ট্রাম্প ও পুতিনের ফোনালাপ: ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে আলোচনার ঘোষণা

ট্রাম্প ও পুতিনের ফোনালাপ: ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে আলোচনার ঘোষণা

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) একটি ‘দীর্ঘ ও ফলপ্রসূ’ ফোনালাপে ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে আলোচনার ব্যাপারে সম্মত হয়েছেন। ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে পোস্ট করে জানান, তিনি ও পুতিন তাদের নিজ নিজ দলকে আলোচনা শুরু করতে নির্দেশ দিয়েছেন এবং পরস্পরকে রাজধানীতে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এ খবর জানায় ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি।

এতে বলা হয়, পরে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ট্রাম্পের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং ‘স্থায়ী ও নির্ভরযোগ্য শান্তি’ নিয়ে আলোচনা করেছেন।

এই ফোনালাপের পর ট্রাম্প এবং তার প্রতিরক্ষা সচিব জানিয়েছেন যে, ইউক্রেনের ন্যাটো সদস্যপদ পাওয়ার সম্ভাবনা নেই, যা কিয়েভের জন্য হতাশার খবর।

জেলেনস্কি জানান, তিনি শুক্রবার মিউনিখে একটি প্রতিরক্ষা সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর সঙ্গে বৈঠক করবেন।

ট্রাম্প তার পোস্টে লেখেন, ‘এখনই সময় এই হাস্যকর যুদ্ধ বন্ধ করার, যেখানে ব্যাপক ও সম্পূর্ণ অপ্রয়োজনীয় মৃত্যু ও ধ্বংস ঘটেছে। রাশিয়া ও ইউক্রেনের জনগণের জন্য ঈশ্বরের আশীর্বাদ কামনা করি!’

পুতিনের সঙ্গে সরাসরি বৈঠকের নির্দিষ্ট তারিখ দেননি ট্রাম্প, তবে হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের জানান, ‘আমরা সৌদি আরবে সাক্ষাৎ করব।’

ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, পুতিন ট্রাম্পের এই উদ্যোগকে সমর্থন করেন এবং এখনই শান্তি আলোচনার সময় এসেছে বলে মনে করেন।

প্রায় দেড় ঘণ্টার ফোনালাপে পুতিন ট্রাম্পকে মস্কো সফরের আমন্ত্রণ জানান বলে জানান পেসকভ।

ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, ২০১৪ সালের আগের সীমানায় ইউক্রেন ফিরে যেতে পারবে না, তবে কিছু এলাকা পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হবে।

এদিকে, ব্রিটিশ উপ-প্রধানমন্ত্রী অ্যাঞ্জেলা রেইনার বলেছেন, যুক্তরাজ্য ইউক্রেনের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখবে।

বিবিসির প্রতিবেদক জেমস ওয়াটারহাউজ বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রশাসন ইউক্রেনের প্রতি আগের মতো সহানুভূতিশীল নয় এবং প্রতিরক্ষা সচিব পিট হেগসেথের বক্তব্য মস্কোর জন্য লাভজনক হয়েছে।

জেলেনস্কি বলেন, ‘কোনো আলোচনা ইউক্রেন ছাড়া হতে পারে না’ – কিন্তু ট্রাম্প ও পুতিনের ফোনালাপ তার অনুপস্থিতিতেই হয়েছে।  

জেলেনস্কি বলেন, ট্রাম্পের সঙ্গে তার ফোনালাপ বিভিন্ন বিষয়ে ‘ভালো এবং বিস্তারিত আলোচনা’ হয়েছে এবং তিনি কিয়েভ সফররত মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্টের সঙ্গেও দেখা করেছেন।

জেলেনস্কি লিখেছেন, ‘ইউক্রেনের চেয়ে বেশি শান্তি আর কেউ চায় না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একসঙ্গে আমরা রাশিয়ার আগ্রাসন বন্ধ করতে এবং একটি স্থায়ী, নির্ভরযোগ্য শান্তি নিশ্চিত করতে আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপগুলো নির্ধারণ করছি।’

ইউক্রেনীয় নেতা আরও বলেন, ‘আরও যোগাযোগ অব্যাহত রাখতে এবং আসন্ন বৈঠকের পরিকল্পনা করতে আমরা সম্মত হয়েছি।’

এএফপি সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনীয় নেতাদের মধ্যে এক ঘণ্টা ধরে ফোনালাপ চলে।

এদিকে, গার্ডিয়ানের এক সাক্ষাৎকারে জেলেনস্কি রাশিয়া-অধিকৃত ইউক্রেনীয় ভূখণ্ডের বিনিময়ে রাশিয়ার পশ্চিমাঞ্চলীয় কুরস্ক অঞ্চলের কিছু এলাকা নেওয়ার প্রস্তাব দেন, যা ক্রেমলিন প্রত্যাখ্যান করেছে।

রাশিয়ার মুখপাত্র পেসকভ বলেন, ‘রাশিয়া কখনোই তার ভূখণ্ড বিনিময় নিয়ে আলোচনা করেনি এবং করবে না। ইউক্রেনীয় সেনাদের আমাদের অঞ্চল থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হবে।’

২০১৪ সালে ইউক্রেনের প্রো-রাশিয়ান প্রেসিডেন্টকে ক্ষমতা থেকে সরানোর পর মস্কো ক্রিমিয়া দখল করে এবং পূর্ব ইউক্রেনে রুশপন্থী বিদ্রোহীদের সহায়তা দেয়।

প্রায় তিন বছর আগে রাশিয়া ইউক্রেনে পূর্ণ মাত্রার আগ্রাসন চালায়। এই যুদ্ধে রাশিয়া ইউক্রেনের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ এলাকা দখল করেছে এবং একে অপরের ওপর হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।

নির্ভরযোগ্য তথ্য পাওয়া কঠিন হলেও ধারণা করা হয়, এই সংঘাতে শত-সহস্র সেনা হতাহত হয়েছে এবং লক্ষ লক্ষ ইউক্রেনীয় নাগরিক শরণার্থী হয়েছে।