ইসরায়েলি অবরোধ, বাড়িঘরে ফিরতে পারছেন না ফিলিস্তিনিরা

ইসরায়েলি অবরোধ, বাড়িঘরে ফিরতে পারছেন না ফিলিস্তিনিরা

গাজা উপত্যকার উত্তর অংশে বাস্তুচ্যুত হাজার হাজার ফিলিস্তিনি তাদের নিজস্ব বাড়িঘরে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করছেন, কিন্তু ইসরায়েলি সেনাবাহিনী তাদের জন্য সড়ক বন্ধ রেখেছে, ফলে তারা রাস্তায় অবস্থান নিয়েছেন এবং দীর্ঘ সময় ধরে সেখানে অপেক্ষা করছেন। গাজায় চলমান যুদ্ধে তাদের বাড়িঘর, পরিবার, জীবনযাত্রা সব কিছু হারিয়ে তারা এখনো তাদের পুরনো ঠিকানায় ফিরে যাওয়ার জন্য সংগ্রাম করছেন। কিন্তু ইসরায়েলি বাহিনী তাদের জন্য সড়ক মুক্তি দিচ্ছে না এবং ফলে তারা বাধ্য হয়ে বিভিন্ন জায়গায় রাত কাটাচ্ছেন, অনেকেই নিজেদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে রাস্তায় বসে আছেন।

এই পরিস্থিতিতে, কয়েকদিন ধরে উত্তর গাজার প্রধান সড়ক সালাউদ্দিন সড়কসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সড়কে তেমন কোনও কার্যক্রম নেই। ফিলিস্তিনিরা, যাদের অধিকাংশই হামাসের সঙ্গে যুদ্ধরত, তারা চুক্তির অধীনে ফিরে যাওয়ার অধিকার পেতে চাচ্ছেন। যুদ্ধবিরতির চুক্তির শর্ত ছিল—ফিলিস্তিনিরা তাদের বসবাসের জায়গায় ফিরবে এবং যুদ্ধের সময় বাস্তুচ্যুতদের পুনর্বাসন হবে। কিন্তু হামাসের বিরুদ্ধে চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে, ইসরায়েল এই সড়কগুলো খুলতে অস্বীকার করছে। ইসরায়েল বলছে, হামাস তাদের কাছে জীবিত ইসরায়েলি বন্দিদের তালিকা সরবরাহ করতে ব্যর্থ হয়েছে এবং এছাড়া, ইসরায়েলের দাবি, তারা আরেকটি ইহুদি নারী নাগরিকের মুক্তিও করতে পারেনি। এইসব কারণে তারা ক্রসিংগুলো বন্ধ রেখেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই অবরোধের কারণে যুদ্ধবিরতির বাস্তবায়নে জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। কিছু বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি, যারা সড়কে বসে আছেন, তাদের আশঙ্কা, গাজায় ফেরার পথে তাদের বাড়ি কি এখনও নিরাপদে রয়েছে, নাকি তা পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। তামার আল-বুরাই নামের একজন বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি বলেছেন, “আমরা জানি না, বাড়ির অবস্থা কী, তবে তবুও ফেরার আশা ছাড়ছি না।”

এদিকে, আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে এই পরিস্থিতি আরও সংকটজনক হয়ে উঠছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্য অনুযায়ী, তিনি চান আরও বেশি ফিলিস্তিনি শরণার্থীকে আশ্রয় দেওয়া হোক মিসর এবং জর্ডানে, কারণ তার মতে, গাজার পরিস্থিতি এখন একেবারে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। তিনি জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহর সঙ্গে আলোচনা করেছেন এবং বলেছেন, “এখানে বসবাস করার অবস্থা নেই। ১৫ লাখ ফিলিস্তিনি মিসর নিতে পারে এবং পুরো জায়গাটি পরিষ্কার করে ফেলতে হবে।”

কিন্তু ট্রাম্পের এই বক্তব্য ফিলিস্তিনিদের কাছে ব্যাপকভাবে বিতর্কিত হয়ে উঠেছে। হামাসের এক নেতা বাসেম নাইম এই প্রস্তাবকে উচ্ছেদ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে দেখছেন এবং জানিয়েছেন, তারা এমন সমাধান গ্রহণ করবেন না, যার মাধ্যমে ফিলিস্তিনিদের তাদের ঐতিহ্যবাহী ভূমি থেকে স্থায়ীভাবে উচ্ছেদ করা হবে। তিনি বলেন, “যতই পুনর্গঠন কাজ হোক, একে আমরা সমর্থন করব না যদি এটি আমাদের মাতৃভূমি থেকে বের করে দেয়।”

এই অবস্থার মধ্যে, কিছু বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা স্থানীয় আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে বা খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাচ্ছেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ ট্রাকে, রিকশায় বা তাঁবুর মধ্যে আশ্রয় নিয়েছেন। তারা যুদ্ধের সময় যেখানে আশ্রয় পেয়েছিলেন, সেখান থেকে ফিরে যেতে চাচ্ছেন, কিন্তু ইসরায়েলি বাহিনী তাদের পথে বাধা সৃষ্টি করছে।

এই পরিস্থিতি আরও জটিল হচ্ছে যখন ইসরায়েলি বাহিনী তাদের সড়ক অতিক্রম করতে চাওয়া ফিলিস্তিনিদের ওপর গুলি চালিয়েছে। ২৫ জানুয়ারি রাতে আল-আওদা হাসপাতাল জানিয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে চারজন ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন। স্থানীয়দের অভিযোগ, তারা এই গুলি চালিয়েছে যাতে বাস্তুচ্যুতরা ক্রসিংয়ের দিকে না এগোতে পারে।

মাঝে মাঝে, আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গাজার জন্য বড় আকারের অস্ত্র সরবরাহের পরিকল্পনা করেছিলেন, যা পরে বাইডেন প্রশাসন স্থগিত করে দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এসব পরিস্থিতি গাজা পরিস্থিতির উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে তুলছে এবং সমাধান খুঁজে বের করার প্রক্রিয়া আরও কঠিন হয়ে উঠছে।

তবে, হামাস এবং অন্যান্য ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীগুলো যুদ্ধবিরতির শর্তে নিজেদের ভূখণ্ডে ফেরার দাবি জানিয়ে আসছে, তবে ইসরায়েলি বাহিনী তাদের বাধা দিচ্ছে, যা ভবিষ্যতে আরও বড় সংঘাতের সূচনা করতে পারে।