ইসরায়েলে হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর দাবি হুথিদের
দখলদার ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে হাইপারসনিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে ইরান-সমর্থিত ইয়েমেনের সশস্ত্র বিদ্রোহীগোষ্ঠী হুথি। গোষ্ঠীটি জানিয়েছে, ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন ও গণহত্যার প্রতিবাদে এই হামলা চালিয়েছে তারা।
তবে ইসরায়েলের দাবি, ইয়েমেন থেকে নিক্ষেপ করা ক্ষেপণাস্ত্রটি ইসরায়েলে প্রবেশের আগেই আটকে দিয়েছে তারা। মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মধ্য ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে তারা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে বলে ইয়েমেনের হুথি গোষ্ঠী জানিয়েছে। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী গাজায় আগ্রাসন বন্ধ না করা পর্যন্ত দেশটির বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে ইরান-সমর্থিত এই সশস্ত্র গোষ্ঠীটি।
হুথি সামরিক মুখপাত্র ইয়াহিয়া সারি টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে বলেছেন, “প্যালেস্টাইন ২” নামে একটি হাইপারসনিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে সোমবারের এই হামলাটি পরিচালিত হয়েছিল।
হুথিরা বলেছে, ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় উপত্যকায় ইসরায়েলি আগ্রাসন ও গণহত্যার প্রতিবাদে এই আক্রমণটি চালানো হয়েছে, যেখানে ইসরায়েল এক বছরেরও বেশি সময় ধরে আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছে এবং ৪৫ হাজারেরও বেশি লোককে হত্যা করেছে।
তবে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, ইয়েমেনের ভূখণ্ড থেকে উৎক্ষেপণ করা একটি ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলে প্রবেশের আগেই আটকে দেওয়া হয়েছে। একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, “ইন্টারসেপশনের পর ক্ষেপণাস্ত্রের টুকরো পড়ার আশঙ্কায় এ সংক্রান্ত সতর্কতাও সক্রিয় করা হয়েছিল।”
ইসরায়েলি মিডিয়া জানিয়েছে, ইয়েমেন থেকে নিক্ষেপ করা হুথিদের এই ক্ষেপণাস্ত্রটি ইসরায়েলের বৃহত্তম শহর তেল আবিবজুড়ে সাইরেন বেজে ওঠে।
অবশ্য হুথিরা নিজেদেরকে ইয়েমেনের সরকারি সামরিক বাহিনী হিসাবে উপস্থাপন করে থাকে এবং হামলার বিষয়ে আরও বিশদ বিবরণ প্রদান না করেই অপারেশনটি “সফলভাবে তার উদ্দেশ্য অর্জন করেছে” বলেও উল্লেখ করেছে।
এর আগে চলতি বছরের মার্চে হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা চালানোর দাবি করেছিল ইয়েমেনের সশস্ত্র বিদ্রোহীগোষ্ঠী হুথি। সেসময় গোষ্ঠীটি জানিয়েছিল, ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৯ হাজার ৮০০ কিলোমিটার গতিতে লক্ষ্যে পৌঁছাতে সক্ষম এই ক্ষেপণাস্ত্রটি সলিড-জ্বালানিচালিত।
প্রসঙ্গত, গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধের প্রতিবাদে গত বছরের নভেম্বর থেকে লোহিত সাগর ও এডেন উপসাগরে পশ্চিমা বিভিন্ন জাহাজে হামলা চালিয়ে আসছে হুথিরা। ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন জানিয়ে সেসময় থেকে লোহিত সাগর ও এডেন উপসাগরের বাব আল মান্দাব এলাকায় চলাচলকারী বাণিজ্যিক জাহাজগুলোতেও ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা শুরু করে গোষ্ঠীটি।
প্রথম পর্যায়ে কেবল ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত জাহাজগুলোতেই আক্রমণ চালানো হচ্ছিল। কিন্তু ডিসেম্বরে যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যের যৌথ বাহিনী হুথিদের লক্ষ্য করে বিমান অভিযান শুরুর পর থেকে ইসরায়েলের পাশাপাশি এই দুই দেশের সঙ্গে সম্পর্কিত বাণিজ্যিক জাহাজগুলোতেও হামলা চালানো শুরু করে হুথিরা।
অবশ্য গত সেপ্টেম্বরে ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে একটি হাইপারসনিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছিল হুথিরা। সেসময় ইসরায়েলে আঘাত হানার আগে ক্ষেপণাস্ত্রটি ২ হাজার ৪০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেয় এবং ইয়েমেন থেকে দখলদার ইসরায়েলে পৌঁছাতে ক্ষেপণাস্ত্রটির সময় লেগেছিল মাত্র সাড়ে ১১ মিনিট।
এই ক্ষেপণাস্ত্র আসার খবরে সেসময় ইসরায়েলে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ওই সময় ২০ লাখ ইসরায়েলি বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান নেন। দখলদার ইসরায়েলের এত মানুষ এর আগে কখনও একসঙ্গে আশ্রয় কেন্দ্রে যাননি।
সেই ঘটনার তিন মাস পর আবারও ইসরায়েলি ভূখণ্ড লক্ষ্য করে হাইপারসনিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করল হুথি বাহিনী।