইউক্রেনকে সহায়তার ক্ষেত্রে সংশয় প্রকাশ করেছেন ভ্যান্স।
ডেমোক্র্যাটিক নেতৃত্বাধীন চেম্বারে তার সংক্ষিপ্ত মেয়াদের কারণে, তার অনুমোদন করা বিল খুব কমই এগিয়ে গেছে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নীতি পরিবর্তনের বদলে ‘বার্তা পাঠানোই’ এই বিলগুলো উপস্থাপনের পেছনে উদ্দেশ্য ছিল বলে মনে করা হয়।
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে, গাজায় চলমান যুদ্ধের বিরুদ্ধে শিবির তৈরি হয়েছে বা প্রতিবাদ দেখানো হয়েছে এমন কলেজ এবং অনিবন্ধিত অভিবাসীদের নিয়োগকারী কলেজের জন্য ফেডারেল তহবিল থেকে যাওয়া টাকা আটকে দেওয়ার জন্য বিল উপস্থাপন করেছিলেন।
গত মার্চ মাসে এমন এক আইনের অনুমোদন করেছিলেন তিনি যেখানে বলা হয়েছিল, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য আইন অনুসরণ না করলে চীন সরকারকে মার্কিন মূলধন বাজার থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেবে।
গত জুলাইয়ে ন্যাশনাল কনজারভেটিজম কনফারেন্সে এক বক্তৃতায় তিনি বলেন, আমেরিকান গণতন্ত্রের জন্য আসল হুমকি হলো আমেরিকান ভোটাররা অভিবাসন কমানোর পক্ষে ভোট দিচ্ছে এবং আমাদের রাজনীতিবিদরা আমাদের আরও সংখ্যক অভিবাসীদের নিয়ে এসে আমাদের পুরস্কৃত করে চলেছেন।