ইসলামাবাদে বড় অপারেশনের আশঙ্কা
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের মুক্তির দাবিতে উত্তাল হয়ে উঠেছে পাকিস্তান। তার সমর্থকরা রাজধানী ইসলামাবাদের বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। সরকারি নিষেধাজ্ঞা এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর ধরপাকড় ও টিয়ার গ্যাসের শেল উপেক্ষা করে তারা সমাবেশস্থল ইসলামাবাদের ডি-চকে পৌঁছে গেছেন। কিছু কিছু জায়গায় ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) সমর্থক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংঘর্ষ হয়েছে। এখন পর্যন্ত নিরাপত্তাবাহিনীর চার সদস্যসহ ছয়জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
ইমরান খানের মুক্তির পাশাপাশি তার দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ মূলত সরকারের পদত্যাগ ও সংবিধানের ২৬তম সংশোধনী বাতিলের দাবি জানাচ্ছেন।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা বলছে, এমন পরিস্থিতিতে রাজধানীতে সেনা মোতায়েনের কথা জানিয়েছে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। একইসঙ্গে ইসলামাবাদের সব মার্কেট অবিলম্বে বন্ধ করতে বলা হয়েছে।
সরকার বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে বড় ধরনের অভিযান চালাতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কর্তৃপক্ষ পিটিআই সমর্থকদের বিরুদ্ধে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
আজ মঙ্গলবার বিকেলে কয়েক শ বিক্ষোভকারী সমাবেশস্থল ডি-চকে পৌঁছানোর পর আধাসামরিক বাহিনী রেঞ্জাররা স্বয়ংক্রিয় গুলি ছোড়ে। ভিড়কে ছত্রভঙ্গ করে এই রেড জোনে প্রবেশের মুখের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পায় তারা। সন্ধ্যায় রেঞ্জার্স কর্মীরা ডি-চকে অবস্থান নিয়েছেন। ধারণা করা হচ্ছে পিটিআই সমর্থকরা আবারও ডি-চকের কাছাকাছি যাওয়ার চেষ্টা করবেন।
ইমরান খানের স্ত্রী বুশরা বিবির নেতৃত্বে কর্মী-সমর্থকের বিশাল একটি বহর এখনও ইসলামাবাদ থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে রয়েছে। কর্তৃপক্ষের কঠোর ব্যবস্থার কারণে এই বহরের ইসলামাবাদ অভিমুখী গতি কমিয়ে দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে, পিটিআই সমর্থকরাও অনঢ়। তারা বলছেন, দাবি আদায়ে যতদিনই সময় লাগুক তারা ইসলামাবাদে থাকবেন। দাবি না মানা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কথা বলছেন তারা।
পিটিআই মুখপাত্র জুলফিকার বুখারির বরাতে রয়টার্স জানিয়েছে, নিরাপত্তাবাহিনীর গুলিতে তাদের দুইজন বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৩০ জন। তারা স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে।
বৈশ্বিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, পাকিস্তান সরকারকে অবশ্যই বিক্ষোভকারীদের অধিকার সম্পূর্ণরূপে রক্ষা করতে হবে। দেখামাত্রই গুলি করার আদেশ প্রত্যাহার করতে হবে। সেনাবাহিনীকে অতিরিক্ত ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।
সোমবার বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কোর তিন দিনের সফরে পাকিস্তান এসেছেন। এ জন্য রাজধানীতে অতিরিক্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছিল পাকিস্তান সরকার। রবিবার দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন একটি প্রতিনিধিদলও পাকিস্তানে আসে।
বিক্ষোভের নিন্দা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ বলেছেন, ‘এই আন্দোলন শান্তিপূর্ণ নয়, সহিংস হয়েছে।’ দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিশ্চিত করেছেন, এ ঘটনায় অন্তত চার নিরাপত্তাকর্মী নিহত হয়েছেন।
আল জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, ইমরান খানের দলের কর্মসূচি ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে গত সপ্তাহ থেকেই পাকিস্তানের একাধিক শহরে ইন্টারনেট বিঘ্নিত হওয়ার খবর পাওয়া যায়।
দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত শনিবার এক বিবৃতিতে জানায়, কেবলমাত্র নিরাপত্তাজনিত হুমকি তৈরি হয় এমন এলাকায় ওয়াইফাই এবং মোবাইল নেটওয়ার্ক স্থগিত করা হবে।
তবে ইসলামাবাদ থেকে প্রায় ১ হাজার ৪০০ কিলোমিটার দূরের করাচিতে ইন্টারনেট ব্যাঘাতের খবর পাওয়া গেছে, যেখানে বিক্ষোভ হচ্ছে না।
গত ১৩ নভেম্বর ইমরান খান এই সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছিলেন। তিনি এটিকে ‘চূড়ান্ত আহ্বান’ বলে উল্লেখ করেন। তিনি দাবি করেন, ২৬তম সংশোধনী বাতিল ও জনগণের চুরি যাওয়া ম্যান্ডেট পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য এই প্রতিবাদ।
এরপর সরকারি নিষেধাজ্ঞা ও বাধা উপেক্ষা করে গতকাল সোমবার ইমরান সমর্থকরা রাজধানী ইসলামাবাদের কাছে পৌঁছে যান। আরো কয়েক দিন আগে থেকেই সড়কের ব্যারিকেড সরিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তারা ইসলামাবাদ অভিমুখে যাত্রা করেছিলেন। গতকাল সেখানে একজন পুলিশ সদস্যের মৃত্যুর খবর জানায় রয়টার্স। সেই সঙ্গে পিটিআই অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীর আহতের খবর জানায়।
গত বছরের আগস্টে ইমরান খানকে কারাগারে পাঠানোর পর থেকে পিটিআই তার মুক্তির দাবিতে নানা কর্মসূচি পালন করেছে। অক্টোবরের শুরুর দিকে ইসলামাবাদে দলটির সাম্প্রতিকতম বিক্ষোভ সহিংস রূপ নেয়।