জার্মানিতে চলছে ভোটগ্রহণ
অভিবাসন এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের নাটকীয় পট পরিবর্তনের ইঙ্গিতের মধ্যেই ইউরোপের গুরুত্বপূর্ণ অর্থনীতির দেশ জার্মানিতে হচ্ছে পার্লামেন্ট নির্বাচন।
রবিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে দেশটিতে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। নির্বাচনে জার্মানি নতুন একটি সরকার গঠনের পথে রয়েছে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে।
সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, মধ্য ডানপন্থি দল ক্রিস্টিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়ন (সিডিইউ) ভোটে এগিয়ে রয়েছে, তবে দেশটির কট্টর ডানপন্থি দল অল্টারনেটিভ ফর জার্মানিও (এএফডি) ভালো অবস্থানে রয়েছে। এর মাধ্যমে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মানির পার্লামেন্ট নির্বাচনে প্রথমবারের মতো শক্ত অবস্থান গড়তে চলেছে কোনো কট্টর ডানপন্থি দল।
দেশটির পার্লামেন্ট বুন্দেসটাগের নিম্নকক্ষে আসনসংখ্যা ৬৩০টি। সাধারণত বুন্দেসটাগে কোনো দল একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় না। এবারের নির্বাচনেও জোট সরকার গঠিত হবে বলেই ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা।
তবে এবারের নির্বাচনে একটি নজিরবিহীন পরিবর্তনের আভাস মিলেছে। এএফডির জনপ্রিয়তার ফলে সরকার গঠনে দলটির সঙ্গে জোটবদ্ধ হতে পারে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলোর কোনো একটি। এতে করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর প্রথম কোনো কট্টর ডানপন্থি দলের সঙ্গে জোট সরকার গঠিত হতে পারে বলে জানিয়েছেন বিশ্লেষকরা।
জার্মানির এই আগাম নির্বাচনে ক্ষমতাসীন সোশ্যাল ডেমোক্রেটসকে (এসপিডি) পেছনে ফেলে নির্বাচন-পূর্ববর্তী জরিপে এগিয়ে ছিল অভিবাসন-বিরোধী দল এএফডি।
জরিপে দেখা যায়, এসপিডির পক্ষে যেখানে জনসমর্থন ছিল ১৪ থেকে ১৬ শতাংশ, সেখানে এএফডির পক্ষে ছিল ২০ শতাংশ সমর্থন।
জার্মানির চলমান অর্থনৈতিক অস্থিরতা এবং জনগণের অভিবাসন-বিরোধী মনোভাব দেশের জনগণের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি করেছে।
গত নভেম্বরে জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎসের এসপিডির নেতৃত্বে ২০২১ সালে গঠিত জোট সরকারের মধ্যে অর্থনৈতিক সংস্কার নিয়ে মতানৈক্য দেখা দেয়। এরপর সরকার ভেঙে দেওয়ার ঘোষণা দেন শলৎস। পরবর্তীতে বুন্দেসটাগে আস্থা ভোটে হেরে যান চ্যান্সেলর। এর পরিপ্রেক্ষিতে নির্ধারিত সময়ের ৭ মাস আগেই দেশটিতে নিবাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
নানা কারণে বৈশ্বিক আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দেশটির এই নির্বাচন। পশ্চিমাদের সামরিক জোট ন্যাটেতে নেতৃত্বদানকারী দেশগুলোর অন্যতম জার্মানি। এছাড়া ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের পর ইউক্রেনকে সবচেয়ে বেশি সামরিক সহায়তা দিয়েছে শলৎস প্রশাসন।
তবে দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতা গ্রহণের পর ইউক্রেন ইস্যুতে স্রোতের বিপরীতে অবস্থান নিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তারপর এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জার্মানির রাজনৈতিক অঙ্গনেও আসতে চলেছে পরিবর্তন।
এ কারণে শুধু জার্মানিই নয়, ইউক্রেন ও ইইউয়ের ভাগ্যের ওপরও এই নির্বাচন ব্যাপক প্রভাব ফেলতে চলেছে বলে ধারণা বিশ্লেষকদের।
এসব বিষয় নিয়ে ইউরোপে চলছে নানা বিশ্লেষণ, অবশ্য পিছিয়ে নেই যুক্তরাষ্ট্রও। এরই মধ্যে জার্মানির নির্বাচনে ট্রাম্প-ঘনিষ্ঠ ইলন মাস্কের সরাসরি হস্তক্ষেপের অভিযোগ উঠেছে। টেসলা ও স্পেসএক্সের প্রতিষ্ঠাতা নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে ইতোমধ্যে জার্মানির অভিবাসন-বিরোধী দল এএফডির পক্ষে ৭০টির বেশি পোস্ট দিয়েছেন বা শেয়ার করেছেন।
মার্কিন সংবাদমসাধ্যম সিএনএনে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মাস্কের এ ভূমিকার সমালোচনা করেছেন শলৎস।
এ ছাড়াও, ব্যাপকভাবে অপতথ্য প্রচার করে জার্মানির নির্বাচনকে রাশিয়া প্রভাবিত করার চেষ্টা চালাচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
এ বিষয়ে সেন্টার ফর মনিটরিং, অ্যানালাইসিস অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিসের (সিইএমএএস) লিয়া ফ্রুহভিরথ জানিয়েছেন, অপতথ্যের সিংহভাগই ছড়ানো হচ্ছে গ্রিন পার্টি, সিডিইউ, এসপিডি ও তাদের প্রার্থীদের বিরুদ্ধে।
তাই জার্মানিতে নতুন সরকার কারা গঠন করবে, দেশটির অভ্যন্তরীণ বিষয়ের পাশাপাশি ইউরোপ, বিশেষ করে ইউক্রেন নিয়ে তাদের অবস্থান কী হবে—তা নিয়ে নানা কথাবার্তা চলছে। শেষ পর্যন্ত কারা জার্মানির ক্ষমতায় আসছে, তা দেখার অপেক্ষায় রয়েছে ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিশ্বের মোড়ল দেশগুলো এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা।