বাংলাদেশিদের অভাবে শিলিগুড়িতে হাহাকার, থমকে গেছে জীবিকা

বাংলাদেশিদের অভাবে শিলিগুড়িতে হাহাকার, থমকে গেছে জীবিকা

বাংলাদেশিদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে যাওয়ায় ভারতের পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশের শিলিগুড়িতে ব্যবসায়ীদের মাঝে হাহাকার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সেখানকার ব্যবসা-বাণিজ্য ও বাসিন্দাদের জীবিকায় দেখা দিয়েছে চরম সংকট। এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে অনেককে কিছুদিনের মধ্যে পথে নামতে হবে বলে জানিয়েছে শিলিগুড়ির ব্যবসায়ীরা। সংকটের সমাধানে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারকে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

বৃহস্পতিবার ভারতীয় বার্তা সংস্থা এএনআই বাংলাদেশিদের অভাবে শিলিগুড়ির অর্থনীতিতে দেখা দেওয়া সংকট নিয়ে সরেজমিন প্রতিবেদন করেছে। এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্কের টানাপোড়েন ইস্যুতে এবার শিলিগুড়ির অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। বাংলাদেশি নাগরিকদের উপস্থিতি কমে যাওয়ায় শিলিগুড়ির ব্যবসা-বাণিজ্যে ধস নেমেছে।

এএনআই বলছে, পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়ি একটি পর্যটন গন্তব্য হিসাবে ব্যাপক জনপ্রিয় এবং পরিচিত। উত্তর-পূর্বের অন্যান্য সব রাজ্যকে ভারতের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে সংযুক্ত করেছে শহরটি। শিক্ষা, চিকিৎসা ও বাণিজ্যের অন্যতম প্রধান কেন্দ্রও শিলিগুড়ি। পশ্চিমবঙ্গে শিলিগুড়ির কৌশলগত গুরুত্ব অপরিসীম। এই শিলিগুড়ির মাধ্যমে তিনটি আন্তর্জাতিক সীমান্ত নেপাল, বাংলাদেশ এবং ভুটানে সুবিধাজনক প্রবেশাধিকার রয়েছে।

পার্শ্ববর্তী দেশগুলো থেকে বহু মানুষ এখানে বেড়াতে আসেন। দর্শনার্থীদের মধ্যে বাংলাদেশি নাগরিকদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য। শিলিগুড়ি হয়ে দার্জিলিংয়ে যান বহু বাংলাদেশি পর্যটক। কিন্তু বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতির পর ভিসা ইস্যুর জন্য ভারতে আসা বাংলাদেশিদের সংখ্যা ব্যাপক হ্রাস পেয়েছে; যার প্রভাব পড়েছে শিলিগুড়ির হোটেল শিল্পে।

সেখানকার বেশির ভাগ নামিদামি হোটেল ফাঁকা। অনেক বাংলাদেশি বুকিং বাতিল করছেন। শিলিগুড়ি-ঢাকা রেগুলার বাস সার্ভিস পরিচালনাকারী বাস অপারেটরগুলোও গত সাত দিনে একজনও যাত্রী পায়নি। ফলে বাংলাদেশের সঙ্গে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন শিলিগুড়ির ব্যবসায়ীরা।

শিলিগুড়ির একটি হোটেলের ব্যবস্থাপক এএনআইকে বলেছেন, ‘‘শিলিগুড়ি সীমান্তের খুব কাছে অবস্থিত। শিক্ষা ও চিকিৎসা ব্যবস্থার কেন্দ্রবিন্দুও এই শহর। পার্বত্য অঞ্চল হওয়ায় পর্যটকরা শিলিগুড়িতে ভিড় করেন।

শহরটির অপর হোটেল ব্যবসায়ী বিপিন কুমার গুপ্তা এএনআইকে বলেন, ‘‘প্রতিবেশী হিসেবে বাংলাদেশের যে কোনও ইস্যু ভারতকেও জর্জরিত করে। বাংলাদেশিরা ভারতে আসা নিয়ে তাদের পরিকল্পনা বাতিল করায় শিলিগুড়ির শিক্ষা ও চিকিৎসা পর্যটন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এতে হোটেল ব্যবসায় মারাত্মক প্রভাব পড়ছে।’’

তিনি বলেছেন, ‘‘বাংলাদেশ একটি প্রতিবেশী দেশ। আশপাশে যে সমস্যা, অশান্তি বা অন্য কিছু দেখা দেবে, তার সরাসরি প্রভাব পড়বে আপনার এখানে। তাই আমাদের শিলিগুড়ি শহরে বেশি প্রভাব পড়ছে বলে মনে হচ্ছে। কারণ এর বেদনা ও অভিজ্ঞতা আমরা সরাসরি অনুভব করতে পারি। আর এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্যে, আমাদের জীবিকার ওপর।’’

বিপিন কুমার বলেন, ‘‘গত আগস্ট মাস থেকে পরিস্থিতির অবনতি হতে থাকে। আমি সরকারের কথা বলব না। কিন্তু খারাপ রাজনৈতিক পরিবেশ আমাদের ব্যবসাকে প্রভাবিত করছে। কারণ সেখান থেকে নতুন ভিসা আপডেট করা হচ্ছে না। কাউকেই নতুন ভিসা দেওয়া হচ্ছে না।’’

তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশিরা দার্জিলিং, শিলিগুড়ি বা কালিম্পংয়ে পড়াশোনা, কেনাকাটা অথবা কেবল ঘুরে বেড়ানোর জন্য আসেন। কয়েকটি বাংলাদেশি পর্যটক গ্রুপ, যারা ছয় মাস আগে হোটেলে রুম বুক করেছিলেন, তারাও তাদের পরিকল্পনা বাতিল করেছেন।’’

শিলিগুড়ির একটি হোটেলের ব্যবস্থাপক বিকাশ দাস বলেন, তারা সকলেই চান দু’দেশের সম্পর্ক স্বাভাবিক হোক। তিনি বলেন, ‘‘আমরা চাই দুই দেশের সম্পর্ক স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসুক; যাতে বাংলাদেশ থেকে আগের মতো অতিথিরা এখানে আসেন।’’

ইন্দো-বাংলাদেশ বাস অপারেটর শিবপ্রসাদ ঘোষ এএনআইকে বলেন, ‘‘আগে ঢাকা থেকে পর্যটকে পূর্ণ থাকতো বাস। কিন্তু এবার আমরা একজন যাত্রীও পাইনি।’’ তিনি বলেন, ‘‘আমি পরিবহনের কাজ করি। আমরা শিলিগুড়ি থেকে বাংলাদেশের ঢাকা পর্যন্ত যাই। আমরা এখন কাজ করতে পারছি না। তারা যদি ভিসা না দেয়, তাহলে মানুষ এখানে আসবে কীভাবে? বাসগুলো এখন কাজ করছে না, লোকসান গুনছে। আমরা চাই এই সমস্যা সমাধানে দুই দেশ একযোগে কাজ করুক। তারা সংলাপ ও কূটনীতিতে ফিরে এলে সবার জন্যই মঙ্গলজনক হবে।’’

সূত্র: এএনআই।