অগ্নিগর্ভ মণিপুর, কারফিউ জারির পরও শান্ত হয়নি পরিবেশ

অগ্নিগর্ভ মণিপুর, কারফিউ জারির পরও শান্ত হয়নি পরিবেশ

অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি বিরাজ করছে ভারতের মণিপুরে। কারফিউ জারি করেও শান্ত করা যায়নি সেখানকার পরিস্থিতি। একের পর এক বাড়িতে ভাঙচুর, অগ্নি সংযোগের খবর পাওয়া গেছে। মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংহের পৈতৃক বাড়িতেও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। মণিপুরের পরিস্থিতি নিয়ে পর্যালোচনা করতে সোমবারই দিল্লিতে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে বসছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।

শুক্র এবং শনিবার মণিপুর থেকে ছয়টি মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে। মেইতেইরা মনে করছেন, ওই ছয়টি দেহ জিরিবাম থেকে অপহৃত তিন নারী ও তিন শিশুর। তারা একই পরিবারের সদস্য ছিলেন। তাদের অভিযোগ, কুকিরা এই ছয় জনকে অপহরণ করেছিল। যদিও মণিপুর সরকারের তরফে উদ্ধার হওয়া দেহের পরিচয় নিয়ে এখন পর্যন্ত সরকারি ভাবে কিছু জানানো হয়নি। ছয়টি দেহ উদ্ধারের পর থেকেই জিরিবাম জেলায় বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন মেইতেইরা। 

প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শনিবার পিডব্লিউডি মন্ত্রী গোবিন্দাস কন্ঠৌজাম, বিজেপি বিধায়ক ওয়াই রাধেশ্যাম, বিজেপি বিধায়ক পাওনাম ব্রজেন, কংগ্রেস বিধায়ক টিএইচ লোকশ্বরের বাড়িতে আগুন ধরানো হয়েছে। সে সময় মন্ত্রী, বিধায়ক এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা বাড়িতে ছিলেন না। ফাঁকা বাড়িতে ঢুকে বিক্ষোভকারীরা প্রথমে জিনিসপত্র ভাঙচুর করেন। তার বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেন বলে অভিযোগ। ইম্ফল পূর্বে লুয়াংশাংবামে মুখ্যমন্ত্রী বীরেনের পৈতৃক বাড়িতে হামলার অভিযোগও উঠেছে।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সেনাবাহিনী এবং আসাম রাইফেলসের জওয়ানদের এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে। বিক্ষোভ দমন করতে রবার বুলেট, কাঁদানে গ্যাস ছুড়েছে পুলিশ এবং নিরাপত্তা বাহিনী। তারপরেও মুখ্যমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন যাওয়ার পথে অবরোধ করেছেন বিক্ষোভকারীরা। রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে লোহার রড ফেলে রাখা হয়েছে। জিরিবাম, ইম্ফল পূর্ব, ইম্ফল পশ্চিমে কারফিউ জারি করা হয়েছে। ইম্ফল পশ্চিম, ইম্ফল পূর্ব, বিষ্ণুপুর, চূড়াচাঁদপুর-সহ মোট সাত জেলায় ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ইম্ফল পশ্চিম, ইম্ফল পূর্ব এবং বিষ্ণুপুর থেকে মোট ২৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। একাধিক পিস্তল, কার্তুজ এবং মোবাইল ফোন উদ্ধার করেছে পুলিশ।

ঘটনার সূত্রপাত গত সপ্তাহের শুরুতে। মণিপুরের জিরিবামে কুকি যোদ্ধা এবং সিআরপিএফ জওয়ানদের মধ্যে গুলি বিনিময় হয়। অভিযোগ, সেই সময় একদল কুকি যোদ্ধা মেইতেই সম্প্রদায়ের তিন নারী এবং তিন শিশুকে অপহরণ করে। নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে নিহত হন ১০ কুকি জঙ্গি। যদিও কুকি সম্প্রদায়ের দাবি, নিহত ১০ জন ছিলেন ‘গ্রামের স্বেচ্ছাসেবী’। তাদের দেহ মিজোরামে নিতে চেয়ে গত সোমবার থেকে শিলচরের হাসপাতালের মর্গ ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন কুকিরা। শনিবার সকালে পুলিশ ১০ জনের দেহ নিয়ে কুকি অধ্যুষিত চুরাচাঁদপুরের দিকে রওনা হলে তাদের ঘেরাও করেন কুকিরা। বিক্ষোভ দমন করতে লাঠি চালায় পুলিশ। তার মধ্যে ছয় জনের দেহ উদ্ধার ঘিরে শুরু হয় মেইতেইদের বিক্ষোভ।