‘পরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বিষয়ে সতর্ক ছিলেন না টিউলিপ’

টিউলিপ সিদ্দিক

গণআন্দোলনের মুখে বাংলাদেশের রাষ্ট্র ক্ষমতা শুধু হাতছাড়াই হয়নি, দেশ ছেড়ে পালাতে হয়েছিল শেখ হাসিনাকে। গত আগস্টে তার ও তার নেতৃত্বাধীন দল আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। যদিও ভারতে আশ্রয় নিয়ে আছেন হাসিনা, তবে আগস্টের পর একে একে সব হারাতে চলেছেন তিনি। চরম মূল্য দিতে হচ্ছে তার পরিবারের সদস্যদেরও।

সবশেষ যেমন হাসিনার বোন দুর্নীতিতে অভিযুক্ত শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিককে যুক্তরাজ্যের সিটি মিনিস্টারের (ইকোনমিক সেক্রেটারি টু দ্য ট্রেজারি অ্যান্ড সিটি মিনিস্টার) পদ থেকে ইস্তফা দিতে হয়েছে। বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার রাতে নিজের পদত্যাগের কথা জানান টিউলিপ।

লেবার পার্টির মনোনয়নে টানা চতুর্থবারের মতো যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হওয়া টিউলিপ তার খালা শেখ হাসিনার কারণে বেশ বিপাকে আছেন। সম্প্রতি বাংলাদেশে দুর্নীতির একটি মামলায় তার মা, ভাই বোন ও খালার পাশাপাশি তাকেও অভিযুক্ত করা হয়েছে।

শেখ হাসিনার সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বেশ কয়েকজনের সম্পত্তি ব্যবহারের অভিযোগও উঠেছে টিউলিপের বিপক্ষে। আর এসব ঘটনার প্রেক্ষিতেই ক্রমবর্ধমান চাপের পর যুক্তরাজ্য ট্রেজারি মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিক পদত্যাগ করেছেন।

তবে টিউলিপ সিদ্দিক বরাবরই এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। হ্যাম্পস্টেড এবং হাইগেটের লেবার এমপি টিউলিপ সিদ্দিক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ের স্টারমারের স্ট্যান্ডার্ডস উপদেষ্টা স্যার লরি ম্যাগনাসের কাছে পুরো ঘটনা তুলে ধরেছিলেন। সেই সাথে জোর দিয়ে বলে ছিলেন যে, তিনি কোনও ভুল করেননি।

মন্ত্রীসভায় টিউলিপের দায়িত্বের মধ্যে যুক্তরাজ্যের আর্থিক বাজারে দুর্নীতির মোকাবিলা করা অন্তর্ভুক্ত ছিল। অথচ গত মাসে তার পরিবারের বিরুদ্ধে বাংলাদেশে অবকাঠামোগত ব্যয় থেকে ৩.৯ বিলিয়ন পাউন্ড পর্যন্ত আত্মসাতের অভিযোগের তদন্তে তার নামও প্রকাশ করা হয়।

সেই সঙ্গে টিউলিপ সিদ্দিক তার খালার মিত্রদের সাথে যুক্ত লন্ডনের সম্পত্তি ব্যবহারের বিষয়ে তীব্র তদন্তের মুখোমুখি হন।

টিউলিপের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে স্যার কিয়ার বলেছেন, তার জন্য "দরজা খোলা রয়েছে।" মন্ত্রীসভা মানদণ্ডের স্বাধীন পরামর্শক স্যার লরি ম্যাগনাস বলেছেন যে তিনি "কোনও অনিয়মের প্রমাণ পাননি" যা টিউলিপের সাথে সম্পর্কিত।

প্রধানমন্ত্রীর কাছে এক চিঠিতে স্যার লরি বলেছেন: “রেকর্ডের অভাব এবং সময়ের ব্যবধানে, দুর্ভাগ্যবশত, আমি মিডিয়ায় উল্লেখিত সমস্ত ইউকে সম্পত্তি-সংক্রান্ত বিষয় সম্পর্কে সম্পূর্ণ আত্মবিশ্বাস অর্জন করতে পারিনি।”

“তবে, আমি এমন কোনও অনিয়মের প্রমাণ চিহ্নিত করিনি যা লন্ডনের সম্পত্তি নিয়ে মিডিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণের বিষয়গুলিতে মিসেস সিদ্দিক এবং/অথবা তার স্বামীর কার্যক্রমের সাথে সম্পর্কিত।”

“একইভাবে, কোনও অস্বাভাবিক আর্থিক ব্যবস্থা পাওয়া যায়নি যা আওয়ামী লীগ (বা এর সম্পর্কিত সংস্থা) বা বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সাথে সম্পর্কিত মিসেস সিদ্দিকের সম্পত্তি মালিকানা বা ব্যবহারের সাথে সম্পর্কিত।”

"এছাড়াও, আমি কোনও প্রমাণ পাইনি যা ইঙ্গিত করে যে মিসেস সিদ্দিক এবং/অথবা তার স্বামীর আর্থিক সম্পদ, যা আমি প্রকাশিত পেয়েছি, বৈধ উপায় ছাড়া অন্য কোনও উৎস থেকে এসেছে।"

তবে তিনি বলেন, সিদ্দিকের পক্ষে এটি "দুঃখজনক" যে তিনি "তার পরিবারের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের সম্ভাব্য সুনামের ঝুঁকি সম্পর্কে আরও সতর্ক ছিলেন না।"